বাংলাহোপ এতিমখানায় শিশুদের দেখে বোঝার উপায় নেই তারা অভিভাবকহীন

দুঃস্থ ও অনাথ শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছে এতিমখানা ‘বাংলাহোপ’। ‘মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য’ এই ব্রত নিয়ে ২০০৪ সালে এতিমখানাটি প্রতিষ্ঠা করেন আমেরিকান দম্পতি ডেভিড এল ওয়েড এবং বেভারলি জে ওয়েড। তাদের পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে ব্যতিক্রমী এ প্রতিষ্ঠানটি দেশের সুবিধাবঞ্চিত অনাথ ও অসহায় শিশুদের সহায় হিসেবে কাজ করছে।

জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলা থেকে প্রায় ১৬ কিলোমিটার দূরে হাজরাপুর গ্রামে গড়ে তোলা হয়েছে বাংলাহোপ এতিমখানা। অনাথ ও অসহায় শিশুদের লালনপালনের পাশাপাশি তাদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলায় এর প্রধান উদ্দেশ্য। 

প্রায় ১৪ একর জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা বাংলাহোপ এতিমখানার চার একর জায়গায় নির্মাণ করা হয়েছে চিলড্রেন হোমসহ বিভিন্ন ভবন। যেখানে শূণ্য থেকে বিভিন্ন বয়সের ১৬১ জন অনাথ শিশু জীবনযাপনের পাশাপাশি নিয়মিত শিক্ষা গ্রহণ করছে। এতিমখানার অধিকাংশ শিশুই খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের। ছোট শিশুদের লালনপালনের জন্য ১৬ জন মা’কে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।

এতিমখানার শিশুদের নিয়মমাফিক খাবার, ঘুম এবং খেলাধুলার পাশাপাশি শিক্ষাদানের জন্য শিক্ষকসহ পুরো এতিমখানায় নিয়োগ রয়েছে ৭১ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী। আশ্রয়ের পাশাপাশি সার্বিক সহযোগিতা পেয়ে ভীষণ খুশি প্রতিষ্ঠানের অনাথ শিশুরা।

এতিম শিশুদের দেখাশুনা করার দায়িত্ব পেয়ে খুশি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ১৬ মা। তাদের মধ্যে শান্তি কিসকু, বন্দনা বৈরাগী, নমিতা ও অর্চনা বলেন, ছোট ছোট শিশুদের পরম আদরে তারা দেখাশুনা করছেন। শিশুরা যে এতিম, মায়ের মমতায় তা তারা বুঝতে পারে না। আমাদেরও ভালো লাগে ছোট ছোট শিশুদের আদর যত্ন করার দায়িত্ব পেয়ে।

এতিমখানার প্রধান ফটক

এতিমখানার স্পনসর পরিচালক পনুয়েল বাড়ৈই বলেন, বিদেশি দাতাদের আর্থিক সহযোগিতায় এই এতিমখানা পরিচালিত হচ্ছে। এজন্য তিনি শিশুদের জীবনবৃত্তান্ত তুলে ওয়েবসাইটে দাতাদের অবহিত করেন। সহৃদয়বান বিদেশি দাতাগণ ওয়েবসাইটে সবকিছু জেনে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে আর্থিক সহযোগিতা করেন। পরবর্তীতে শিশুদের অগ্রগতি সম্পর্কেও দাতাদের জানানো হয়।

এতিমখানার নির্বাহী পরিচালক সুচিত্রা সরেন বলেন, অসহায় শিশুদের স্বাবলম্বী করে গড়ে তোলায় আমাদের একমাত্র লক্ষ্য। এখানে ১৬১ অনাথ শিশুদের সার্বিক দায়িত্ব পালন ছাড়াও বরিশাল, গোপালগঞ্জ ও দিনাজপুরসহ ৬টি জেলায় আরও ১১টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৪৮৪ জন শিশু পড়ালেখা করছে। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত এসব শিশুর বই-খাতা-কলম, পোশাক, টিফিন ভাতা ও বৃত্তির ব্যবস্থা করছেন বাংলাহোপ এতিমখানা।

তিনি আরও বলেন, অসহায় শিশুরা দেশের বোঝা না হয়ে বাংলাহোপের দেখানো পথ অনুসরণ করে নিজেরা স্বাবলম্বী হয়ে সমাজের উপকার করবে— এমন প্রত্যাশা নিয়ে এই এতিমখানা পরিচালনা করা হচ্ছে।

পাঁচবিবি উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল শহিদ মুন্না বলেন, উপজেলার নিভৃত পল্লীতে অত্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে অনাথ শিশুদের আলোর পথ দেখাচ্ছে বাংলাহোপ এতিমখানা। যা সরেজমিনে না দেখলে বোঝানো যাবে না। অনাথ শিশুদের যেভাবে তারা গড়ে তুলছেন— আমার বিশ্বাস এসব শিশুরা সমাজের বোঝা না হয়ে প্রত্যেকেই এক একজন আদর্শ মানুষ হিসেবে সমাজের উপকারে কাজ করবে।

এমএসআর