পরিচিত ক্রেতাদের বিনামূল্যে পিঠা তৈরি করে খাওয়াবেন বিক্রেতা লিটন বেপারী

শীতের এই মৌসুমে ফুটপাতগুলোতে চিতই পিঠা বিক্রেতাদের অভাব নেই। মূলত পিঠা বিক্রি করেই চলে তাদের সংসার। ফ্রিতে পিঠা খাওয়াবেন এমন খবর খুব বিরল। কিন্তু এবার চাঁদপুর শহরে ১২শ পিঠা তৈরি করে ফ্রিতে খাওয়াবেন ভ্রাম্যমাণ পিঠা বিক্রেতা লিটন বেপারী। অবাক হওয়ার কিছু নেই। পিঠা বিক্রির পেশায় ২০ বছর। তাই দুই দশক পূর্তি উপলক্ষে পরিচিত সব ক্রেতাদের বিনামূল্যে পিঠা তৈরি করে খাওয়াবেন তিনি।

পিঠা বিক্রেতা লিটন বেপারী। বছরের এই সময়ে কালীবাড়ি রেলওস্টেশন এলাকার রাস্তার পাশে পিঠা বিক্রি করে। পিঠা বিক্রি করে যা রোজগার হয় তা দিয়েই সংসার চলে লিটনের।

প্রতিদিন বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ, তরুণ-তরুণী, স্কুল-কলেজের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, দোকানদার, পথচারী, শ্রমিকরা তার ভ্রাম্যমাণ পিঠার দোকানে পিঠা কিনতে ভিড় জমায়। কেউ ভ্রাম্যমাণ এই দোকানের সামনেই দাঁড়িয়ে পিঠা খাচ্ছেন আবার কেউ দু-একটি পিঠা বাড়িতে ছেলেমেয়েদের জন্যে নিয়ে যাচ্ছেন।

কথা হয় পিঠা বিক্রেতা লিটন বেপারীর সঙ্গে। তিনি বলেন, পেশা হিসেবে পিঠা বিক্রির দুই দশক হয়েছে। আমি চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় রেললাইনের পাশে পিঠা বিক্রি করে থাকি। আমার পরিচিত অনেক ক্রেতা রয়েছে। তারা সব সময় আমার কাছেই আসেন পিঠা খেতে। তবে চলতি বছরটি আমার কাছে বিশেষ একটি বছর। কারণ এ বছরই পিঠা বিক্রির ২০ বছর পূর্ণ হয়েছে। তাই পিঠা বিক্রির ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার (২১ জানুয়ারি) ক্রেতাদের বিনামূল্যে আমি পিঠা খাওয়াব।

চাঁদপুর শহরের কালীবাড়ি এলাকায় রেললাইনের পাশে পিঠা বিক্রি করেন বিক্রেতা লিটন

লিটন বলেন, ২০০১ সাল থেকে আমি পিঠা বিক্রির কাজে জড়িত হই। ২০২১ সালে আমার পিঠা বিক্রির ২০ বছর পূর্ণ হলো। তাই নিজ থেকে এই উদ্যোগ গ্রহণ করেছি। এটা আমার পিঠাপ্রেমী ক্রেতাদের জন্য সামান্য ভালোবাসা।

এদিকে  লিটনের এই ব্যতিক্রমী আয়োজন সাধুবাদ জানিয়েন ক্রেতা ও পিঠাপ্রেমী সাধারণ মানুষ। একজন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী হয়েও ক্রেতাদের সঙ্গে এই আচরণ লিটন বেপারীর বড় মনের মানুষের পরিচয় বহন করে বলে মনে করছেন ক্রেতারা।

পিঠা বিক্রেতা লিটন বেপারী বলেন, ক্রেতাদের জন্য চিতই পিঠার আয়োজন করেছি শুঁটকি ভর্তা, সরিষা ভর্তাসহ চার রকমের ভর্তা দিয়ে। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত ফ্রিতে পিঠা বানিয়ে খাওয়ানো হবে। কোনো ক্রেতাকেই তিনি পিঠা না খাইয়ে খালিমুখে পাঠাবেন না। আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পিঠা তৈরি করার প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন তিনি।

৪৭ বছর বয়সী লিটন বেপারী পিঠা বিক্রি করেই তার তিন মেয়েকে পড়াশুনা করাচ্ছেন। তার বড় মেয়ে নিপা অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে, মেজো মেয়ে শান্তা দশম শ্রেণিতে এবং ছোট মেয়ে আমেনা দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়াশুনা করছে। পিঠা বিক্রি করে সংসার চালানো আর সন্তানদের লেখাপড়ার খরচ যোগাতে অনেক বেশিই কষ্ট হচ্ছে। আমি চাই আমার সন্তানরা উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হোক।

কোর্টস্টেশন এলাকার ব্যবসায়ী রিংকু বলেন, লিটন ভাই একজন সাধা মনের মানুষ। পিঠা বিক্রির ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বৃহস্পতিবার আমাদের পিঠা খাওয়াবেন। এটা সত্যিই প্রশংসনীয়।

স্কুলশিক্ষক ইমরান হোসেন বলেন, ফ্রিতে পিঠা অনেক খেয়েছি কিন্তু পিঠা বিক্রেতা ফ্রিতে পিঠা খাওয়াবেন এমন খবর কোথাও আগে শুনিনি। পিঠা বিক্রেতা লিটন ভাই ২০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সবাইকে পিঠা খাওয়াবেন। এই কাজটি তিনি না করলেও পারতেন কিন্তু ব্যবসার কথা না ভেবে ক্রেতাদের উৎসাহ দিতে মহতি এক উদ্যোগ নিলেন লিটন ভাই। আমরা তার সাফল্য কামনা করি।

এমএসআর