রংপুরের গঙ্গাচড়ায় কয়েক দিনের বৃষ্টি ও উজানের ঢলে তিস্তা নদীতে পানি বেড়েছে। নদীতীরবর্তী চরের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে পানি বসতবাড়িতে ঢুকে পড়েছে। এতে প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে আছে। নদী ভাঙনে বিলীন হয়েছে ছয় পরিবারের বাড়িঘর।

তলিয়ে গেছে রাস্তা-ঘাট, আবাদি জমিসহ ধান ও পাটের খেত। কোলকোন্দের বিনবিনা চরে স্বেচ্ছাশ্রমে নির্মতি বাঁধটি বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙন দেখা দিয়েছে লক্ষ্মীটারীর কেল্লারপাড় চরে স্বেচ্ছাশ্রমের উপবাঁধটিও।

রোববার (০৪ জুলাই) দুপুরে তিস্তা নদীবেষ্টিত গঙ্গাচড়ার কয়েকটি ইউনিয়ন ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়াতে অনেকেই উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। ভাঙনে সেখানকার বিনবিনা চরের ৬টি পরিবারের বাড়িঘর তিস্তায় বিলীন হয়ে গেছে। হুমকিতে পড়েছে রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ-কালভার্ট।

সরেজিমনে দেখা গেছে, পানিবন্দি পরিবারগুলো মানবেতর জীবন-যাপন করছে। খাদ্য ও বিশুদ্ধ পানির সংকটে পড়েছেন তারা। অনেকে উঁচু স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। আবার কেউ কেউ ঘরের বিছানার ওপরে জিনিসপত্র রেখে আকড়ে ধরে রেখেছেন বসতবাড়ি। 

দুর্ভোগ বেড়েছে পানিবন্দি মানুষজন বয়স্ক ব্যক্তি, শিশু ও গবাদিপশুর। কোথাও কোমরপানি, আবার কোথাও হাঁটুপানি হলেও ছোট নৌকা ও বাঁশের ভেলায় ব্যবহার করে চলাচল করছেন লোকজন।

পানিবন্দি লক্ষীটারী ইউনিয়নের পশ্চিম ইচলি, শংকরদহ, বাগেরহাট আশ্রয়ণ ও পূর্ব ইচলির ১ হাজার পরিবার। কোলকোন্দ ইউনিয়নের বিনবিনা, মটুকপুর, চিলাখাল, খলাইরচরে একই অবস্থা। সেখানে অন্তত দেড় হাজার পরিবার হাঁটু ও কোমরপানিতে রয়েছেন। 

নোহালী ইউনিয়নের মিনার বাজার, কচুয়াচর, বৈরাতী বাঁধের ধার, চরনোহালী, বাগডহরা চরের ৫০০, মর্নেয়া ইউনিয়নের মর্নেয়ার চর, তালপট্টি, আলালচর, নরসিং চরের ৫০০ জন পানিবন্দি অবস্থায় মানবতের জীবনযাপন করছে।

একই অবস্থা গজঘণ্টা ইউনিয়নের কালিরচর, ছালাপাক, গাউছিয়া বাজার, জয়দেব, মইশাসুর, রামদেব চর ও আলমবিদিতর এবং গঙ্গাচড়া ইউনিয়নের আরও সহস্রাধিক পরিবারের।

বাগেরহাট আশ্রয়ণে থাকা জরিনা খাতুন ও হালিমা বেগম জানান, ‘এক সপ্তাহেরও বেশি পানিবন্দি হয়ে কষ্টে আছেন তারা। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা পাননি।’ একই অভিযোগ কেল্লারপাড়ের মহির উদ্দিনের। তিনি বলেন, ‘কষ্ট হলেও পানিবন্দি হয়ে থাকা যায়। কিন্তু বাড়িঘর বিলীন হবার মতো কষ্ট হয় না। কয়েকদিন কষ্টে আছি, কিন্তু চেয়ারম্যান-মেম্বার কারো দেখা নাই।’

পশ্চিম ইচলি গ্রামের বাবলু মিয়া ও জোবেদা বেগম বলেন, ‘তিন-চার ধরি হামরা পানিত আছি। কায়ো তো কোনো খোঁজ করিল না।  আত্মীয়স্বজনের বাড়ি থাকি একবেলা খাবার পাইলেও আরেক বেলা না খ্যায়া থাকা নাগোছে। এখন পর্যন্ত কোনো ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হয়নি।’

তিস্তায় পানি বৃদ্ধির কথা জানিয়ে লক্ষ্মীটারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল হাদী জানান, ইউনিয়নে ১ হাজারেরও বেশি পরিবার পানিবন্দি রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন স্থানে ভাঙন অব্যাহত আছে। পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য দ্রুত ত্রাণ সহায়তা প্রয়োজন।

কোলকোন্দ পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন রাজু বলেন, ভাঙন রোধসহ পানিবন্দির জন্য পর্যাপ্ত খাদ্যসহায়তার পাশাপাশি পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেটের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তাসলীমা বেগম জানান, নদীতীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। সেখানকার পানিবন্দি পরিবারগুলোর জন্য ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদের অনুকূলে ত্রাণ পাঠানো হয়েছে।

ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএসআর