করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে সরকারের বিধিনিষেধ ও স্বাস্থ্যবিধি তোয়াক্কা না করে সাধারণ যাত্রী নিয়ে ঢাকা যাওয়ার পথে নাটোরে পুলিশ বিভাগের লোগোযুক্ত একটি টেলিকম গাড়ি আটক করেছে নাটোর থানা পুলিশ। এ সময় ওই কোস্টারে ঢাকাগামী প্রায় ৪০ জন যাত্রী ছিল। 

গতকাল মঙ্গলবার (৩ আগস্ট) গভীর রাতে নাটোর শহরের চকরামপুর এলাকা থেকে গাড়িটি আটক করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও কোস্টারের যাত্রী সূত্রে জানা গেছে, পুলিশ বিভাগের লোগোযুক্ত নম্বরবিহীন ওই কোস্টার মঙ্গলবার রাতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল থেকে ঢাকায় ফেরার পথে তাতে যাত্রী ওঠানো হয়। যাত্রীদের অধিংকাংশ ছিলেন গার্মেন্টসকর্মী। 
তবে যাত্রীদের অভিযোগ, পুলিশের গাড়ি রাস্তায় আটকাবে না বলে বেশি ভাড়া নিয়ে গাদাগাদি করে লোক তুলেছে।
 
এদিকে আমেনা বেগম, রুনা বেগম ও হোসেন আলীসহ গাড়ির কয়েকজন যাত্রী জানান, নাচোল শ্যামলী কাউন্টারের মাস্টার চালকের সঙ্গে কথা বলে তাদের এ গাড়িতে তুলে দিয়েছে। আমাদের সামনে ওই মাস্টার তাদের স্যারের সঙ্গে কথা বলেছে। 

পুলিশের গাড়ি রাস্তায় আটকাবে না বলে বেশি ভাড়া আদায় করে গাদাগাদি করে লোক তুলেছে তারা। নিরাপদে যাওয়ার কথা বলে তাদের কাছ থেকে জনপ্রতি ২ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে। কোস্টারটি ২৬ সিটের হলেও তাতে প্রায় ৪০ জন যাত্রী ওঠানো হয়। 

এদিকে, পুলিশের ওই টেলিকম কোস্টার গাড়িটি ঢাকায় যাওয়ার পথে নাটোর শহর অতিক্রম করার সময় চকরামপুর এলাকায় পাথরবোঝাই একটি ট্রাকের সঙ্গে ধাক্কা লেগে লুকিং গ্লাস ভেঙে যায়। গ্লাস ভাঙাকে কেন্দ্র করে ট্রাকচালক তোরাব আলী ও হেলপার কাসেমকে ক্ষতিপূরণ হিসেবে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন কোস্টার চালক ফিরোজ হাসান।

এসময় প্রত্যক্ষদর্শী এক যুবক জরুরী সেবা ৯৯৯ ফোন দিয়ে বিষয়টি জানালে নাটোর থানা পুলিশ সেখানে উপস্থিত হয় এবং গাড়িটি আটক করে থানায় নিয়ে যায়।

কোস্টার চালক ফিরোজ হাসান জানান, মঙ্গলবার ঢাকার রাজারবাগ থেকে সাতজন পুলিশ অফিসারকে সরকারি কোস্টারে করে চাঁপাই নবাবগঞ্জে নামিয়ে দেন। ফেরার পথে পুলিশ টেলিকম অ্যান্ড ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্টের দায়িত্বরত ওসি ট্রান্সপোর্ট রেজাউল করিমের নির্দেশে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহর থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে নাচোল থেকে কয়েকজন গার্মেন্টসকর্মী যাত্রী নিয়ে ঢাকার পথে রওনা হই। কত টাকা ভাড়া মিটিয়েছে তা ওসি স্যার জানে। অনিয়ম হলেও রেজাউল স্যার সরকারি গাড়িতে লোক তুলে আনতে বলেছে। স্যারের হুকুমে এ কাজ করা হয়েছে। গাড়িটি পুলিশ বিভাগের সরকারি গাড়ি। এটি ঢাকায় সরকারি কাজে ব্যবহার হয়। তবে ট্রাকচালকের কাছে টাকা দাবির অভিযোগ সঠিক নয়। লুকিং গ্লাস ভেঙে ফেলা নিয়ে ট্রাকচালক ও হেলপারের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়েছে মাত্র।
  
এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত স্থানীয় এক গণমাধ্যমকর্মী কোস্টার চালক ফিরোজ হাসানের মাধ্যমে ওসি ট্রান্সপোর্ট রেজাউল করিমের সঙ্গে কথা বললে, গাড়িটি পুলিশ বিভাগের। এটি সরকারি গাড়ি। তবে লকডাউন হওয়ার কারণে সাতজন পুলিশ অফিসারকে ঢাকা থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জে নামিয়ে দেওয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। চালক যাত্রী তুলে নিজে বাঁচার জন্য আমার কথা বলেছে। এটি অনিয়ম হয়েছে। 

এ বিষয়ে নাটোরের পুলিশ সুপার লিটন কুমার সাহা ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, সরকারি ওই গাড়িতে যাত্রী ওঠানোর বিষয়টি প্রমাণিত। ঢাকায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। পরে সকল যাত্রীকে নামিয়ে দিয়ে গাড়িটি ঢাকায় ফেরত পাঠানো হয়েছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবেন। 

তাপস কুমার/এমএএস