ঢাবির পরীক্ষা পদ্ধতিতে খুশি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকরা
রংপুরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) কলা অনুষদভুক্ত ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ঢাকার বাইরে প্রথমবারের মতো দেশের বিভাগীয় সাত নগরীতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এ পরীক্ষার আয়োজনে ছিল উৎসবের আমেজ। অঞ্চলভিত্তিক ঢাবির পরীক্ষা হওয়াতে দুর্ভোগ অনেকাংশে কমেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা।
ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া শিক্ষার্থীদের দাবি, ঢাবির মতো দেশের অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও এ পদ্ধতিতে পরীক্ষা গ্রহণ করলে অর্থ, সময়, শ্রম সব সাশ্রয় হবে। আর অভিভাবকরা বলছেন, শিক্ষার্থীরা কীভাবে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করলে সবচেয়ে কম ভোগান্তিতে ভালোভাবে পরীক্ষা দিতে পারেন, এটা আমাদের সবাইকে ভাবতে হবে। এবারে ঢাবি যুগান্তকারী দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।
বিজ্ঞাপন
শনিবার (০২ অক্টোবর) বিভাগীয় নগরী রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ দুটি কেন্দ্রে দেড় ঘণ্টাব্যাপী ‘খ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। সকাল সাড়ে দশটা থেকে পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে প্রবেশ করে। এগারোটায় শুরু হওয়া পরীক্ষা শেষ হয় দুপুর সাড়ে ১২টায়।
এদিকে সকাল সাড়ে নয়টা থেকেই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র এবং ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের সামনে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের উপচে পড়া ভিড় দেখা যায়। কেন্দ্রের বাইরে স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষিত হলেও ভেতরে মানতে হয়েছে সামাজিক দূরত্বের সঙ্গে পরীক্ষাবিধি।
বিজ্ঞাপন
দুর্ভোগ ও বিড়ম্বনামুক্তভাবে পরীক্ষা দিতে পারায় খুশি ঢাবিতে ভর্তিইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা। তেমন অভিভাবকরাও রয়েছেন স্বস্তিতে। কুড়িগ্রামের কাঁঠালবাড়ি থেকে বাবার সঙ্গে মোটরসাইকেলে করে পরীক্ষায় অংশ নিতে এসেছিলেন বোরহান কবির। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্র থেকে পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরার সময় তার চোখেমুখে ছিল আনন্দের ছাপ।
ওই শিক্ষার্থীর অভিভাবক বাহারুল কবির ঢাকা পোস্টকে বলেন, দুই বছর আগে বড় মেয়ের ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে অনেক চিন্তিত ছিলাম। ঢাকায় যাতায়াত, থাকা-খাওয়ার কষ্ট আর যানজটের ভোগান্তির তিক্ত অভিজ্ঞতা ভুলেনি। এবার ছোট ছেলের পরীক্ষা নিয়ে আগের মতো চিন্তা নেই। বাড়ি থেকে সকালে নাস্তা সেরে রংপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলাম। এখন ঢাবির পরীক্ষা শেষে বাড়ি ফেরা, এটা কম কিসে?
ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে দিনাজপুর থেকে রংপুরে এসেছেন নাসরিন নাহার। সঙ্গে তার বড় ভাই-ভাবিও রয়েছেন। পরীক্ষা শেষে ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ কেন্দ্রের সামনে কথা হয় তার সঙ্গে।
নাসরিন ঢাকা পোস্টকে বলেন, খুব ভালো লাগছে করোনাভীতিমুক্ত সুন্দর পরিবেশে পরীক্ষা দিতে পেরে। ঢাকার বাইরে পরীক্ষা হওয়াতে আমাদের মতো গরিব পরিবারের ছেলে-মেয়েদের অর্থ, সময়, শ্রম সবই সাশ্রয় হচ্ছে। ভোগান্তিও কমে এসেছে।
এদিকে রংপুর নগরের জলকর এলাকা থেকে মেয়েকে নিয়ে এসেছেন ব্যবসায়ী মিরাজুল ইসলাম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ঢাকায় যাওয়া-আসায় অনেক ঝামেলা ছিল। কিন্তু এখন ঝামেলামুক্ত হয়ে মেয়ে পরীক্ষা দিতে পারছে। কেন্দ্রে প্রবেশের সময় হাতে জীবাণুনাশক দিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর আগে শরীরের তাপমাত্রাও পরীক্ষা করেছেন দায়িত্বরতরা। নিজ বিভাগীয় শহরে পরীক্ষা হওয়াতে আমরা আনন্দিত। অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উচিত হবে ঢাবির এ পরীক্ষা পদ্ধতি অনুসরণ করা।
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর গোলাম রব্বানী বলেন, ঢাবির ‘খ’ ইউনিটের জন্য বিভাগে পরীক্ষার্থী ছিল ৬ হাজার ৬১১ জন।
শুরুর দিনের মতো ২য় দিনেও কঠোর নিরাপত্তার মধ্যে দিয়ে সকল দায়িত্ব পালন করেছি। কোনো প্রকার অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই দুটি কেন্দ্রে ভর্তি পরীক্ষা শেষ করতে পেরেছি। পরীক্ষা শুরু হওয়ার পরপরেই উপাচার্য ড. হাসিবুর রশীদ ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন।
উপাচার্য উপাচার্য ড. হাসিবুর রশীদ বলেন, ভর্তি পরীক্ষা গ্রহণের ক্ষেত্রে কঠোর স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি অসাধুপায় অবলম্বন ঠেকাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দায়িত্ব পালন করেন। ঢাবির এ পরীক্ষা পদ্ধতিতে শিক্ষার্থীরা বেশ উচ্ছসিত।
প্রসঙ্গত, ঢাবি প্রকাশিত সময়সূচি অনুযায়ী ১ অক্টোবর ‘ক’ ইউনিট এবং ২ অক্টোবর ‘খ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। আগামী ৯ অক্টোবর ‘চ’ ইউনিট, ২২ অক্টোবর ‘গ’ ইউনিট এবং ২৩ অক্টোবর ‘ঘ’ ইউনিটের পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সব ইউনিটের পরীক্ষা বেলা ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হবে।
এ বছর ঢাবিতে ভর্তি পরীক্ষায় রংপুর বিভাগের ৩১ হাজার ৩০৭ জন পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেছেন। এর মধ্যে ‘ক’ ইউনিটে ১০ হাজার ৩৪৮ জন, ‘খ’ ইউনিটে ৬ হাজার ৬১১ জন, ‘চ’ ইউনিটে ১ হাজার ৯৬৫ জন, ‘গ’ ইউনিটে ১ হাজার ৩৬২ জন এবং ‘ঘ’ ইউনিটে ১১ হাজার ২১ জন রয়েছেন।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এমএএস