জন্মের পর বেশ ভালোই ছিলেন। ১০ বছর বয়সে হঠাৎ একদিন জ্বরে আক্রান্ত হলে প্রতিবন্ধী হয়ে পড়েন আব্দুর রশিদ। এরপর থেকে চলছে নিজের সঙ্গে এক অন্যরকম যুদ্ধ। এখন রাস্তার পাশে কলা বিক্রি করে কোনো রকমে সংসার চলে তার। এক ছেলে আব্দুর রশিদের। সেও অসুস্থ। পরিবারের সাত সদস্যসহ থাকতেন মাটির ঘরে। বর্ষায় ঘরের চালের ফুটা দিয়ে পড়া পানিতে ভিজতে হতো সবাইকে। তবে এখন আর সেই কষ্ট করতে হবে না তাদের।
 
সারাদিন পরিশ্রম শেষে এখন আর ভাঙা ঘরে ফিরতে হবে না তাকে। ভূমিহীন ও গৃহহীন প্রতিবন্ধী আব্দুর রশিদ (৫৫) কাজ শেষে প্রতিদিন বাড়ি ফিরবেন পাকা ঘরে। যার ছাদে ফুটা নেই, তাই পানিপড়ার আশঙ্কাও নেই। 

শুধু ঘর নয়, থাকছে নিজ নামে দুই শতক জমি, স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট, সুন্দর বারান্দাসহ বসবাসের নিরাপদ সুবিধা। প্রধানমন্ত্রীর আশ্রয়ণ প্রকল্পের কল্যাণে টিনের ছাউনি দেওয়া পাকা ঘর পেয়েছেন তিনি। এটিই এখন আব্দুর রশিদের রাজমহল।

আব্দুর রশিদের কষ্ট ও জীবন সংগ্রামের কথাগুলো শুনে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ। পরে তিনি তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন বলে আশ্বাস দেন এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তমাল হোসেনকে তার সার্বিক দায়িত্ব নেয়ার কথা বলেন।

নাটোর জেলায় মুজিববর্ষ উপলক্ষে দুই শতক জমির মালিকানাসহ সেমিপাকা ঘর পেয়েছেন ১ হাজার ৯৩৯ জন পরিবার। এর মধ্যে গুরুদাসপুর উপজেলায় পেয়েছেন ১৮৫ জন। 

বাড়ি পাওয়ার আনন্দে আব্দুর রশিদের চোখে ভাসছে আনন্দ অশ্রুর বান। ঘর পেয়ে কেমন লাগছে, জিজ্ঞেস করতেই তিনি বলেন, ১১ বছর বয়সে আমি প্রতিবন্ধীতা বরণ করেছি। অন্যের দেয়া ১ শতাংশ জমিতে পরিবারের সাতজন সদস্য নিয়ে এক কুঁড়ে ঘরে থেকেছি। বৃষ্টি এলে ঘরে পানি পড়ত। খুব কষ্টে কেটেছে দিন। কষ্টের দিন শেষ আল্লাহ মুখ তুলে চেয়েছেন। এখন আমাদের সুখের দিন। 
আমি স্বপ্নেও কল্পনা করিনি যে, জমিসহ ইটের নতুন ঘর পাব। শেখ মুজিবের মেয়ে হাসিনা সরকার আমাকে এতো সুন্দর ইটের ঘর দেবে। এই বয়সে ইটের ঘরে থাকতে পারব। আমি অনেক খুশি ঘর পেয়ে। এ ঘর আমাদের জন্য রাজমহল। আল্লার কাছে দোয়া করি শেখ মুজিবের মেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ও ডিসি স্যারকে আল্লায় যেন বেশি দিন বাঁচায়। আর আমার মতো অসহায় মানুষদের পাশে এভাবে দাঁড়ায়। 

অপরদিকে উপজেলার মশিন্দা ইউনিয়নের কাছিকাটা আশ্রয়ন প্রকল্পের আওতায় নুতন ঘর পেয়ে ভীষণ খুশি রমেছা বিবি।
 
তিনি বলেন, সরকারের কল্যাণে নতুন বাড়ি পেয়েছি। আমার নিজের পক্ষে কখনো এমন বাড়ি তৈরি সম্ভব ছিল না। সব মিলিয়ে খুব খুশি লাগছে।

মঙ্গলবার (০৩ আগস্ট) নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার মাশিন্দা ইউনিয়নের কাছিকাটা গ্রামে জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর পরিদর্শন করেন এবং উপকারভোগীদের মাঝে উপহার সামগ্রী বিতরণ করেন। 

এসময় উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আশরাফুল ইসলাম, গুরুদাসপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তমাল হোসেন, সহাকারী কমিশনার (ভূমি) আবু রাসেল, উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়র হোসেন, পৌর মেয়র শাহনেওয়াজ আলী মোল্লা, ভাইস চেয়ারম্যান আওয়াল শেখ, মাশিন্দা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোস্তাফিজুর রহমান প্রমুখ। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তমাল হোসেন ঢাকা পোস্টকে বলেন, ভূমিহীন ও গৃহহীনদের জন্য চমৎকার পরিবেশে মানসম্মত টেকসই ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হয়েছে। রয়েছে বিভিন্ন সুযোগ সুবিধাসহ দুই শতাংশ জমি। আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন আধাপাকা ঘর, জমির দলিল, পানির ব্যবস্থা, বিদ্যুৎ সুবিধা ও পাকা রাস্তা।

এসব ঘরে আশ্রয় পাওয়াদের অধিকাংশই রাস্তার ধারে ফুটপাত বা কারও বাড়িতে আশ্রয় নিয়ে বসবাস করতেন। তারা এখন প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া ঘর উপহার পেলেন। এর ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। পর্যায়ক্রমে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী উপজেলার শতভাগ দরিদ্র জনগোষ্ঠী যাদের জমি ও ঘর নাই, তাদের বসবাসের জন্য বাড়ি করে দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আশ্রয়ন প্রকল্পের উপকারভোগীদের আত্মনির্ভরশীল করার জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের আয়োজন করেছি। পাশাপাশি পরবর্তী প্রজন্ম শিশুদের জন্য শিশু পার্ক নির্মাণ করে দিচ্ছি। বিভিন্ন ধরনের রাইড দিচ্ছি যাতে তাদের মানসিক বিকাশ ঘটে। 

প্রতিটি ঘরকে আমরা অত্যান্ত চমৎকারভাবে প্রাক্কলন অনুযায়ী নির্মাণ করেছি। কোনো ঘরে ক্রটি পরিলক্ষিত হয়নি। আমরা আশা করি এই ঘরে যারা বসবাস করবেন তারা অনেক শান্তিতে থাকতে পারবেন। যে কোনো ধরনের প্রয়োজনে জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে থাকবে। 

এর আগে জেলা প্রশাসক আশ্রয়ন প্রকল্পের উপকারভোগীদের ব্লক-বাটিক ও হস্তশিল্প তৈরি বিষয়ক প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন এবং প্রশিক্ষণার্থীদের সঙ্গে নানা বিষয়ে কথা বলেন এবং তাদের কথা শোনেন। এরপর উপকারভোগীদের মাঝে খাদ্য সামগ্রী এবং বিভিন্ন গাছের চারা বিতরণ করেন। 

তাপস কুমার/এমএএস