বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপ ও পূর্ণিমার জোয়ারের প্রভাবে চার দিন ধরে টানা বৃষ্টিতে প্লাবিত হয়েছে উপকূলীয় জেলা বাগেরহাটের নিম্নাঞ্চল। অবিরাম বৃষ্টিতে ফসলি জমি, বীজতলা, আমন ধান, সবজি, পানসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে।

এখনও পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে রোপা-আমনের বীজতলাসহ বিভিন্ন ফসল। কৃষি বিভাগের তথ্যমতে বৃষ্টির ফলে জেলার ২০ হাজার চাষি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। টাকার অংকে ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে সাড়ে পাঁচ কোটি টাকার অধিক। শুধুমাত্র শরণখোলা উপজেলাতেই কয়েক হাজার কৃষকের বীজতলা এবং গ্রীষ্মকালীন সবজি পানির নিচে নিমজ্জিত রয়েছে।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২৭ থেকে ৩০ তারিখ পর্যন্ত ভারী বর্ষণ ও জোয়ারের পানিতে জেলায় এক হাজার ৫৮৮ হেক্টর রোপা আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে। ৯৬০ হেক্টর জমির আউশ ধান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গ্রীষ্মকালীন সবজির ক্ষতি হয়েছে ৩৭৯ হেক্টর জমির। সাড়ে ১০ হেক্টর জমির পান বরজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এতে ২০ হাজার ২০৩ জন কৃষকের পাঁচ কোটি ৬৫ লাখ তিন হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে। 

গতকাল রোববার (০১ আগস্ট) বিকেল পর্যন্ত শরণখোলা, রামপাল ও মোংলা উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ফসলি জমি ও আমন ধানের বীজতলা পানিতে নিমজ্জিত রয়েছে। তবে পানি নেমে গিয়ে পূর্বের অবস্থায় ফিরতে আরো অনেক সময় লাগবে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।

শরণখোলা উপজেলার উত্তর তাফালবাড়ী এলাকার নাছির উদ্দিন পাহলান নামের এক চাষি বলেন, ২০ বিঘা জমিতে আমন ধান লাগানোর জন্য একশ কেজি বীজ ধান বুনেছিলাম। আজ ৬ দিন ধরে এই বীজতলাগুলো পানির নিচে রয়েছে। ধানের চারাগুলো (পাতো) বেশির ভাগ পচে গেছে। শিকড়ও পচেছে। কবে নাগাদ পানি নামবে, তা বলা যায় না। এবার আর আমন ধান চাষ করতে পারব না আমরা। খুবই বিপদে পড়ে যেতে হবে আমাদের। শুধু যে আমনের বীজতলা নষ্ট হয়েছে, তা নয়। আমাদের গরু ও ছাগলের খাদ্যও নষ্ট হয়েছে।

মিজান মিয়া নামের আরেক কৃষক বলেন, অনেক কষ্ট করে ধান কিনেছি, চারা দিয়েছি। সব নষ্ট হয়ে যাবে। কৃষি বিভাগ এবং সরকার যদি অন্য কোনো জাতের ধান বীজ দিয়ে আমাদের সহযোগিতা করে তাহলে হয়ত আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারব।

কচুয়া উপজেলার গজালিয়া গ্রামের শসাচাষি আজমল ফকির বলেন, কয়েকদিন হলো শসা বিক্রি শুরু করেছি। এবার শসার ফলনও ভালো হয়েছিল। কিন্তু ফলন ভালো হলে কি হবে, দাম পাইনি। তারপরে আবার ৬ দিন ধরে গাছের গোড়ায় পানি। এই পানিতে শিকড় পচে গেছে। পানি কমার দুই একদিনের মধ্যে শসাগাছগুলো ঢলে পড়বে। খুব ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের।

বাগেরহাট সদর উপজেলার সিএনবি বাজার এলাকার রাজিব সমাদ্দার বলেন, আমাদের এই এলাকার বেশিরভাগ মানুষ সবজি ক্ষেত করেন। কিন্তু এত বেশি বৃষ্টি হয়েছে যে বেশিরভাগ মানুষের সবজি ক্ষেত পানির নিচে। লাউ, করলা, শসা, মিষ্টি কুমড়াসহ সবজি গাছের গোড়ায় পানি উঠলে শিকড়গুলো পচে যায়। এর ফলে এই পানি টানার পরে বেশিরভাগ গাছ ঢলে পড়বে।

শরণখোল উপজেলার রায়েন্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আছাদুজ্জামান মিলন ঢাকা পোস্টকে জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের দেওয়া বেড়িবাঁধে পর্যাপ্ত স্লুইজ গেট না থাকায় সহজে পানি নামতে পারে না। যার ফলে বৃষ্টির পানি স্বাভাবিকের থেকে বেশি সময় থাকে। বেড়িবাঁধে প্রয়োজনীয় সংক্ষক স্লুইজ গেট নির্মাণসহ কৃষকদের প্রয়োজনীয় সহযোগিতার জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

বাগেরহাট কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো. শফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, টানা চার দিনের বৃষ্টিতে আমাদের বেশকিছু আমনের বীজতলা, পানের বরজ, আউশধান,  আমন ধান ও সবজির ক্ষতি হয়েছে। প্রাথমিকভাবে যে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপন করেছি তাতে টাকার অংকে কৃষকদের অন্তত পাঁচ কোটি ৬৫ লক্ষ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দিচ্ছি। কৃষকরা যাতে এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে এজন্য কৃষি বিভাগ তাদের পাশে রয়েছে।

এছাড়াও বৃষ্টিতে বাগেরহাটের ১৭ হাজারের অধিক মৎস্য ঘেরের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য বিভাগের হিসাবে চাষিদের প্রায় ১১ কোটি টাকার মাছ ভেসে গেছে। অন্যদিকে বৃষ্টি থামলেও লোকালয় থেকে পানি না নামার কারণে চরম দুর্ভোগে রয়েছেন বাগেরহাটের লক্ষাধিক মানুষ।

এমএএস