উপমহাদেশে করোনা মোকাবিলা সক্ষমতায় সবার ওপরে বাংলাদেশ
রংপুরে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ
করোনা মোকাবেলায় উপমহাদেশের মধ্যে বাংলাদেশ সক্ষমতার দিক থেকে সবার ওপরে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ব্লুমবার্গের রিপোর্ট অনুযায়ী মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে করোনা মোকাবেলায় বাংলাদেশ এই উপমহাদেশের মধ্যে সক্ষমতার দিক থেকে সবার ওপরে। পুরো পৃথিবীর মধ্যে ২০তম অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর যারা নানা শঙ্কা, আশঙ্কার কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করেছিল, যারা বলেছিল- দেশের রাস্তায় লাশ পড়ে থাকবে, মানুষ অর্ধাহারে অনাহারে মৃত্যুবরণ করবে, তাদের সেই আশঙ্কা তো ভুল প্রমাণিত হয়েছে। এখন তারা করোনা ভ্যাকসিন নিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।
বিজ্ঞাপন
শুক্রবার (৮ জানুয়ারি) দুপুর দেড়টার দিকে রংপুর সার্কিট হাউসে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি তথ্যমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ভারত থেকে করোনা ভ্যাকসিন আসা প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, করোনার ভ্যাকসিন নিয়ে কোনো শঙ্কা নেই। করোনা ভ্যাকসিন চুক্তি অনুযায়ী যথা সময়ই আসবে। একটি ভুল সংবাদের প্রেক্ষিতে সেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছিল। সেই বিভ্রান্তি সেরাম ইনস্টিটিউট নিজেরা বিবৃতি দিয়ে, গণমাধ্যমে কথা বলে নিরসন করেছে। একই সঙ্গে ভারতের স্বাস্থ্য সচিবও নিশ্চিত করেছেন চুক্তি অনুযায়ী যথা সময়ে করোনা ভ্যাকসিন বাংলাদেশে আসবে। এছাড়াও বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতীয় রাষ্ট্রদূত এ ব্যাপারে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ যথা সময়ে ভ্যাকসিন পাবে।
বিজ্ঞাপন
এ সময় ভ্যাকসিনের দাম নির্ধারণ প্রসঙ্গে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবেন বলেও জানান তথ্যমন্ত্রী।
গণমাধ্যমকর্মীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে দায়ের হওয়া মামলা প্রসঙ্গে হাছান মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশে গণমাধ্যম যে পরিমাণ স্বাধীনতা ভোগ করে এবং যেভাবে স্বাধীনভাবে কাজ করে তা পৃথিবীর অনেক দেশে করতে পারে না। অনেক উন্নত দেশেও গণমাধ্যম এমন স্বাধীনতা ভোগ করে না। পৃথিবীর সবচেয়ে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাজ্য একটি। সেখানকার ১৩০ বছরের একটি পুরাতন পত্রিকা একটি ভুল সংবাদ পরিবেশন করেছিল। সেই প্রেক্ষিতে তাদের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় প্রচুর পরিমাণে জরিমানা করা হয়। জরিমানা গুনতে না পারার কারণে সেই পত্রিকাটি বন্ধ হয়ে গেছে। বিবিসিতে একজন এমপির বিরুদ্ধে ভুল ও অসত্য সংবাদ পরিবেশনার করার দায়ে পুরো টিমকে পদত্যাগ করতে হয়েছে। কন্টিনেন্টাল ইউরোপেও কোনো ভুল, অসত্য সংবাদ পরিবেশন হলে পরে সেখানে মোটা অংকের জরিমানা গুনতে হয়। কিন্তু আমাদের বাংলাদেশে এটি হয় না। তবে আমি মনে করি, আমাদের দেশে দুর্নীতি হলে অবশ্যই সেটির সংবাদ পরিবেশিত হওয়া দরকার। এটা দেখে আমরা ব্যবস্থাও নিতে পারি।
তিনি আরও বলেন, কোনো সময় অসত্য ও ভুল সংবাদ পরিবেশন বা কাউকে নিগৃহীত করার উদ্দেশ্যে সংবাদ করা সমীচীন নয়। সেটি আমাদের সবাইকে খেয়াল রাখতে হবে। আর কারও বিরুদ্ধে হয়রানিমূলক মামলা হওয়া উচিত নয়। যদি হয়রানিমূলক মামলা হয়, সেটিও সমীচীন নয়। যদি কেউ হয়রানির শিকার হয়, সেটি আমার দৃষ্টিগোচর হলে আমি যথাযথ ব্যবস্থা নিই।
অবাধ তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিতে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে দেশের আরও ছয়টি বিভাগীয় শহরে বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) একটি করে পূর্ণাঙ্গ সম্প্রচার কেন্দ্র তৈরি করা হচ্ছে। আগামী দুই থেকে আড়াই বছরের মধ্যে রংপুর কেন্দ্রের কাজ শেষ হবে।
এর আগে দুপুরে ঢাকার হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের ফ্লাইটে করে সৈয়দপুর বিমানবন্দরে আসেন তথ্যমন্ত্রী। সেখান থেকে তিনি গাড়িবহর নিয়ে রংপুর সার্কিট হাউসে পৌঁছলে তাকে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। এ সময় মন্ত্রীর একান্ত সচিব (উপসচিব) আরিফ নাজমুল হাসান, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা কায়ছারুল আলম ও ইমরুল করিম সফর সঙ্গী হিসেবে ছিলেন।
এদিকে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ রংপুর পৌঁছালে তাকে ফুলেল শুভেচ্ছায় বরণ করে নেন প্রশাসনের কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন রংপুরের জেলা প্রশাসক আসিব আহসান, রংপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মধুসুদন দত্ত, মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার শহিদুল্লাহ কাওছার, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মমতাজ উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রেজাউল করিম রাজু, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোতাহার হোসেন মন্ডল মওলা, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি সফিউর রহমান সাফি, সাধারণ সম্পাদক বাবু তুষার কান্তি মন্ডল প্রমুখ।
এর আগে তথ্যমন্ত্রী বাংলাদেশ টেলিভিশনের রংপুর উপকেন্দ্র এবং বাংলাদেশ বেতার রংপুর কেন্দ্র পরিদর্শন করেন।
আরএআর