মা হাজেরা বিবি ও ছেলে সোহেল

সরকার ঘোষিত কঠোর লকডাউনের কারণে সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এরই মধ্যে ছেলের কাছে পৌঁছেছে গর্ভধারিণী মায়ের নিখোঁজের খবর। এমন খবরে ছেলে আর স্থির থাকতে পারেননি।  বেরিয়ে পড়লেন বাইসাইকেল নিয়ে। ঢাকার কর্মস্থল থেকে প্রায় ২০০ কিলোমিটার পথ বাইসাইকেল চালিয়ে নিজ বাড়ি কমলগঞ্জে পৌঁছেছেন সোহেল আহমেদ (২৮) নামে এক যুবক। প্রায় ১৪ ঘণ্টা সাইকেল চালানোর পর রোববার (০১ আগস্ট) কমলগঞ্জের লঙ্গুরপাড় গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান তিনি।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাধবপুর ইউনিয়নের লংগুরপাড় গ্রামের মানিক মিয়ার স্ত্রী ও মাধবপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আসিদ আলির ছোট বোন হাজেরা বিবি (৪৮)। গত বুধবার (২৮ জুলাই) রাতে একই গ্রামে অবস্থিত বড় ভাই আসিদ আলির বাড়ি থেকে রাতের খাবার খেয়ে হাজেরা বিবি প্রতিবেশী রকিব মিয়ার বাড়িতে রাত্রিযাপন করেন। বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) ভোরে ঘুম থেকে উঠে রকিব মিয়ার স্ত্রীকে চা বানানোর কথা বলে ঘর থেকে বেড়িয়ে যান তিনি। রকিব মিয়ার স্ত্রী চা তৈরি করলেও হাজেরা বিবি আর ফিরে আসেননি। এদিকে সকাল পেরিয়ে দুপুর গড়িয়ে গেলেও হাজেরা বিবি বাড়িতে না ফেরায় হাজেরার ছেলের ঘরের নাতনি শাম্মী (১০) বাড়ীর পাশেই দাদা আসিদ আলির বাড়িতে গিয়ে দাদির খোঁজ করে।

আসিদ আলি বলেন, নাতনির মুখে দাদি বাড়ি ফেরেনি শুনে বোনের বাড়িতে গিয়ে দেখি দরজা তালাবদ্ধ, বাহিরের বাতি জ্বলছে। অন্য ঘরে গাভিগুলোও ডাকাডাকি করছে। তখন আশপাশের এলাকার বাড়ি-ঘরগুলোতে খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে প্রতিবেশী রকিব মিয়ার স্ত্রী জানান, রাতে হাজেরা বিবি তাদের বাড়িতে ঘুমিয়ে ছিলেন। ভোরে চা বানিয়ে রাখতে বলে ঘর থেকে বেড় হয়ে আর ফিরে আসেননি। পরে সম্ভাব্য সব আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে খোঁজ করেও কোনো সন্ধান না পেয়ে গত শুক্রবার (৩০ জুলাই) বিকেলে কমলগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করি। 

এদিকে শনিবার (৩১ জুলাই) মুঠোফোনে ঘটনাটি ঢাকায় অবস্থানকারী নিখোঁজ হাজেরার ছেলে সোহেল আহমেদকে জানানো হয়। সোহেল মায়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর শুনে লকডাউনে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকায় বাইসাইকেল নিয়ে ঢাকা থেকে রওয়ানা দেন। ১৪ ঘণ্টা পর কমলগঞ্জের লংগুরপাড়ের গ্রামের বাড়িতে পৌঁছান তিনি। বাড়ি পৌঁছেই তিনি লোকজন নিয়ে রোববার সারাদিন আশপাশের প্রায় ৫ কিলোমিটার এলাকার ঝোঁপঝাড়, খাল, ডোবা, পুকুর সব আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে খোঁজ করেও মা হাজেরা বিবির কোনো সন্ধান পাননি।

সোহেলের খালাতো ভাই সেলিম মিয়া জানায়, প্রায় ২০ থেকে ২৫ বছর আগেও একইভাবে তার খালু সোহেলের বাবা মানিক মিয়াও নিখোঁজ হয়েছিলেন। যার সন্ধান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

কমলগঞ্জ থানার ওসি (তদন্ত) সোহেল রানা ঢাকা পোস্টকে বলেন,  এ ঘটনায় থানায় সাধারণ ডায়েরি করা হয়েছে। আমরা ওই নারীর মোবাইল ট্র্যাক করেছি। মোবাইল তার বাড়িতেই পাওয়া গেছে। হয়ত তিনি স্বেচ্ছায় কোথাও চলে গেছেন। পুলিশ অনুসন্ধান চালাচ্ছে।

ওমর ফারুক নাঈম/আরএআর