জেলের জালে ইলিশের দেখা নেই

সাইফুল ইসলাম। পেশায় জেলে। তবে তিনি জেলে পেশা ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। পরিবারের ভরণপোষণে অন্য কাজ যে করবেন, তাও শিখেননি সাইফুল। তবে এবার জেলে পেশা ছেড়ে অন্য কাজ খুঁজবেন সাইফুল। দীর্ঘদিনের এই পেশা ছাড়ার কারণ, পদ্মা-মেঘনায় ইলিশ নেই। ভাগ্য পরিবর্তন করতে প্রতিদিন নতুন স্বপ্ন নিয়ে পাড়ি জমান পদ্মা-মেঘনায় কিন্তু ইলিশ না পেয়ে হতাশ হয়ে ফিরতে হয় বাড়িতে।

এদিকে, দেশের বিভিন্ন স্থানে আশানুরূপ ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। তবে চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনায় টানা ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার পরও নদীতে মাছ ধরতে নেমে ইলিশের দেখা পাচ্ছে না জেলেরা। ফলে জালে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ না পেয়ে হতাশ হচ্ছেন তারা। যে পরিমাণে মাছ উঠছে, তাতে নৌকার জ্বালানি খরচও উঠছে না। নিষেধাজ্ঞা শেষে হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই মাছ শিকারে নামেন জেলেরা। নদীতে মাছ ধরতে নেমে ইলিশের দেখা না পেয়ে হতাশায় দিন কাটাচ্ছেন তারা।

চাঁদপুর বড়স্টেশন মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, পুরো মাছঘাটে সেই আগের মত হাকডাক নেই। নেই ইলিশের পাহাড়। ফলে ব্যবসায়ীরা অলস সময় পার করছে। এছাড়া শ্রমিকরা মাছঘাটে কাজ না পেয়ে অন্য কাজে যুক্ত হচ্ছেন। চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা মাছঘাট, বহরিয়া ও পুরানবাজার রনাগোয়াল মাছঘাটেও একই দৃশ্য। আড়তগুলোতে ইলিশের আমদানি কম থাকায় বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে।

অলস সময় পার করছেন মাছ বিক্রেতারা

বড়স্টেশন মাছঘাটে জেলে ইব্রাহীম মুন্সি বলেন, মাছ ধরেই জীবন চলে। দিন দিন ইলিশ যেন হারিয়ে যাচ্ছে। পদ্মা-মেঘনায় আগের মত ইলিশ নেই। নিষেধাজ্ঞার পরও আমরা চাহিদানুযায়ী মাছ পাচ্ছি না। সামনে পাব কিনা তাও জানি না।

চাঁদপুর মাছঘাটের মৎস্য ব্যবসায়ী হুমায়ুন কবির ও ফারুক হোসেন গাজী বলেন, ইলিশ না থাকায় আমাদের ব্যস্ততা কম। ঘাটে ইলিশের পাশাপাশি বিভিন্ন মাছ রয়েছে। এ কারণে বেচাকেনা হচ্ছে। ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার পর তেমন কোনো মাছ ঘাটে আসেনি। এখন মাছঘাটে নতুন আর পুরনো ইলিশ মিলিয়ে বিক্রি হচ্ছে। মূলত ইলিশ কম থাকায় দামও চড়া।

মৎস্য আড়তে নেই কর্মচাঞ্চল্য

চাঁদপুর মৎস্য ইনস্টিটিউটের মূখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ইলিশ গবেষক ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, ইলিশ মাছ সাগর থেকে প্রধান নদ-নদীতে আসে ডিম ছাড়ার জন্য। এ বছর পুরো ২২ দিনে ৫১.২ ভাগ মা ইলিশ ডিম ছাড়ার সুযোগ পেয়েছে। এর মধ্যে যদি ১০ভাগ ইলিশ টিকে রাখা যায়, তাহলে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ আমরা পাব।

তিনি আরও বলেন,  নভেম্বর মাস থেকে তাপমাত্রা কমে গেছে। যার কারণে চাঁদপুর অঞ্চলে ইলিশ খুব কম পাওয়া যাচ্ছে। এতে হতাশ হওয়ার কিছু নেই। তাপমাত্রা বাড়তে শুরু করলে ইলিশ উৎপাদন বাড়বে। আমরা আশাবাদী যে হারে ইলিশ ডিম ছেড়েছে, তাদের সুরক্ষা দিতে পারলে কাঙ্ক্ষিত ইলিশ পাওয়া যাবে।

এসপি