জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রতিবাদে দ্বিতীয় দিনের মতো পরিবহন বন্ধ রেখেছে মালিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন কর্মমুখী মানুষ।

বুধবার (০৩ নভেম্বর) মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানো হয়। এরপরই শুক্রবার সকাল ৬টা থেকে পরিবহন মালিকরা তেলের দাম কমানো বা ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে ধর্মঘট শুরু করেন।

শনিবার সকালে ঢাকা-আরিচা, চন্দ্রা-নবীনগর ও টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়ক ঘুরে দেখা যায়, বিভিন্ন পয়েন্টে দাঁড়িয়ে আছেন অফিসগামীরা। পরিবহনের দেখা না পেয়ে অনেকেই হেঁটে রওনা দিয়েছেন কর্মস্থলের উদ্দেশে। কেউবা ছুটছেন ভ্যান, রিকশা কিংবা ইজিবাইকে। যেভাবেই হোক সকাল ৮টার আগেই পৌঁছাতে হবে কর্মস্থলে।

পোশাকশ্রমিক আহমেদ বলেন, কোনো পরিকল্পনা ছাড়াই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। পরিকল্পনা করে দাম বাড়ানো হলে আমরা আর ভোগান্তিতে পড়তাম না। শুধু ভোগান্তিই নয়, ঠিক সময়ে অফিস পৌঁছাতে না পারলে হাজিরা বোনাস প্রায় ৫০০ টাকা কাটা যাবে। তার ওপর রিকশাভাড়া দ্বিগুণ দিয়ে অফিসে পৌঁছাতে হচ্ছে।  একদিকে ভোগান্তি, অন্যদিকে হাজিরা বোনাস কাটাসহ অফিসের লোকদের মন্দ কথা শুনতে হবে। আর পরিকল্পনা করে তেলের দাম বাড়ালে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না।

কর্মস্থলে হেঁটেই রওনা দিয়েছেন পোশাকশ্রমিক বিউটি বেগম। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমার স্বামী চাকরি করেন জিরানী বাজার। সেখানেই আমি স্বামীর সঙ্গে থাকি। প্রতিদিন সকালে উঠে বাসার কাজ শেষে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে অফিসের উদ্দেশে রওনা হই। আজও তাই করেছি। কিন্তু রাস্তায় বের হয়ে দেখি গাড়ি নেই। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলাম কিন্তু গাড়ি আসল না। পরে জানতে পারলাম ধর্মঘট চলছে। আমি ধর্মঘটের খবর শুনিনি। শুনলে হাতে একটু সময় নিয়ে বের হতাম।

এদিকে পরিবহন ধর্মঘটের কারণে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন রিকশা-ভ্যানচালকরা। ১০ টাকার ভাড়া তারা হাঁকছেন ২০ টাকা। রিকশাচালক হান্নান বলেন, যাত্রীর খুবই চাপ। সড়কে গাড়িও নেই, সবাই ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে। তাই আমিও বেশি ভাড়া নিচ্ছি। এতে দোষের কিছু নেই। আমরা ভাড়া মিট করেই গন্তব্যে রওনা করি। যাদের ইচ্ছে তারা যাবে, যাদের ভালো লাগবে না তারা হেঁটে যাবে।

এ ব্যাপারে সচেতন নাগরিক কমিটির আশুলিয়া অঞ্চলের সভাপতি লায়ন মোহাম্মদ ইমাম বলেন, আসলে তেলের দাম বাড়ানোর আগে এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কতিপয় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত ছিল। হঠাৎ করে তেলের দাম বাড়ানোয় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। আশা করি সাধারণ জনগণের বিষয় মাথায় রেখে উদ্ভূত পরিস্থিতির সমাধান হবে।

পরিবহন শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা বাস মালিক দেলোয়ার হোসেন দিলু বলেন, আমরা আসলে সমাধান চাই। তেলের দাম বাড়লে ভাড়াও বাড়াতে হবে। আর সেটা সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে। তানাহলে তেলের দাম কমাতে হবে। দাবি মেনে না নিলে পরিবহন ধর্মঘট অব্যাহত থাকবে। 

এসপি