মৌসুমটি ইলিশের হলেও অবরোধের কারণে জেলেরা ফিরছেন প্রায় শূন্য হাতে। নদীতে ইলিশ নেই! যা পাওয়া যায় তাও আবার ছোট। মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া দাদনের (সুদ) টাকায় ট্রলার ও জাল নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ শিকারে গেলেও ইলিশ না পেয়ে হতাশ তারা। ট্রলারে লাখ টাকার বাজার নিয়ে সাগরে গিয়ে যা মাছ ধরেছেন তাতে না উঠবে বাজার খরচ না মিটবে মহাজনদের দাদন। চিন্তা ও হতাশার ছাপ নিয়ে জেলেরা ফিরছেন পিরোজপুর সদর উপজেলার পাড়েরহাট মৎস্যবন্দরে। 

সরেজমিনে দেখা যায়, পিরোজপুর সদর ও ইন্দুরকানী উপজেলার চন্ডিপুর, কলারণ, খোলপটুয়া, টগড়া ও বালিপাড়া এলাকার জেলেপল্লীর জেলেরা মাছ ধরতে সাগরে যান ভালো আয়ের আশায়। ইলিশের ভরা মৌসুমেও (আষাঢ়-আশ্বিন) সাগরে জেলেদের জালে ইলিশ ধরা না পড়ায় ইলিশশূন্য হয়ে পড়েছে পাড়েরহাট মৎস্যবন্দর। একদিকে মহাজনের দাদন অন্যদিকে পরিবার-পরিজনের ভরণ-পোষণ নিয়ে দুশ্চিন্তায় তারা। ভরা মৌসুমেও সাগরে ইলিশ না পাওয়ায় দেনার দায়ে অসহায় হয়ে পড়েছেন তারা। ফলে কষ্টে দিন কাটাচ্ছেন ইন্দুরকানীর বিভিন্ন এলাকার জেলেপল্লীর বাসিন্দারা।

আড়ৎশ্রমিক মনির হোসেন বলেন, কিছুদিন আগে বন্যা গেছে যে কারণে ১-২ দিন গেছে সাগরে। এখন আবার অবরোধ দিছে ২২ দিনের। আগে ছিল ৬৫ দিনের। দেনায় দেনায় জর্জরিত হয়ে গেছি আমরা। ছেলে-মেয়ে নিয়ে এখন না খেয়ে অনাহারে থাকার অবস্থা হইছে। কিছু মাছ জেলেরা পাইছে। ৩০ হাজার থেকে লাখ টাকায় বিক্রি করতেছে। দাম না পাওয়ায় বাজারে দেনা হয়ে গেছে।

ট্রলার মালিক মো. রুবেল হাওলাদার বলেন, আমরা ঋণগ্রস্থ তবুও সাগরে নৌকা ভাসাই। মাছ ঠিক মত পাই না। ঋণ কীভাবে শোধ করবো? মাথায় কাজ করছে না এখন। অবরোধ দিচ্ছে এর আগে বন্যার কারণে আমরা মাছ ধরতে পারি নাই।

মাছ ব্যবসায়ী মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, বাজারে মাছের দাম অনেক বেশি কিন্তু টাকা যা বিনিয়োগ করছি তা বের হচ্ছে না। ক্রেতা আছে। মাছের দাম অনেক বেশি এবং মাছের সাইজ অনেক ছোট।  

জেলে সিরাজুল ইসলাম বলেন, আমরা অবরোধ পালন করি আর ভারতীয় জেলেরা সেই সুযোগে মাছ ধরে নিয়ে যায়। এটা বন্ধ করা দরকার। বাজার খরচও ওঠে না। এবার যাওয়ার আগে আড়াই লাখ টাকার বাজার করছি। এসে মাছ বিক্রি করছি দেড় লাখ টাকার। আমাদের এই ঋণ কখনো শোধ হয় না।

জেলে মোসলেম মৃধা বলেন, ভারতীয় জেলেরা যেভাবে মাছ ধরে নিয়ে যায় তাতে আমরা কোনভাবেই মাছ পাই না। আর আমরা তাদের সীমানায় যেতেও পারি না। আমরা গরিব মানুষ মাছ ধরে খাই। এভাবে অবরোধ চললে আমরা কি খাবো? অবরোধ দিয়ে বাংলাদেশ সরকার আমাদের আটকে রাখে কিন্তু ভারতীয় জেলেরা ঠিকই মাছ ধরে নিয়ে যায়। আবার সরকারি সহযোগিতা ঠিকমত পাইনা। চাল ৪০ কেজি বরাদ্দ থাকলে ২০ কেজি পাই। আর এই ২০ কেজি আবার পায় জেলে না এমন লোকজন।

দক্ষিণ উপকূলীয় মৎস্যজীবী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মো. মিজানুর রহমান শেখ জানান, এ অবরোধকে আমরা স্বাগত জানাই। কিন্তু অবরোধ দেওয়ার আগে জেলেরা মাছ পাওয়া শুরু করেছিল। অবরোধ শেষে আবার জেলেরা সমুদ্রে যাবে। অনেক জেলে দাদন নিয়ে সাগরে গেছে বন্যার কারণে তারা মাছ পায়নি। একদম খালি ট্রলার নিয়ে ফিরে আসছে বললেই চলে। মাছ শূণ্য। এই অবরোধে ভারতীয় জেলেরা মাছ ধরে বাংলাদেশী সীমানায়। সরকারের কাছে দাবি থাকবে যাতে ভারতীয় ট্রলার বাংলাদেশের সীমানায় এসে মাছ ধরতে না পারে। 

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল বারী জানান, মা ইলিশের এই প্রধান প্রজনন মৌসুমে যে কোনো প্রকার মাছ ধরা, পরিবহন ও মজুত নিষিদ্ধ। এ সময়ে জেলার ১৮ হাজার ৭০০ জেলে প্রতি ২২ দিনের জন্য ২০ কেজি করে ভিজিএফ সহায়তা পাবে। এ সপ্তাহের মধ্যে চাল বিতরণ কার্যক্রম শেষ হবে। ভারতের জেলেদের মাছ ধরার বিষয়টি রাষ্ট্রীয় সিদ্ধান্ত। তবে অভিযোগ পাচ্ছি যে আমাদের অবরোধ চলাকালে ভারতীয় জেলেরা আমাদের সীমানায় এসে মাছ ধরে। এ বছর বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোষ্টগার্ড এর টহল চলমান থাকবে। কেউ যদি অবৈধভাবে মাছ ধরে তাদের আটক করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আবীর হাসান/আরআই