‘জীবনে পয়লাবার লেপ গায়ে দিয়া ঘুমাইবো’
লেপ পেয়ে খুশি বৃদ্ধা আলেয়া বেগম
জীবনে পয়লা বার লেপ গায়ে দিয়া ঘুমাইবো। মরণের আগে একটু শান্তিতে ঘুমাইবো। বুড়ি হইয়া গেলাম তবুও এট্টা লেপ গুছাইতে পারি নাই, আজকে আমারে ডাইকা আনে যারা লেপ দেলো তারে আল্লাহ বাঁচায়ে রাখুক। আজ আমি খুব খুশি, আমার মতো অনেকেই এন্নে যারা আইছে তারা খুশি হইছে, দিল জুরায়ে গেছে। এভাবেই আল্লাহর দরবারে মনের আকুতি জানাচ্ছিলেন ফরিদপুর সদর উপজেলার ডিক্রিরচর ইউনিয়নের চরাঞ্চলের বাসিন্দা বৃদ্ধা আলেয়া বেগম।
বৃদ্ধা আলেয়া বেগমের বয়স এখন ৮০ ছুঁই ছুই। স্বামী মারা গেছেন দীর্ঘদিন আগে। তিন ছেলে দুই মেয়ের জননী তিনি। মেয়ে দুইটার বিয়ে হয়েছে। শ্বশুর বাড়িতে থাকে। ছেলেরা অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল। কামলা দিয়ে দিনাতিপাত করেন। ছেলের বউদের অত্যাচারে তিনি বাড়িছাড়া। বাড়ির পাশে একটি খুপড়ি ঘর তুলে কোনোমতো জীবনযাপন করছেন। আজ এ-বাড়ি তো কাল ও-বাড়ি, চেয়েচিন্তে চলে তার দিন।
বিজ্ঞাপন
চরাঞ্চলে বসবাস করা এমনিতেই কষ্টকর তারপর শীতে কষ্টের সীমা থাকে না। আর এসকল অসহায় মানুষের শীতের কষ্ট কমাতে ভিন্নধর্মী উদ্যোগ নিয়েছে ফরিদপুর ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (এফডিএ) নামে একটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা। হতদরিদ্র মানুষের হাতে তারা তুলে দিয়েছেন লেপ। শুধু লেপই নয়, কভারসহ লেপ তুলে দিয়েছে হতদরিদ্র মানুষের হাতে। এই লেপ নিতেই আসেন বৃদ্ধা আলেয়া বেগম। বুধবার (২০ জানুয়ারি) বিকেলে লেপ নেওয়ার পর কথা হয় আলেয়া বেগমের সঙ্গে।
জানা গেছে, ফরিদপুর সদর উপজেলার ছয়টি ইউনিয়নে জরিপ চালিয়ে প্রকৃত হতদরিদ্র খুঁজে বের করা হয়। যারা শীত নিবারণের জন্য কখনো লেপ ব্যবহার করেননি। সেই সকল নদী ভাঙন ও চরাঞ্চলের হতদরিদ্র পাঁচ শতাধিক মানুষের মাঝে কভারসহ লেপ বিতরণ করে ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি।
বিজ্ঞাপন
বিকেলে শহরতলির টেপুরাকান্দি এলাকায় অবস্থিত এফডিএর নিজস্ব কার্যালয়ে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে এ সকল হতদরিদ্র শীতার্ত মানুষের মাঝে লেপ বিতরণ করেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. আসলাম মোল্লা।
এফডিএর নির্বাহী পরিচালক মো. আজহারুল ইসলাম বলেন, সংস্থার পক্ষ থেকে প্রতিবছরই শীতবস্ত্র হিসেবে কম্বল বিতরণ করি। দেখা যায় অনেকেই কম্বল বিতরণ করেন। আসলে কম্বলে তেমন শীত মানে না। তাই এবার একটু ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করি।
তিনি আরও বলেন, সংস্থার কর্মীদের সদর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে যাচাই বাছাই করার জন্য মাঠে নামাই। যারা জীবনে কোনোদিন লেপ ব্যবহার করতে পারেনি, এমন মানুষকে খুঁজে বের করি। বিশেষ করে নদী ভাঙনকবলিত ও চরাঞ্চলের দরিদ্র মানুষের মধ্যে থেকে বাছাই কার্যক্রম চালানো হয়। এদের মধ্যে যাদের কোনো থাকার জায়গা নেই বা বাড়িতে লেপ নেই তাদের খুঁজে বের করে তাদের হাতে লেপ তুলে দেওয়া হয়েছে।
আজহারুল ইসলাম বলেন, অনেকেই শীতবস্ত্র বিতরণ করেন সুনাম ধরে রাখার জন্য। অনেক মানুষই একাধিকবার কম্বল নিয়ে থাকেন। কিন্তু আমি একেবারেই হতদরিদ্রদের খুঁজে বের করেছি। মাঠকর্মীদের কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, যাতে তারা সঠিকভাবে তালিকা তৈরি করে। তালিকা তৈরির পর আমি নিজে তালিকা যাচাই করেছি সঠিক হয়েছে কিনা। আমার উদ্দেশ্য ছিল একেবারেই হতদরিদ্র মানুষের হাতে লেপ তুলে দেওয়া। আমার মনে হয় আমার সে উদ্দেশ্য সফল হয়েছে।
লেপ বিরতণকালে উপস্থিত ছিলেন বেনিফিসিয়ারিজ ফেন্ডশিপ ফোরামের (বিএফএফ) নির্বাহী পরিচালক আ ন ম ফজলুল হাদী সাব্বির, এসডিসির নির্বাহী পরিচালক কাজী আশরাফুল হাসান, পিডাব্লুওর নির্বাহী পরিচালক হাফিজুর রহমান মন্ডল, ডা. শামসুল হক, মো. আবু ছাহের আলম, ডিক্রিরচর ইউপি চেয়ারম্যান মেহেদি হাসান মিন্টু, নারীনেত্রী আসমা আক্তার মুক্তা, ব্লাস্টের জেলা কো-অর্ডিনেটর অ্যাডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী, এ কে কে এর নির্বাহী পরিচালক মো. আ. জলিলসহ গণ্যমান্য ব্যক্তি।
বিএফএফ এর নির্বাহী পরিচালক আ ন ম ফজলুল হাদী সাব্বির বলেন, তীব্র শীতে নদী ভাঙন ও চরাঞ্চলের মানুষ অনেক কষ্ট পাচ্ছে। তাদের কষ্ট নিবারণের জন্য এফডিএ লেপ বিতরণ করে একটি মানবিক কাজ করেছে। এভাবে শীতার্তদের পাশে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
এসপি