অবৈধ গ্যাস-সংযোগে সয়লাব ছিল ঢাকার অদূরের শিল্পাঞ্চল সাভার ও আশুলিয়া। গত বছর অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্নে জোর প্রচেষ্টা চালায় তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ। বারংবার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করলেও অবৈধ গ্যাস-সংযোগে সংক্রিয় ছিল ক্ষমতাসীনরা। কিন্তু একাধিকবার সংযোগ বিচ্ছিন্নের মুখে এসব ক্ষমতাবান বাধ্য হয়েছে হাত গুটিয়ে নিতে। আর এসব অভিযান পরিচালনায় তিতাসের ব্যয় হয় ৩৯ লাখ ৯ হাজার ৭৮০ টাকা। এতে প্রায় ৪ কোটি ২২ লাখেরও বেশি টাকা মূল্যের গ্যাস রক্ষা পেয়েছে চোর চক্রের হাত থেকে।

সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড থেকে পাওয়া তথ্যমতে, গত বছর অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান পরিচালনা করা হয় ৪২টি। প্রতিটি অভিযানে ব্যয় হয়েছে ৯৩ হাজার ৯০ টাকা। ১২৩টি স্পটে এসব অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে ৭৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যর অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। জব্দ করা হয় ৫৭ হাজার ৪৮০টি বিভিন্ন সাইজের পাইপ ও ৪৩ হাজার ৩১৮টি বার্নার। প্রতিটি বার্নারে মাসিক ৯৭৫ টাকার গ্যাস রক্ষা হয়েছে। এসব অভিযানে আড়াই হাজারের বেশি অভিযুক্তকে আসামি করে ১২টি মামলা দেওয়া হয়। এদের মধ্যে ৩ জনকে গ্রেফতার ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জেল দেওয়া হয়।

সাভারের বিভিন্ন এলাকাসহ আশুলিয়ার কাঠগড়া, নরসিংহপুর, বালুরমাঠ, ইউসুফ মার্কেট, জিরাবো, কাঠগড়া দুকাঠি, দুর্গাপুর কুটুরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও স্থানীয় ইউপি সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তিতাস কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই পুনঃসংযোগ দিয়েছেন বারবার। মামলা হলেও ছিলেন তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সাভার ও আশুলিয়ার অবৈধভাবে দেওয়া গ্যাস-সংযোগে ব্যবহার করা হয় নিম্ন মানের পাইপ ও ফিটিংস। যার ফলে প্রতিনিয়ত ঘটতো বিস্ফোরণের মতো ঘটনা। বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যমতে আশুলিয়ায় সবচেয়ে বেশি অবৈধ গ্যাস-সংযোগ থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।

সংবাদমাধ্যমগুলোর তথ্যমতে, অবৈধ গ্যাস-সংযোগে শুধু আশুলিয়াই ঘটেছে ৭টি বিস্ফোরণের ঘটনা। এসব ঘটনায় ১৪ জন মারা যায়। এ ছাড়া আহত হন আরও অনেকে।

অভিযোগ আছে, সাভারের বিভিন্ন এলাকাসহ আশুলিয়ার কাঠগড়া, নরসিংহপুর, বালুরমাঠ, ইউসুফ মার্কেট, জিরাবো, কাঠগড়া দুকাঠি, দুর্গাপুর কুটুরিয়াসহ বিভিন্ন এলাকায় একাধিকবার অবৈধ গ্যাস-সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হলেও স্থানীয় ইউপি সদস্য, ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা তিতাস কর্তৃপক্ষের অসাধু কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করেই পুনঃসংযোগ দিয়েছেন বারবার। মামলা হলেও ছিলেন তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষের এক কর্মকর্তা জানান, একই স্থানে ৫ থেকে ৬ বার অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্নের অভিযান পরিচালনা করা হয়েছে। চোরাকারবারিরা অনেক শক্তিশালী। আর তিতাসের শুধু মামলা করার ক্ষমতাই দেওয়া হয়েছে। সকালে আটক করা হলে পরদিনই তারা ছাড়া পাচ্ছেন। পরে আবার দিচ্ছে অবৈধ গ্যাস-সংযোগ। গ্যাসের মামলা খুবই দুর্বল বলে চোরাকারবারি মনে করেন। তাই নির্দ্বিধায় চালিয়ে যাচ্ছেন এসব ব্যবসা।

বৈধ গ্যাস ব্যবহারকারী বাড়িওয়ালা আলমামুন বলেন, আগে অবৈধ সংযোগের কারণে সকাল-সন্ধ্যা গ্যাসের চাপ থাকত না। মনে হয়েছিল অবৈধর কাছে হেরে গেছে বৈধতা। তবে বর্তমানে অবৈধ সংযোগের সংখ্যা নেই বললেই চলে।

আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। পাশাপাশি মামলাও করেছি। করোনাকালীন অবৈধ গ্যাস সরবরাহকারীরা একটু মাথাচাড়া দিলেও অভিযানের মুখে এখন হাত গুটিয়ে নিয়েছে।

আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম, ব্যবস্থাপক (বিক্রয়), তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, সাভার

অবৈধভাবে গ্যাস-সংযোগ নেওয়া এক বাড়িওয়ালার সঙ্গে কথা হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, প্রতিবার সংযোগ নিতে মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হয়েছে। তিন মাস কিংবা ছয় মাস অথবা এক বছরও চালাতে পারিনি। ভাড়াটের জন্য অবৈধ সংযোগ নিতে বাধ্য হয়েছি। গ্যাস-সংযোগ না থাকলে ভাড়াটেরা বাসা ভাড়া নিতে চান না। তবে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছি আর কোনো অবৈধ সংযোগ নেব না।

ভাড়াটে পোশাকশ্রমিক আনজুয়ারা বলেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে লাকড়ি দিয়ে রান্না করলে আর অফিস করা হবে না। ১০ মিনিট দেরি হলে অনুপস্থিত হিসেবে গণ্য করে কারখানা কর্তৃপক্ষ। গ্যাস না থাকলে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত কারখানায় কষ্ট করার পরও রান্নায় কষ্ট করতে হয় আরেক দফা।

অভিযান সম্পর্কে সাভার তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (বিক্রয়) প্রকৌশলী আবু সাদাৎ মোহাম্মদ সায়েম জানান, আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি। পাশাপাশি মামলাও করেছি। করোনাকালীন অবৈধ গ্যাস সরবরাহকারীরা একটু মাথাচাড়া দিলেও অভিযানের মুখে এখন হাত গুটিয়ে নিয়েছে।

এনএ