পৌর আ.লীগের সম্পাদককে আটকের পর মুক্তি
এস এম মাহমুদ হাসান বিপু
যশোরে পুলিশ সদস্যকে মারধরের অভিযোগে পৌর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক এস এম মাহমুদ হাসান বিপুকে আটকের পর ছেড়ে দিয়েছে পুলিশ। মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) বিকেলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দেয়। এর আগে গতকাল রাত পৌনে ৯টার দিকে তাকে আটক করা হয়।
তবে আটকের পর সোমবার মধ্যরাতে শাহীন চাকলাদার সমর্থক আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ৭ নেতাকর্মীর বাড়িতে পুলিশ ভাঙচুর ও তাণ্ডব চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
বিজ্ঞাপন
সোমবার রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদাপোশাকে পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সঙ্গে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন। পরে নিজের পরিচয়পত্র দেখান পুলিশ কনস্টেবল ইমরান। পরিচয় পাওয়ার পরও তারা চড়াও হন। একপর্যায়ে ইমরানকে শহীদ মিনার থেকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়।
এ সময় জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সংসদ সদস্য শাহীন চাকলাদারের সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক সমাজের কথার প্রেসে হানা দিয়ে কর্মরত দুই সংবাদপত্রকর্মীকেও মারধর করা হয়েছে। এদিকে মাহমুদ হাসান বিপুকে আটক ও নেতাকর্মীদের বাড়িতে হামলার প্রতিবাদে যশোরের বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
তবে পুলিশ সুপারের দাবি, হামলা-ভাঙচুর নয়, আসামি আটকে অভিযান চালানো হয়েছে। তারপরও বিষয়টি তদন্তের দাবি রাখে।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, সোমবার রাত ৮টার দিকে পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদাপোশাকে পুরাতন কসবার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার চত্বরে এক নারীর সঙ্গে বসে গল্প করছিলেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সঙ্গে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন। পরে নিজের পরিচয়পত্র দেখান পুলিশ কনস্টেবল ইমরান। পরিচয় পাওয়ার পরও তারা চড়াও হন। একপর্যায়ে ইমরানকে শহীদ মিনার থেকে তুলে নিয়ে মারধর করা হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ইমরানকে উদ্ধার করে। এ সময় অভিযুক্তদের পুলিশ হেফাজতে নেয় পুলিশ।
শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট আসাদুজ্জামান জানান, শহীদ মিনার এলাকায় সাদাপোশাকে থাকা দুজন পুলিশ সদস্য নারী নিয়ে ঘনিষ্ঠ অবস্থায় বসে ছিলেন। এ সময় স্থানীয় কয়েকজন তাদের মারধর করে। হট্টগোল দেখে পাশের শেখ আবু নাসের ক্লাব থেকে মাহমুদ হাসান বিপু এগিয়ে যান। মীমাংসা করার চেষ্টা করেন। তিনি মারধরে জড়িত নন। পুলিশ তাকে রাত পৌনে ৯টার দিকে তুলে নিয়ে যায়।
এদিকে বিপুকে আটক নিয়ে দিনভর বিক্ষোভের পর মঙ্গলবার বিকেলে পুলিশ তাকে ছেড়ে দিয়েছে। মুক্ত হওয়ার পর তাকে নিয়ে নেতাকর্মীরা শহরে বিক্ষোভ করেন। পরে তারা দলীয় কার্যালয়ে যান। তাকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয় হয়ে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ নেতারা অভিযোগ করেছেন, এ ঘটনার পর সোমবার মধ্যরাতে পুলিশ যশোর-৬ আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার, যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি আব্দুল খালেক, তার ছেলে পৌর কাউন্সিলর হাজী সুমন, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য পৌর কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা, জেলা যুবলীগের সদস্য মনজুর আলম, এমএম কলেজ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তৌহিদুর রহমান এবং যুবলীগ কর্মী সোহাগের বাড়িতে হামলা চালিয়েছে। এ সময় এই বাড়িগুলোয় ভাঙচুর চালানো হয় বলেও নেতাকর্মীদের অভিযোগ।
এ বিষয়ে জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক বলেন, ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পুলিশের একাধিক টিম গভীর রাতে তার বাড়ি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদারের প্রেসসহ শহরের বিভিন্ন এলাকায় আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়, যা সিসিটিভিতে ধরা পড়েছে।
জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও উপশহর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এহসানুর রহমান লিটু ও যুবলীগের সদস্য মুনসুর আলম জানান, সোমবার দিবাগত রাত দুইটার দিকে পুলিশের তাদেরসহ পাঁচ-ছয়জন নেতার বাড়িতে গিয়ে গালিগালাজ ও সামনের অংশ ভাঙচুর করেছে। এ সময় পুলিশ বাড়ির সামনের সিসি ক্যামেরাও ভাঙচুর করে।
পুলিশ সদস্যকে মারধর করে তারা আইন ভঙ্গ করেছেন। যারা ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন তিনি। তবে তারপরও বিষয়টি তদন্ত করা হবে।
মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন, পুলিশ সুপার
একই অভিযোগ করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা ও যশোর পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর গোলাম মোস্তফা। তিনি বলেন, ঘটনা ঘটেছে পুরাতন কসবায় কিন্তু পুলিশ কেন আমার শংকরপুরের বাড়ি ভাঙচুর করল বুঝতে পারছি না।
এদিকে এসব ঘটনার প্রতিবাদে মঙ্গলবার সকাল থেকে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়ের সমানে বিক্ষোভ করেছেন নেতাকর্মীরা। ৯টা থেকে বেলা ১১টা পর্যন্ত যশোর-চুকনগর মহাসড়কের কেশবপুরে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ করেছেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। অভয়নগরে যশোর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ হয়েছে।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগ নেতা মীর জহুরুল ইসলাম জানান, পুলিশের এহেন আগ্রাসী আচরণের প্রতিবাদে তারা কর্মসূচি গ্রহণ করবেন।
যশোরের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন সোমবার জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা শেষে সাংবাদিকদের জানান, সোমবার রাতে পুলিশ লাইনসে কর্মরত কনস্টেবল ইমরান সাদাপোশাকে পুরাতন কসবার শহীদ মিনারে বসে এক নারীর সঙ্গে গল্প করছিলেন। এ সময় ক্ষমতাসীন দলের কতিপয় নেতাকর্মী সেখানে গিয়ে নারীর সঙ্গে গল্প করতে দেখে তার ওপর চড়াও হন। নিজের পরিচয় দিয়ে ও পরিচয়পত্র দেখিয়ে পুলিশ কনস্টেবল ইমরান এর প্রতিবাদ করেন। এ সময় তারা তাকে শহীদ মিনার থেকে ধরে নিয়ে যায় পাশের আবু নাসের ক্লাবে। সেখানে শহর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মাহমুদ হাসান বিপু উপস্থিত ছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে বিপুসহ চারজনকে আটক করে পুলিশ লাইনসে নিয়ে যায়।
পুলিশ সুপার আরও বলেন, পুলিশ সদস্যকে মারধর করে তারা আইন ভঙ্গ করেছেন। যারা ঘটনার সঙ্গে সরাসরি জড়িত, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিপুকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। আর আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে ভাঙচুরের অভিযোগ ভিত্তিহীন দাবি করেন তিনি। তবে তারপরও বিষয়টি তদন্ত করা হবে বলে উল্লেখ করেন।
এনএ