প্রবাসী নারীকে হয়রানি, বিমানের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা
ফাইল ছবি
সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ব্রিটিশ নাগরিক জামিলা চৌধুরীকে হয়রানির অভিযোগে এক কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত ও একজনকে ঢাকায় বদলি করেছে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স কর্তৃপক্ষ।
গত বুধবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ওই ব্রিটিশ নাগরিক বিমান কর্মকর্তাদের অসহযোগিতা ও অসৌজন্যমূলক আচরণের কারণে নির্ধারিত ফ্লাইটে যুক্তরাজ্যে যেতে পারেননি। এ ঘটনায় শনিবার (৩১ জুলাই) দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে বিমান কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের উপ-মহাব্যবস্থাপক (জনসংযোগ) তাহেরা খন্দকার ঢাকা পোস্টকে বলেন, জুনিয়র গ্রাউন্ড সার্ভিস অফিসার মো. মুখলেছুর রহমানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আর সুপারভাইজার কাউসার আলী মন্ডলকে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রত্যাহার করে ঢাকায় বদলি করা হয়েছে।
শনিবার রাতে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাংলাদেশ বিমানের স্টেশন ব্যবস্থাপক চৌধুরী মো. ওমর হায়াত এ তথ্য জানিয়ে বলেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে জিএম পদবির এক কর্মকর্তাকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কর্তৃপক্ষ।
বিজ্ঞাপন
জানা যায়, বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে যুক্তরাজ্যে সন্তানদের রেখে দেশে এসেছিলেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ নাগরিক জামিলা চৌধুরী। গত বুধবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০১ ফ্লাইটে দুপুর ২টা ৪০মিনিটে তার যুক্তরাজ্য ফেরার কথা ছিল। সেখানে কোয়ারেন্টাইনের জন্য হোটেলও বুকিং করা ছিল। ওইদিন নির্ধারিত সময়ের তিনঘণ্টা আগে বিমানবন্দরে আসেন তিনি। বিমানবন্দরে চেকইনের সময় তার কাছে তিনটি লাগেজ ছিল। লাগেজগুলোর ওজন নির্ধারিত ওজনের চেয়ে বেশি ছিল। অতিরিক্ত লাগেজের কারণ দেখিয়ে তাকে বোর্ডিং পাস না দেওয়ায় নির্ধারিত ফ্লাইটে তিনি গন্তব্যে যেতে পারেননি।
জামিলা চৌধুরীর ধারণ করা একটি ভিডিওতে দেখা যায়, তিনি বিমানবন্দরের অভিযোগ বক্সে অভিযোগ করতে যান। সেখানে এক কর্মকর্তার কাছে অভিযোগপত্র চাইলে সেই কর্মকর্তা তাকে স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করার পরামর্শ দেন। সেই সময় তিনি স্টেশন ম্যানেজারের সঙ্গে আলাপ করতে গেলে তিনি তিনতলায় রয়েছেন বলে আরেক কর্মকর্তা জানান। এমনকি আরও বেশ কয়েকজনের সঙ্গে এ বিষয়ে সাহায্য চাইলেও ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করার কথা জানানো হয়।
জামিলা চৌধুরী অভিযোগ করে বলেন, আমার তিনটি লাগেজের ওজন বেশি ছিল। তবে আমি একটি লাগেজ নিতে চাইলে তারা আমাকে বলেন যে গেট ক্লোজ হয়ে গেছে। এর আগে বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ আমাকে বলেছে, আমি যাতে মোট ৫৩ কেজি ওজনের লাগেজ নেই। এর জন্য আমাকে ২৬ হাজার টাকা পরিশোধের কথা বলা হয়েছিল। তবে আমি তা দিতে অস্বীকার করি এবং একটি লাগেজ নেওয়ার কথা জানাই। সেই সময় কর্তৃপক্ষ আমাকে জানায় যে কাউন্টার ক্লোজ হয়ে গেছে। আমি আর যেতে পারব না।
জামিলা চৌধুরী আরও বলেন, আমি বিমানবন্দরে অনেকের কাছেই সাহায্য চেয়েছিলাম। কিন্তু কেউই আমাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসেননি। আমি তিন ঘণ্টা আগেই বিমানবন্দরে প্রবেশ করি। তবুও আমি যুক্তরাজ্য ফেরত যেতে পারিনি। এমনকি ডেস্কে বসা একজন কর্মকর্তা আমার মুখের ওপর পাসপোর্ট ফেলে দিয়ে আমাকে পাগল বলেও মন্তব্য করেছেন।
এ ঘটনায় শুক্রবার (৩০ জুলাই) সন্ধ্যায় সিলেট বিমানবন্দরে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের জেলা ব্যবস্থাপক ফারুক আলমের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল জামিলা চৌধুরীর বাসায় গিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। এ সময় তারা আগামী ৪ আগস্ট জামিলাকে যুক্তরাজ্য যাওয়ার টিকেট কনফার্ম করেন এবং সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দেন। এছাড়াও তদন্ত সাপেক্ষে ওই দিনের ঘটনায় দোষীদের শাস্তির আওতায় নিয়ে আসার আশ্বাসও দেন তারা।
শনিবার এ ঘটনায় অভিযুক্ত দুই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিমান কর্তৃপক্ষ। তাদেরকে ঢাকায় গিয়ে রিপোর্ট করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ নিয়ে বিমানের নির্দেশনা থাকায় শনিবার তারা ঢাকায় যেতে পারেননি।
এ ব্যাপারে ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের বাংলাদেশ বিমানের স্টেশন ব্যবস্থাপক চৌধুরী মো. ওমর হায়াত ঢাকা পোস্টকে বলেন, যুক্তরাজ্যফেরত এক যাত্রীকে অসহযোগিতার কারণে শনিবার দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তাদেরকে ঢাকায় গিয়ে রিপোর্ট করার জন্য বলা হয়েছে। কিন্তু অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট বন্ধ নিয়ে বিমানের নির্দেশনা থাকায় তারা ঢাকায় যেতে পারেননি।
চৌধুরী মো. ওমর হায়াত আরও বলেন, ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলইন্স কর্তৃপক্ষ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। তদন্ত কমিটির সদস্যরা সিলেট এসে ঘটনাটি খতিয়ে দেখবেন। এছাড়া গত ২৮ জুলাই ওই নারীর সঙ্গে সৃষ্ট ঘটনার জন্য শুক্রবার সন্ধ্যায় তার বাসায় গিয়ে সান্ত্বনা দিয়ে বলেছি, আগামী ৪ আগস্ট যে ফ্লাইট আছে সেই ফ্লাইটে যেতে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
তুহিন আহমেদ/এমএএস/আরএআর