শাহাদাৎ ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগম

নিয়তি কাকে কোথায় নিয়ে যায় কেউই তা বলতে পারে না। তবুও জীবিকার তাগিদে ছুটে চলতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য মানুষ বিভিন্ন কর্ম বেছে নিয়ে মাথা গোঁজার ঠাঁই খুঁজে বেড়ায়। স্বপ্ন দেখে, কিন্তু সব স্বপ্নপূরণ হয় না। তেমনি এক দম্পতির সন্ধান পাওয়া গেছে। যাদের নেই কোনো মাথা গোঁজার ঠাঁই। তাদের বসবাস পাবলিক টয়লেটে।

ভূমিহীন-অসহায় পরিচ্ছন্নতাকর্মী শাহাদাৎ ও তার স্ত্রী নার্গিস বেগম দীর্ঘদিন ধরে জেলার বোয়ালমারী পৌর সদরের একটি পাবলিক টয়লেটে বসবাস করে আসছেন। 

ফরিদপুরের বোয়ালমারী বাজারের টিনপট্টি এলাকায় পাবলিক টয়লেটই এই দম্পতির ঘরবাড়ি। শৈশবে মা-বাবাকে হারিয়ে বোনের সঙ্গে বোয়ালমারী আসেন শাহাদাৎ। প্রথমে টোকাই হিসেবে কাগজ কুড়িয়ে, মুটে-মজুরের কাজ করে কখনওবা সুইপারের কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করেছেন। তারপর পৌর মেয়র মোজাফফর হোসেনের বদান্যতায় শহর পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে মাস্টার রোলে কাজ ও হেলিপ্যাড এলাকায় থাকার জন্য একটি ছোট্ট ছাপরা ঘর পেলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের জায়গা সংকুলান না হওয়ায় স্বামী-স্ত্রী পাবলিক টয়লেটে বসবাস শুরু করেন। 

শাহাদাৎ বলেন, আমার বাবার বাড়ি মাগুরার মোহাম্মদপুর উপজেলার পাচুড়িয়ায়। জন্মের সময় মায়ের মৃত্যু হয় আর ছয় বছর বয়সে বাবাকে হারিয়ে চলে আসি বোয়ালমারীতে। পৈতৃক সম্পদ বলে কিছু ছিল না। দারিদ্র্যের কষাঘাতে এবং জীবিকার তাগিদে শৈশব থেকে কাগজ কুড়িয়ে, টুকটাক কাজ করে জীবন চালিয়ে নিচ্ছি কোনো মতে। জমি, ঘরবাড়ি দূরে থাক নিয়তি ভাড়া বাড়িতেও থাকার ভাগ্য লেখেনি। 

তিনি আরও বলেন, সুইপারের কাজ করি বলে অনেকে বাড়ি ভাড়াও দেয় না। বোয়ালমারীর পৌর মেয়র মোজাফফর হোসেন বাবলু মিয়া মাস্টার রোলে দৈনিক ১৬০ টাকা বেতনে বাজার পরিষ্কারের চাকরি দিয়েছেন এবং বোয়ালমারী হ্যালিপ্যাডে সরকারি জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করেছেন। কিন্তু পরিবারের অন্য সদস্যদের জায়গা না হওয়ায় আমি ও আমার স্ত্রী পাবলিক টয়লেটকে নিজেদের বাসস্থান বানিয়ে নিয়েছি। এখন বয়স হয়েছে, রোগ-বালাইয়ের জন্য ঠিক মত কাজও করতে পারি না।

শাহাদাতের স্ত্রী নার্গিস বলেন, দৈনিক বাজার ঝাড়ুর কাজ করার পর মানুষের বাড়িতে কাজ করে যা পাই তাই খাই। আবার কিনেও খাবার খাই। অনেক সময় না খেয়েও দিনযাপন করি। সরকার ঘর দিচ্ছে তা আমরা জানি না, কেউ বলেও নাই। যদি সরকার আমাদেরকে একটা ঘর দিতো জীবনের শেষ দিনগুলো শান্তিতে থাকতাম।

তিনি আরও বলেন, অনেকেই আসে খোঁজখবর নিয়ে যায়, কিন্তু আমাদের ভাগ্যের কোনো পরিবর্তন হয় না। আমাদের একশতাংশ জমিও নাই যে সেখানে একটা ঘর করে থাকব।

পাবলিক টয়লেটের পাশের হোটেল ব্যবসায়ী আব্দুর রহমান বলেন, শাহাদাৎ-নার্গিস দম্পতি প্রায় দুই বছর যাবত পাবলিক টয়লেটের এক কোণে বসবাস করেন। 

বোয়ালমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঝোটন চন্দ বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী ভূমিহীন গৃহহীন পরিবারকে ঘর দিচ্ছেন। শাহাদাৎ-নার্গিস দম্পতির বসবাসের জন্য সরকারিভাবে ঘরের ব্যবস্থা করে দেওয়া হবে।

আরএআর