বাঁধাকপির ক্ষেত

মৌসুমি সবজি শোভা পাচ্ছে রাজশাহীর মাঠে মাঠে। সেই হিসেবে বাজারেও সরবরাহ বেড়েছে। ক্রেতারা নাগালের মধ্যেই পাচ্ছেন শীতকালীন শাক-সবজি। কিন্তু ক্ষেতে হাহাকার করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। তারা বলছেন, লোকসানের বৃত্ত কিছুতেই ভাঙতে পারছেন না তারা।

রাজশাহী নগরীর অন্যতম সবজি বাজার সাহেববাজার মাস্টারপাড়া। নগরীর আশপাশের ক্ষেত থেকে প্রতিদিন টাটকা সবজি আসে এই বাজারে। এছাড়াও নগরীর খড়খড়ি এলাকায় রয়েছে আরেকটি সবজির পাইকারি বাজার। 

শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) মাস্টারপাড়ায় প্রতি কেজি ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকায়। খড়খড়িতে এই দাম ১০ টাকার মধ্যে। অথচ প্রতি পিস এক কেজি ফুলকপি বা বাধা কপির দাম কৃষক পাচ্ছেন মাত্র দুই থেকে তিন টাকা। কৃষকের লাভের অংশ চলে যাচ্ছে বিক্রেতা কিংবা মধ্যস্বত্ব ভোগীদের পকেটে। বাজারে অন্যান্য সবজির দামও কম।

মাস্টারপাড়ায় প্রতি কেজি টমেটো ৩০ টাকা, শিম ২০ থেকে ৪০ টাকা, বেগুন ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, মটরশুঁটি ৫০ টাকা,  শসা ৪০ টাকা, আলু ২০ টাকা, কাঁচামরিচ ৬০ টাকা এবং মুলা ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

সবজি ক্ষেত

মাস্টারপাড়ার পাইকারি সবজি বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম জানান, তারা পাইকারদের কাছ থেকে সবজি কেনেন। এরপর সামান্য লাভ রেখে বিক্রি করে দেন। সবজির আমদানির ওপর দাম ওঠানামা করে। এখন বাজারে প্রচুর সবজি, তাই দামও কম।

যদিও ক্ষেতে এই সবজির অর্ধেকও দাম পাচ্ছেন না চাষি। রাজশাহী নগরীর আশপাশের বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এই তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।

জেলার পবা উপজেলার হরিপুর এলাকার কৃষক লায়েব উদ্দিন। সকালে তীব্র শীত উপেক্ষা করে বাঁধাকপির ক্ষেতে কাজ করছিলেন। তিনি জানান, এবার দুই বিঘা জমিতে বাঁধাকপি চাষ করেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার করে ১০ হাজার বাঁধাকপি আছে ক্ষেতে। এতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। কিন্তু বাঁধাকপির দাম নেই। মাত্র ২-৩ টাকা পিস করে দাম বলছেন পাইকাররা। এতে তার খরচই উঠবে না। প্রতি বিঘায় অন্তত ২০ হাজার টাকা লোকসান গুনতে হবে। উপায় না থাকায় ক্ষেতেই নষ্ট হচ্ছে কষ্টের ফসল। 

ফুলকপি, বেগুন, মুলা চাষিদেরও একই দশা। অনেকেই শ্রমিক খরচ ও গাড়ি ভাড়া তুলতে পারছেন না।

বিষয়টি স্বীকার করেছেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক শামছুল হক। তিনি জানান, রাজশাহী মূলত সবজি প্রধান এলাকা। কমবেশি জেলার ৯ উপজেলায় সবজি চাষ হয়। তবে সবেচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়েছে নগরীর উপকণ্ঠ পবা উপজেলায়। উৎপাদিত এই সবজির বেশিরভাগ অংশ চলে যায় নগরীতে। উৎপাদন নিয়ন্ত্রণে না থাকায় বাজারও নিয়ন্ত্রণ করা খুব কঠিন। 

জেলা কৃষি দপ্তর জানাচ্ছে, চলতি মৌসুমে ফুলকপি, বাঁধাকপি, গাজর, ব্রোকলি, লাউ, পালং ও শিম মিলিয়ে জেলায় শীতকালীন সবজি চাষ হয়েছে ১৪ হাজার ৪০৬ হেক্টর।  এর বাইরে আরও ৩ হাজার ৬৬০ হেক্টর জমিতে টমেটো চাষ হয়েছে।

আরএআর