বিগবসের ওজন ২০ মণ

দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের কৃষক বাবুল হোসেন। ভাঙা ঘরে বাস করেন, নেই তেমন পুুঁজিও। এমন টানাপোড়েনে দুটি ফ্রিজিয়ান গরুকে নিজের সন্তানের মতো লালন-পালন করে বড় করে তুলেছেন তিনি। গরু দুটির নাম তিনি শখ করে রেখেছেন বস এবং বিগবস।

প্রত্যন্ত এলাকায় এত বড় গরু স্থানীয়রা কোনোদিন দেখেনি। তাই প্রতিদিন গরু দুটিকে দেখতে বিভিন্ন এলাকার মানুষ কৃষক বাবুলের বাড়িতে ভিড় করছেন। কোরবানিতে বিক্রি করার জন্য নিজে খেয়ে না খেয়ে গুরু দুুটিকে প্রস্তুত করছেন দরিদ্র কৃষক বাবুল। তার আশা কোরবানির বাজারে তিনি গরু দুটির ভালো দাম পাবেন।

এলাকায় বস আর বিগবসকে নিয়ে মাতোয়ারা স্থানীয়রা। গ্রামের হাট-বাজার থেকে শুরু করে পাড়া-মহাল্লায়, দোকান-পাটে এখন তাদের নিয়ে চলছে আলোচনা। কেউ বলছেন তাদের ওজন কত হবে? কেউবা জানতে চাইছেন তাদের দাম কত?

বৃহস্পতিবার (২৪ জুন) সকালে দেবীগঞ্জ উপজেলার সুন্দরদিঘী ইউনিয়নের হাজরাডাঙ্গা ঊনিশঘর এলাকার দরিদ্র কৃষক বাবুল হোসেনের বাড়িতে সরেজমিনে বিশাল দেহের বস ও বিগবস নামের দুটি গরু দেখা যায়। আর গরু দুটিকে খাবার দেওয়ার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষক বাবুল হোসেন। তিনি গরু দুুটিকে ছোট থেকে বড় করে তুলেছেন।

শখ করে তাদের নামও দিয়েছেন বস আর বিগবস। বিগবসের বয়স ৪ বছর। ওজন ২০ মণ। উচ্চতা ৫ ফুট ৪ ইঞ্চি ও লম্বায় ৮ ফুট। অন্যদিকে বসের বয়স ৩ বছর। ওজন ১৪ মণ। উচ্চতা ৪ ফুট ১০ ইঞ্চি ও লম্বায় ৭ ফুট ৪ ইঞ্চি। গরু দুটির আকৃতি বড় হওয়ায় বেশিরভাগ সময় ঘরের মধ্যে রাখেন তিনি।

 বসের ওজন ১৪ মণ

টানাপোড়েনের সংসারে মধ্যেও ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় দুটিকে ছোট থেকে তিনি প্রাকৃতিক উপায়ে বড় করে তুলেছেন। প্রতিদিন বস আর বিগবসকে কাঁচা ঘাসের পাশাপাশি ভুসি, চাপর, খৈল, ছোলা, রান্না করা খুদ, কখনও আপেল ও মাল্টা খাওয়ান ওই দরিদ্র কৃষক।

প্রতিদিন গরু দুটির পেছনে তার ব্যয় ১২০০ থেকে ১৫০০ টাকা। বিশালাকৃতির বস আর বিগবস এরই মধ্যে এলাকায় বেশ সাড়া ফেলেছে। খবর শুনে জেলার বিভিন্ন এলাকার মানুষও এখন প্রতিদিন বাবুল হোসেনের বাড়িতে ভিড় জমাচ্ছেন।

পাশাপাশি জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ী ও পাইকাররা তার বাড়িতে আসছেন গুরু দুটি কিনতে। কিন্তু বাবুল হোসেন তার কাঙ্ক্ষিত দাম না মেলায় তিনি ছাড়ছেন না গরু দুটিকে। তিনি তার আদরের বিগবসের দাম হাঁকিয়েছেন ১০ লাখ টাকা, আর বসের দাম হাঁকিয়েছেন ৭ লাখ টাকা।

জানা গেছে, বাবুল হোসেন ক্ষুদ্র কৃষক। কিছু জমি বর্গা নিয়ে তিনি কোনোরকম করে কৃষিকাজ করেন। পাশাপাশি তিনি স্থানীয় একটি তাঁত কারখানায় কাজ করেন। আর এতে যা আয় হয় তা দিয়ে কোনোরকমভাবে সংসার চলে তার। বাবুল হোসেনের তিন সন্তান, স্ত্রী ও মাসহ ৬ সদস্য নিয়ে তার পরিবার।

এ বিষয়ে কথা হয় কৃৃৃৃষক বাবুল হোসেনের স্ত্রী বুলবুলি বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, গরু দুটিকে যত্ন ও খাবার তৈরি ও খাওয়ানোর মধ্যে দিয়ে আমাদের সারা দিন কাটে। আমার স্বামী ও আমি দুজন মিলে গরু দুটিকে সামলাতে না পারায় তাই দুজন শ্রমিক সঙ্গে নিতে হয়। দুজন শ্রমিক সারা দিন গরুর খাবারের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন কাজ করেন।

কৃষক বাবুল হোসেন বলেন, আমার খুব আদরের দুটি গরু বস ও বিগবস। গরু দুটিকে ছোট থেকেই প্রাকৃতিক উপায়ে ও প্রাকৃতিক খাবার খাওয়ায় বড় করে তুলেছি। আমার অভাবের সংসার তাই নিজে না খেয়ে থাকলেও ধারদেনা করে গরু দুটিকে খাবারের জোগান দিয়ে লালন-পালন করে আসছি। কোরবানির বাজারে গরু দুটি বিক্রি করে দেব। 

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা বাড়িতে এসে গরুর দেখে দাম বলেছেন, তবে তারা এখনও আমার কাঙ্ক্ষিত দাম বলেনি। ভালো দাম পেলে আমি গরু দুটি বিক্রি করে আমার ঘরবাড়ি ঠিক করব এবং বাড়িতে বড় করে গরুর খামার তৈরি করব।

স্থানীয় স্কুলশিক্ষক দানেশ আলী বলেন, কৃষক বাবুল হোসেন তিনি তার সন্তানের মতো যত্ন করে গরু দুটিকে বড় করে তুলেছেন। এত বড় গরু আমরা আগে কখনও আমাদের এলাকায় দেখিনি। এবাই প্রথম এত বিশালাকৃতির গরু লালনপালন করেছেন বাবলু হোসেন।
আশা করি গরু দুটি ন্যায্যমূল্যে বিক্রি করতে পারবেন তিনি।

স্থানীয় উদ্যােক্তা আব্দুল মজিদ বলেন, বাবুল হোসেন কৃষিকাজের পাশাপাশি আমার তাঁত কারখানায় কাজ করেন। কারখানায় কাজ করে যা আয় হয় তার সবটুকুই তিনি তার গরুর পেছনে ব্যয় করেন। তিনি যদি তার গরু দুটি ভালো দামে বিক্রি করতে পারেন তাহলে দরিদ্র এই কৃষকের স্বপ্নপূরণ হবে।

এমএসআর