পিঠা হাতে নারী উদ্যোক্তারা

কুষ্টিয়া শহরের পৌরসভার বটতলায় তিনদিনব্যাপী পিঠা উৎসব চলছে। কুষ্টিয়া নারী উদ্যোক্তাদের উদ্যোগে এ পিঠা উৎসব শুক্রবার (২৯ জানুয়ারি) থেকে শুরু হয়। উৎসবমুখর পরিবেশে ঐতিহ্যের উচ্ছ্বাসে এ আয়োজন চলছে। পিঠা উৎসবে আসছেন সব শ্রেণি-পেশার মানুষ।

নারী উদ্যোক্তা ও মৌবনের নির্বাহী পরিচালক সাফিনা আনজুম জনির সভাপতিত্বে কুষ্টিয়া পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী এ পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন।

পিঠা উৎসবের উদ্বোধন করেন পৌর মেয়র আনোয়ার আলী

উদ্বোধনকালে তিনি বলেন, ‘বাঙালির ঐতিহ্য প্রবাহেরই একটি অংশ হচ্ছে পিঠা। এ দেশের লোকসংস্কৃতিরও অংশ সবার প্রিয় এই খাদ্যটি। আর পিঠাশিল্পীদের বানানো প্রতিটি পিঠায় থাকে প্রাণের ছোঁয়া, মিশে থাকে আবেগ, এটি পৃথিবীতে বিরল। পিঠা উৎসবের মূলেই রয়েছে ঢেঁকি। ঢেঁকি যেন জাদুঘরে রাখা লাগবে। তাই পিঠা উৎসবের আয়োজন করার জন্য কুষ্টিয়ার নারী উদ্যোক্তাদের ধন্যবাদ জানাই।’

পৌরসভার মেয়র আনোয়ার আলী আরও বলেন, ‘বরিশালের মেয়েরা পিঠা তৈরিতে আরও বেশি পারদর্শী। প্রয়োজনে বরিশাল গিয়ে আমাদের মা-বোনদের পিঠা তৈরী করা শিখে আসতে পারে বলেও যোগ করেন তিনি।’

তিনি আরও বলেন, ‘ঢাকায় পিঠাঘর রয়েছে। যেখানে হরেক রকমের পিঠা তৈরি করা হয়ে থাকে। তাই কুষ্টিয়াতে এ রকম একটা পিঠা ঘর তৈরি করা যায় কি না তা ভেবে দেখতে আজকের এই নারী উদ্যোক্তাদের প্রতি আহ্বান জানান।’

 উৎসবস্থলের উন্মুক্তমঞ্চে নারী উদ্যোক্তার কবিতা আবৃত্তি

নারী উদ্যোক্তা সাফিনা আনজুম জনি বলেন, ‘আমরা নারী। আমরাও পারি। হাজার বছরের সমৃদ্ধশালী সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী আমরা। আমরা খাদ্যরসিক বাঙালি প্রাচীনকাল থেকে প্রধান খাদ্যের পরিপূরক মুখরোচক অনেক খাবার তৈরি করে আসছি। তবে পিঠা সর্বাধিক গুরুত্বের দাবিদার। শুধু খাবার হিসেবেই নয় বরং লোকজ ঐতিহ্য এবং নারীসমাজের শিল্প নৈপুণ্যের স্মারক রূপেও পিঠা বিবেচিত হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাঙালিরা চিরকালই অতিথি পরায়ণ। সামাজিক বন্ধনটিও শক্ত আমাদের। এই শহরে আমরা নারী উদ্যোক্তারা মিলে এই পিঠা উৎসবের আয়োজন করেছি, এতে করে শহরের মানুষরা এখানে ছুটে আসবে। আনন্দে পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করবে। পিঠা খাওয়ার পাশাাপশি আনন্দ করবে, সে আনন্দের ভাগ সবাই পাবে।’

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রাণের টানে ছুটে আসা সর্বস্তরের মানুষের অংশগ্রহণে মুখর হয়ে ওঠেছে পিঠা উৎসবস্থল। শীতের পিঠা-পুলিসহ নানা বৈচিত্র্যময় পিঠার পসরা সাজিয়ে উৎসবে আগত দর্শনার্থীদের মনোযোগ কেড়েছে পিঠা উৎসবে অংশ নেয়া স্টলগুলো। সেই পসরায় মুগ্ধ হয়ে স্টলে স্টলে পিঠা খেতে ভিড় জমিয়েছেন সকল বয়সের মানুষ।

বাঙালির হাজার বছরের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির সঙ্গে মিশে আছে পিঠা। যখনই পিঠা-পায়েস, পুলি কিংবা নাড়ুর কথা উঠে তখনি যেন শীত ঋতুটি আমাদের চোখে ও মনে ভেসে ওঠে। প্রতি শীতেই গ্রাম বাংলার ঘরে ঘরে শুরু হয় পিঠাপুলির উৎসব।

পিঠা উৎসবে সেলফি তুলতে ব্যস্ত তরুণ-তরুণী

তিন দিনব্যাপী এ উৎসবের অংশ হিসেবে প্রতিদিন সকাল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পিঠা উৎসব চলবে। পাশাপাশি উৎসবস্থলের বটমূলে উন্মুক্তমঞ্চে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নাচ, গান, আবৃত্তিসহ নানা ধরনের সাংস্কৃতিক কার্যক্রম। এতে বিভিন্ন শিল্পীদের পাশাপাশি অংশ নিচ্ছেন সময়ের সম্ভাবনাময় ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা। রোববার (৩১ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় শেষ হবে এ উৎসব।

এ সময় সংগীতশিল্পী ও শিক্ষক কোহিনুর খানম, নারীনেত্রী ও হাটশহরিপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এম শম্পা মাহমুদ, আফরোজা আক্তার ডিউসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

রাজু আহমেদ/এমএসআর