পঞ্চগড়ে ঠান্ডা বাতাসের কারণে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে

দেশের উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা ও হিমালয়কন্যা পঞ্চগড়। এ জেলা হিমালয়ের অনেক নিকটে হওয়ায় উত্তর দিক থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাসের কারণে দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে তাপমাত্রা। ফলে কনকনে শীতের সঙ্গে বৃষ্টির মতো মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ ও ঘন কুয়াশার দাপটে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে এ জেলার হাজারো গরিব, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষ। আবার শীতবস্ত্র থেকে অনেকে বঞ্চিত হচ্ছেন বলে দাবি অনেক গরিব, অসহায় ও শীতার্তদের।

জেলার বিভিন্ন এলাকায় সরজমিন দেখা যায় শীতবস্ত্রের অভাবে গরিব অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষরা শীতবস্ত্রের অভাবে খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছে। তবু তাদের দিনের কাজ করতে গিয়ে সম্মুকীন হতে হচ্ছে অনেক সমস্যার।

আবহাওয়া অফিস জানায়, প্রতিবছর এ জেলায় অক্টোবরের শেষের দিকে ও নভেম্বরের প্রথম দিকে শীত নামলেও ডিসেম্বর, জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি―এ তিন মাসে শীত বেশি অনুভূত হয়। হিমালয়ের ঠান্ডা বাতাসের কারণে তাপমাত্রা ওঠানামা করছে। তবে জেলার সবচেয়ে বেশি শীত অনুভূত হয় সীমান্তবর্তী উপজেলা তেঁতুলিয়ায়।

জানা যায়, এ জেলায় তেমন কোনো ভারী শিল্পপ্রতিষ্ঠান না থাকায় এখানকার জনগোষ্ঠীর বড় অংশ পাথর ও চা-শ্রমিক। যারা দিন এনে দিন খান। শীতকাল এলে এসব মাঠেঘাটে খেটে খাওয়া ও  দিনমজুররা পড়েন চরম ভোগান্তিতে। ঘন কুয়াশা ও কনকনে হাড়কাঁপানো শীতে তারা তেমন কাজে যেতে পারেন না। তা ছাড়া এই কনকনে শীত নিবারণের জন্য নেই তাদের পর্যাপ্ত গরম কাপড়৷

এদিকে করোনার ধাক্কা কাটিয়ে কোনো রকম কাজ করতে পারলেও শীত দাঁড়িয়েছে বাধা হয়ে। গরম কাপড় কেনার সামর্থ্য না থাকায় অনেকে শীত নিবারণের জন্য জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ির আঙিনায় খড়কুটোয় আগুন জ্বালিয়ে তাপ পোহাচ্ছেন। বিশেষ করে এখানকার মানুষেরা সারা দিন মহানন্দা ও করতোয়া নদীর ঠান্ডা পানিতে পাথরের কাজ করেন এবং চা-শ্রমিকরা কনকনে শীতে বাগানে কাজ করেন।

শীত নিবারণের চেষ্টা

এসব মানুষের জন্য প্রতিবছর সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলো শীতবস্ত্র বিতরণ করলেও নিম্ন আয়ের এমানুষগুলোর দাবি তারা শীতকালে পায় না কোনো সহযোগিতা। বিভিন্ন জনপ্রতিনিধির কাছে একটি কম্বলের আকুতি জানালেও ফিরে আসতে হয় তাদের মলিন মুখে। ফলে শীতের কারণে মানবেতর জীবন যাপন করতে হয় তাদের।

জেলার পাঁচটি উপজেলার ৪৩টি ইউনিয়নের গরিব, অসহায় ও শীতার্ত মানুষদের জন্য জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে ২২ হাজার শীতবস্ত্র ইতিমধ্যে এসে পৌছেছে। তাছাড়া শীতবস্ত্র বিতরনের জন্য ৫ উপজেলার নির্বাহী৷ কর্মকর্তাদের প্রত্যেকে নিজ নিজ উপজেলার গরিব অসহায় ও নিম্ন আয়ের মানুষদের শীতবস্ত্র কেনার জন্য ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। তবে প্রতিবছর শীতার্ত মানুষদের জন্য দেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সামাজিক সংগঠনের উদ্যোগে শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়।

বেসরকারি তথ্যমতে, জেলার পাঁচটি উপজেলার প্রায় ১২ লাখ মানুষের বসবাস। আর ১২ লাখ মানুষের মধ্যে প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ গরিব অসহায় ও শীতার্ত রয়েছে। প্রতিবছর যে পরিমাণ শীতবস্ত্র বিতরণ করা হয়, তা লাখের ঘরে পৌঁছায় না। ফলে অনেক গরিব, অসহায় ও শীতার্ত মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে শীতবস্ত্রের অধিকার থেকে।

স্থানীয় বঞ্চিত, শীতার্ত ব্যক্তিরা বলেন, আমরা গরিব মানুষ, শীতকাল এলে আমরা কনকনে শীতের কারণে কাজে বের হতে পারি না। তা ছাড়া শীত নিবারণের জন্য আমাদের গরম কাপড়ও নাই। শীতকালে সবাই কম্বল পায় কিন্তু আমাদের মতো গরিবদের কেউ কম্বল দেয় না। চেয়ারম্যান ও মেম্বাদের কাছে গেলে তারা আশা দিয়ে রাখে। প্রতিবছর যে শীতবস্ত্র বা কম্বল আসে, এগুলো কোথায় যাচ্ছে। আমরা সরকারের কাছে অনুরোধ করছি আমাদের মতো গরিব অসহায় মানুষেদের জন্য ব্যবস্থা করবেন শীতবস্ত্রের নয়তো কনকনে শীতে আমরা মারা যাব।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা আইন সহায়তা কেন্দ্র (আসক) ফাউন্ডেশন পঞ্চগড় জেলা শাখার সভাপতি আব্দুস সাত্তার জানান, দেশের উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ে প্রচুর শীত। এ শীতের এলাকায় দরিদ্র মানুষ ঠিকমতো শীতবস্ত্র পাচ্ছে না। কেউ বেশি পাচ্ছে কেউ পাচ্ছে না। বিষয়গুলো প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিদের দৃষ্টি দেওয়া জরুরি৷ তাই সরকারের কাছে আবেদন, দরিদ্র এলাকায় গরিব মানুষের পাশে শীতবস্ত্র নিয়ে পাশে দাঁড়ানোর অনুরোধ জানান তিনি।

জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আনোয়ার সাদাত সম্রাট বলেন, আমাদের পঞ্চগড় জেলা একেবারেই দেশের শেষ সীমান্তে অবস্থিত। এ জেলায় প্রতিবছর শীতের প্রকোপ বেশি থাকে। ফলে জেলার পাথর, চা-শ্রমিকসহ বিভিন্ন মানুষের দুর্ভোগ বেড়ে যায়। তবে জেলা পরিষদ ও প্রশাসনের পক্ষ থেকে শীতবস্ত্র বিতরণের বিভিন্ন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে এবং বিতরণও করা হয়েছে। এসব গরিব অসহায় মানুষকে সহযোগিতা করার জন্য তিনি বিভিন্ন বিত্তবানদের এগিয়ে আসার অনুরোধ জানান।


মো. রনি মিয়াজী/এনএ