ভাতার কার্ড বিতরণ নিয়ে মেম্বারের গালে চেয়ারম্যানের চড়
সিড্যা ইউনিয়ন পরিষদ হলরুম
শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় ভাতার কার্ড বিতরণকে কেন্দ্র করে হলভর্তি লোকের সামনে মেম্বারের গালে চড় মারলেন চেয়ারম্যান। এ সময় তাদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে।
মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) সকালে সিড্যা ইউনিয়ন পরিষদ হলরুমে ভাতার কার্ড বিতরণের সময় এ ঘটনা ঘটে। সিড্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আমিনের সঙ্গে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য প্রশান্ত পালের এ হাতাহাতি হয়।
বিজ্ঞাপন
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে যারা ভাতা পান তাদের অনলাইনভুক্ত করার লক্ষ্যে কার্ড নেওয়া হয়। অনলাইনভুক্তের পর কার্ডগুলো ফেরত দেয় উপজেলা সমাজসেবা কার্যালয়। মঙ্গলবার সকালে সিড্যা ইউনিয়ন পরিষদের হলরুমে কার্ড বিতরণের জন্য ভাতাভোগীদের ডাকা হয়। কার্ড নেওয়ার জন্য ভাতাভোগীরা উপস্থিত হন।
এ সময় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আমিন ইউনিয়ন কার্যালয় থেকে ভাতাভোগীদের কার্ড সংগ্রহ করতে বলেন। তখন মেম্বার প্রশান্ত পাল বলেন আমার ওয়ার্ডে তিনজন ভাতাভোগী আছেন; তারা বিছানায় পড়া, আসতে পারবেন না। তাদের কার্ডগুলো আমাকে দেন। আমি স্বাক্ষর দিয়ে নেব। এতে অস্বীকৃতি জানান চেয়ারম্যান।
বিজ্ঞাপন
এ নিয়ে দুজনের তর্কবিতর্ক শুরু হয়। এ সময় মেম্বারের মাফলার টেনে ধরে গালে চড় দেন চেয়ারম্যান। ক্ষিপ্ত হয়ে চেয়ারম্যানকে ধাক্কা দেন মেম্বার। এতে কার্ড বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়।
ভাতাভোগীরা জানান, আমাদের কার্ড দিতে ডেকে এনে মারামারি শুরু করেছেন মেম্বার-চেয়ারম্যান। তাদের মারামারির কারণে আমরা কার্ড নিতে পারলাম না। চেয়ারম্যানের সঙ্গে মেম্বারদের কোনো মিল নেই।
৬ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য (মেম্বার) বাতেন মাদবর বলেন, ছোট একটা বিষয় নিয়ে মেম্বারের সঙ্গে চেয়ারম্যানের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। চেয়ারম্যানকে অনুরোধ করেছি, এটা নিয়ে বাড়াবাড়ি করবেন না। তিনি কারও কথা শোনেন না। চেয়ার থেকে উঠে আমার সামনে দিয়ে মেম্বার প্রশান্ত পালকে চড় মেরেছেন।
ইউপি সদস্য (মেম্বার) প্রশান্ত পাল বলেন, সমাজসেবা অফিসের ভাতাভোগীদের কার্ড দেওয়ার কথা ছিল। প্রায় সবাই বই নিতে এসেছেন। এ সময় আমাদের এক মেম্বার বলেন যারা প্রতিবন্ধী তারা আসবে কীভাবে? আবার অনেকে বিছানায় পড়ে আছেন। তারা আসতে পারবেন না। বিষয়টি চেয়ারম্যানকে জানালে গালিগালাজ শুরু করেন। আমি তখন প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদ করায় গলার মাফলার টেনে ধরে চড় দেন চেয়ারম্যান। বাবার সমতুল্য হওয়ায় আমি তাকে কিছু বলিনি। মাঝেমধ্যেই তার আক্রমণের শিকার হই আমরা। এজন্য আগে আট মাস পরিষদে আসিনি আমরা।
সিড্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আলাউদ্দিন আমিন বলেন, কার্ড নিতে এসেছেন ভাতাভোগীরা। আমি বলেছি কোনো ভাতাভোগী না এলে কার্ড অন্য কারও হাতে দেব না। কারণ এ নিয়ে নানা ধরনের কথা হয়। কিন্তু বিষয়টি মানতে রাজি হননি মেম্বাররা। মেম্বার প্রশান্ত পাল হলরুমভর্তি লোকের সামনে আঙুল উঁচিয়ে বলেন আপনার কথা হবে না। এ কথা বলেই আমাকে ধাক্কা দেন। এ নিয়ে তার সঙ্গে আমার হাতাহাতি হয়।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ওবায়দুর রহমান বলেন, অনলাইনভুক্তের জন্য কয়েকদিন আগে উপজেলার সব ভাতাভোগীর কার্ড সংগ্রহ করি আমরা। অনলাইনভুক্ত হওয়ার পর সব কার্ড ফেরত দেওয়া হয়। সিড্যায় কার্ড বিতরণের কার্যক্রম চলছিল। কিন্তু চেয়ারম্যান-মেম্বারদের দ্বন্দ্বের কারণে আপাতত কার্ড বিতরণ কার্যক্রম বন্ধ।
ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মর্তুজা আল মুঈদ বলেন, সব ইউনিয়নের ভাতাভোগীর ডাটা অনলাইনভুক্ত করা হয়। ভাতাভোগীদের কার্ড বিতরণের কথা ছিল আজ। কিন্তু কার্ড বিতরণ কার্যক্রমে চেয়ারম্যান ও মেম্বারের হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে কার্ড বিতরণ বন্ধ হয়ে যায়। বিষয়টি নিয়ে সিড্যা ইউনিয়নের মেম্বাররা অভিযোগ দিয়েছেন। দুপক্ষের বক্তব্য শুনে বিষয়টি সমাধান করে দেব।
এএম