বিদ্যুৎ নয় খাবার চাই, ফসলি জমির বিকল্প নাই
সোনাগাজী উপজেলায় তিন ফসলি জমি রক্ষার জন্য মানববন্ধন করেছেন কৃষক ও স্থানীয়রা
ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায় তিন ফসলি জমি রক্ষার জন্য মানববন্ধন করেছেন কৃষক ও স্থানীয়রা। রোববার (১০ জানুয়ারি) উপজেলার মুহুরী সেচ প্রকল্প এলাকায় রাস্তায় নেমে মানববন্ধন করেন তারা। ‘বিদ্যুৎ নয় খাবার চাই, ফসলি জমির বিকল্প নাই’ স্লোগানে মানববন্ধনে অংশ নেন স্থানীয় কৃষক ও ভূমি মালিকরা।
উপজেলার থাক খোয়াজের লামছি ১ ও ২ নম্বর সিট ভূমিরক্ষা কমিটির উদ্যোগে উপজেলার মুহুরী প্রজেক্ট এলাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সোলার পাওয়ার লিমিটেডের তিন ফসলি আবাদী ভূমি অধিগ্রহণের প্রতিবাদে এ মানববন্ধন হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রান্তিক কৃষক এবং স্থানীয়রা জানান, প্রয়োজনে জীবন দেব, তবু বাপ-দাদার তিন ফসলি জমি লুটে নিতে দেব না। জমির আইলে দরকার হলে রক্ত ঝরবে, তবু জমি কেউ দখল নিতে পারবে না।
তারা বলেন, ৭৯ নম্বর থাক খেয়াজের লামছি মৌজার ৪৫৯.৬৯ একর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য ২০১৬ সালের ২১ জানুয়ারি বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় কর্তৃক পরিপত্র জারি করা হয়।
বিজ্ঞাপন
ভূমি মালিকদের আপত্তির কারণে এবং অত্র জমি তিন ফসলি জমি হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের আবেদন বাতিল হয়। ২০২০ সালে একই জমি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সোনাগাজী সোলার পাওয়ার সৌরবিদ্যুত প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রার্থী হয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক বরাবর ২০৭.০৫৭৫ একর ভূমি হুকুম দখলের প্রস্তাব দেয়। ওই প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে ফেনীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) প্রতিবেদন তলব করেন।
ওই ভূমি তিন ফসলি হওয়া সত্ত্বেও বেসরকারি কোম্পানি বিভিন্ন চেষ্টার মাধ্যমে বাস্তব অবস্থার বিপরীতে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় প্রশাসনকে প্রভাবিত করে তিন ফসলি জমিকে পতিত জমি বলে উল্লেখ করে। সেই সঙ্গে আবেদনকারীরা মূল মালিকদের কাছ থেকে জমি কিনেছেন বলে ফেনী জেলা প্রশাসনে ভুয়া রিপোর্ট দেয়।
কৃষকরা অভিযোগ করেন, জেলা প্রশাসন প্রকৃত অবস্থা তদন্ত না করে আদেশ জারির জন্য বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব দেয়। প্রস্তাবের ভিত্তিতে বিদ্যুত, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব নজরুল ইসলাম আবেদীন ২৭ ডিসেম্বর ভূমি অধিগ্রহণের জন্য প্রশাসনিক আদেশ জারি করেন।
আদেশের ভিত্তিতে কোম্পানি সরেজমিনে কাজ শুরুর জন্য চল ফেনী জেলা প্রশাসন বরাবর আবেদন করেন। বর্তমানে ফেনী জেলা প্রশাসক বেসরকারি কোম্পানিকে কাজ শুরুর লক্ষ্যে অনাপত্তি সনদ প্রদান করার জন্য অপেক্ষমান আছে।
ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক ও কৃষকরা বলছেন, জমিগুলো ফসলি। এতে চাষ করে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। এ জমিগুলো অধিগ্রহণ হয়ে গেলে শতশত কৃষক অনাহারে মরবে।
ভূমি অধিগ্রহণ রক্ষা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাইন উদ্দিন নাসির বলেন, জমিগুলো তিন ফসলি জমি। এখানে চাষাবাদ করে এ অঞ্চলের মানুষ বেঁচে থাকে। এখানের উৎপাদিত ফসল দেশের বিভিন্ন এলাকাতেও যায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যেখানে ফসলি জমি রক্ষার পক্ষে। সেখানে এ কোম্পানি কোন শক্তিতে ফসলী জমি ধ্বংস করতে চায়।
এলাকার বাসিন্দা বীর মুক্তিযোদ্ধা শামছুল হক বলেন, এখানে আমার ৪০ একর জমি রয়েছে। জমিতে সরিষা, তরমুজ, সিম এবং ডালজাতীয় সবজি উৎপাদন করি। দখলকারীরা আমার বাড়িটিও দখল করতে চায়।
খুরশিদ আলম নামের এক কৃষক বলেন, আমার চার একর জমি রয়েছে। এখানে ফসল করে সারা বছর চলে সংসার। এই জমি কোনোভাবেই কাউকে অধিগ্রহণ করতে দেব না। দরকার হলে জমিতে লাশ পড়বে; তবু কাউকে জমি দেব না।
সোনাগাজী উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসেন বলেন, এখনো কোনো ক্ষতিগ্রস্ত লোক আমাকে লিখিতভাবে কিছু জানাননি। জানালে সরেজমিনে গিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
তিনি বলেন, ফসলের এবং কৃষকের ক্ষতি হয় এমন কিছু হতে দেয়া হবে না। ফসলি জমি রক্ষার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর একটা অনুশাসন রয়েছে। আমরা সে অনুযায়ী কাজ করব।
এএম