ব্ল্যাক জাম্বু জাতের তরমুজ চাষে সফলতায় উদ্যোক্তা এম এ হাসানের মুখে হাসি

মাচাংয়ের নিচে ঝুলছে সারি সারি কালো রঙের তরমুজ। প্রতিটি তরমুজের ওজন ৩ থেকে ৫ কেজি। মাচাং থেকে যাতে তরমুজ ছিঁড়ে মাটিতে না পড়ে, সে জন্য প্রতিটি তরমুজে লাগানো হয়েছে সুতা জালের থলে। তরমুজ কাটার পর লাল টকটকে রং ভেতরে, স্বাদে অনন্য। মুখে দিতেই মিলিয়ে যাচ্ছে তরমুজ। অমৌসুমে তরমুজের কথা ভাবা যায় না।

বর্তমানে প্রতিটি গাছে ৩ থেকে ৫ কেজি ওজনের তরমুজ রয়েছে। এই তরমুজ রাজধানীর কাওরান বাজারে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ৪০ শতক জায়গায় প্রায় চার টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। তিনি আশা করছেন, ৪ টন তরমুজ বিক্রি হবে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে

এই অসম্ভবকে সম্ভব করেছেন উদ্যোক্তা এম এ হাসান। তিনি বিদেশে পড়াশোনা করেছেন কম্পিউটারবিজ্ঞানে। দেশে এসে হয়েছেন কৃষি উদ্যোক্তা। পেয়েছেন সফলতা। এবার ৪০ শতাংশ জমিতে শীতকালীন থাই ব্ল্যাক জাম্বু জাতের তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন। নিজ জেলা থেকে সরাসরি বিক্রি করছেন রাজধানীর কাওরান বাজারে। প্রতি মণ তরমুজ ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করেন। তার সফলতা দেখে আশপাশের যুবকরা উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

প্লাস্টিক মালচিং পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা তরমুজ দেখাচ্ছেন হাসান

বগুড়া জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, যদি অমৌসুমি এই তরমুজ চাষে উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসেন, তাহলে তারা ভালো দাম পাবেন। অসময়ে বাজারে ভালো মানের তরমুজ ভোক্তারাও কিনে খেতে পারবেন।

বগুড়া সদরের প্রত্যন্ত গ্রাম কোয়ালীপাড়া এলাকার খলিলুর রহমানের ছেলে এম এ হাসান। ২০০৮ সালে এইচএসসি পাস করে পড়াশোনার উদ্দেশ্যে পাড়ি দেন মালয়েশিয়ায়। সেখানে পড়াশোনা করেন কম্পিউটারবিজ্ঞানে। পড়াশোনা শেষ না করেই শারীরিক অসুস্থতা নিয়ে দেশে ফেরেন। আবার হোটেল ম্যানেজমেন্ট পড়তে চলে যান ইউরোপে। ইউরোপে থাকাকালীন তিনি বুঝতে পারেন, চাকরি করে কখনও নিজের অবস্থান তৈরি করা সম্ভব নয়। সে জন্য পড়াশোনা শেষ করে দেশে আসেন। এরপর উন্নত জাতের তরমুজ চাষে ঝুঁকে পড়েন। এতে ধরা দেয় সফলতা। তাকে সহায়তা করেন সদর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

বগুড়ায় এম এ হাসানের মতো পাঁচ-ছয়জন কৃষক শীতকালীন তরমুজ চাষ করছেন। তাদের চাষের খেতগুলো অনেকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। এবং যাতে ভালো ফলন আসে, সে জন্য যথাযথ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে উদ্যোক্তাদের। এই শীতকালীন তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন তারা। যদি সামর্থ্যবান উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসেন এই অমৌসুমি জাতের তরমুজ চাষ করতে, তাহলে তারা লাভবান হবেন

এনামুল হক, বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা

এম এ হাসান বলেন, এবার শীতকালীন থাই ব্ল্যাক জাম্বু জাতের তরমুজ চাষ করতে বর্গা নেন ৪০ শতক জায়গা। সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে মাচাং করে তাতে জাম্বু জাতের ১ হাজার ৪০০ চারা রোপণ করেন। নিয়মিত পরিচর্চার পর প্রতিটি তরমুজগাছে চার-পাঁচটি করে তরমুজ আসে। কিন্তু তরমুজের ওজন বাড়ানোর লক্ষ্যে প্রতিটি গাছে ১টি করে তরমুজ রাখা হয়। বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি অধিদপ্তরের সহায়তা নিয়ে প্রতিটি তরমুজের চারা ও তরমুজ প্লাস্টিক মালচিং পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হয়। কারণ চারাগুলো বর্ষার শেষে রোপণ করা হয়, যাতে চারাগুলো অতিবৃষ্টিতে পচে না যায়।

হাসান আরও জানান, বর্তমানে প্রতিটি গাছে ৩ থেকে ৫ কেজি ওজনের তরমুজ রয়েছে। এই তরমুজ রাজধানীর কাওরান বাজারে ২ হাজার ৪০০ টাকা দরে বিক্রি করছেন। ৪০ শতক জায়গায় প্রায় চার টন তরমুজ উৎপাদিত হয়েছে। তিনি আশা করছেন, ৪ টন তরমুজ বিক্রি হবে প্রায় ১ লাখ ৭০ হাজার টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লক্ষাধিক টাকা আয় হবে।

বগুড়া জেলা কৃষি অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের চুয়াডাঙায় প্রথম থাই ও ভিয়েতনাম জাতের এই তরমুজ চাষ শুরু হয়। বগুড়ায় এবারই প্রথম চাষ হচ্ছে এই তরমুজ। পাশের দেশ ভারত থেকে থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম ও জাপানি জাতের এই তরমুজের বীজগুলো দেশে আসে। দেশে শুষ্ক মৌসুমে ব্যাপক আকারে বিভিন্ন জাতের তরমুজের চাষ হলেও অমৌসুমি তরমুজের চাষের সংখ্যা হাতে গোনা।

প্লাস্টিক মালচিং পদ্ধতিতে রাখা সারি সারি শীতকালীন তরমুজ

এ বিষয়ে বগুড়া সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা এনামুল হক জানান, বগুড়ায় এম এ হাসানের মতো পাঁচ-ছয়জন কৃষক শীতকালীন তরমুজ চাষ করছেন। তাদের চাষের খেতগুলো অনেকবার পরিদর্শন করা হয়েছে। এবং যাতে ভালো ফলন আসে, সে জন্য যথাযথ পরামর্শ দেওয়া হয়েছে উদ্যোক্তাদের। এই শীতকালীন তরমুজ চাষ করে ভালো ফলন পাচ্ছেন তারা। যদি সামর্থ্যবান উদ্যোক্তারা এগিয়ে আসেন এই অমৌসুমি জাতের তরমুজ চাষ করতে, তাহলে তারা লাভবান হবেন। এই তরমুজ চাষে ভালো সম্ভাবনা বগুড়ায় রয়েছে বলেও জানান তিনি।

এম এ হাসান স্ট্রবেরি, পেঁপে, তরমুজসহ বিভিন্ন জাতের ফল ফসলের চারা তৈরি করছেন। চারাগুলো অনলাইনে বিক্রিও করছেন। এ বছর জুন থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকার চারা তিনি অনলাইনে বিক্রি করেছেন। হাসান জানান, আশপাশের লোকজন প্রথমে তার এই কাজকে সমর্থন না করলেও অনেকে এখন উদ্যোক্তা হওয়ার জন্য তার কাছে পরামর্শ নিতে আসছেন।

এনএ