পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে বাড়ছে রোগী

দেশের উত্তরের প্রান্তিক জেলা পঞ্চগড়। এ জেলা হিমালয়ের অনেক কাছাকাছি হওয়ায় পঞ্চগড় হিমালয়ের কন্যা নামেও পরিচিত। তবে এ জেলায় প্রতিবছর শীতের প্রকোপ বেশি থাকায় এ জেলাকে শীতের জেলাও বলা হয়। উত্তর দিক থেকে আসা হিম বাতাসের কারণে এ জেলার ওপর দিয়ে কখন মৃদু, কখনো মাঝারি ধরনের শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে। ফলে হাড় কাঁপানো শীতে ও ঘন কুয়াশায় মানবেতর জীবন যাপন করছে এ জেলার নিম্ন আয়ের মানুষ।

এদিকে কনকনে শীতে দিন দিন এ জেলা সদর হাসপাতালসহ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলো বৃদ্ধি পাচ্ছে শীতজনিত রোগীর সংখ্যা। তবে শীতজনিত রোগে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন শিশু ও বয়স্করা।

শুধু সদর হাসপাতালে গত তিন মাসে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৬৫ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক।

রোববার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত মোট ২১ জন শিশু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তা ছাড়া জেলার বাকি চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নিতে আসতে দেখা গেছে শিশু ও বয়স্কদের।

পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে সূত্রে জানা গেছে, শুধু সদর হাসপাতালে গত তিন মাসে নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্ট, জ্বরসহ শীতজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে ৬৬৫ জন রোগী ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাদের বেশির ভাগই শিশু ও বয়স্ক।

আরও জানা যায়, গত বছরের নভেম্বর মাসে এ হাসপাতালে নিউমোনিয়া রোগে ১৯ শিশু, শ্বাসকষ্টে ৬৭, জ্বর, সর্দি ও গলাব্যথায় ৬১ ও ডায়েরিয়া রোগে আক্রান্ত হয়ে ৮২ জনসহ ২২৯ রোগী হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। এদিকে ডিসেম্বর মাসে রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩১৮-তে। তাদের মধ্যে নিউমোনিয়া রোগে ৩৫, শ্বাসকষ্টে ৬৪, জ্বর, সর্দি ও গলাব্যথায় ৫৪ জন ও ডায়রিয়া রোগে ১৬৪ জন আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেন। তা ছাড়া ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত হাসপাতালে শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ১২৩ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন।

এদিকে জেলার চারটি উপজেলা তেঁতুলিয়া, বোদা, দেবীগঞ্জ ও আটোয়ারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স শীতজনিত রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছে। তবে হাসপাতাল ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গুলো থেকে সাধারণ রোগীদের শীতজনিত রোগ থেকে রক্ষার জন্য বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

শিশু রোগীদের চিকিৎসা চলছে হাসপাতালে

আবহাওয়া কার্যালয়ের তথ্যমতে, পঞ্চগড় জেলা শুধু হিমালয়ের নিকটবর্তী হওয়ায় তাপমাত্রা ওঠানামা করে। তাপমাত্রা ওঠানামার কারণে শীতের তীব্রতা বাড়ে। গত নভেম্বর থেকে এ পর্যন্ত ৪৮ দিন এ জেলায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। প্রতিবছর শীত মৌসুমে এ জেলায় তীব্র শীত অনুভূত হয়।

এ বিষয়ে কথা হয় চিকিৎসাসেবা নিতে আসা জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর এলাকার বাসিন্দা সেলিনা বেগমের সঙ্গে। তিনি বলেন, হঠাৎ করে আমার ছেলেকে ঠান্ডা লাগার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাই হাসপাতালে ভর্তি করেছি। ডাক্তারকে দেখিয়ে এখন কিছুটা সুস্থ।

পঞ্চগড়ে দিন দিন শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় হাসপাতালে প্রতিদিন কমবেশি শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বাকি যে চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে, সেখানেও প্রর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধসহ যাবতীয় বিষয়ের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

ফজলুর রহমান, সিভিল সার্জন, পঞ্চগড়

একই কথা জানান সদর উপজেলার হাড়িভাসা এলাকার বাসিন্দা আতাউর রহমান। তিনি বলেন, হঠাৎ করে আমার বাবার শ্বাসকষ্ট বেড় যায়। তার জন্য ৩ দিন ধরে হাসপাতালে ভর্তি আছি। এখন কিছুটা সুস্থ। ডাক্তার শীত থেকে সাবাধানে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ মনোয়ার হোসেন জানান, পঞ্চগড়ে শীতের প্রকোপ বৃদ্ধি পাওয়ায় শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শিশুরা ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর ও বয়স্করা শ্বাসকষ্ট, কাশিসহ বিভিন্ন শীতজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হচ্ছেন হাসপাতাল। অনেকে আবার বহির্বিভাগ থেকে চিকিৎসা নিয়ে বাড়ি চলে যাচ্ছেন। আমরা প্রতিনিয়ত শিশু ও বয়স্কদের শীতজনিত রোগ এড়াতে সচেতনতামূলক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি।

এদিকে পঞ্চগড় জেলা সিভিল সার্জন ফজলুর রহমান জানান, পঞ্চগড়ে দিন দিন শীতের প্রকোপ বেশি হওয়ায় হাসপাতালে প্রতিদিন কমবেশি শীতজনিত রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ও বাকি যে চারটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স রয়েছে, সেখানেও প্রর্যাপ্ত পরিমাণে ওষুধসহ যাবতীয় বিষয়ের যথেষ্ট মজুত রয়েছে। আমাদের চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীরা তাদের দায়িত্ব পালন করছেন এবং বিভিন্ন পরামর্শ ও দিকনির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন।

এনএ