কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প- ফাইল ছবি

সেনা অভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) প্রধান নেতা অং সান সু চিসহ তার দলের শীর্ষ কয়েকজন নেতাকে গ্রেপ্তারের পর দেশটিতে এক বছরের জন্য জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছে। এতে বাংলাদেশে আশ্রিত প্রায় ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গার প্রত্যাবাসন নিয়ে নতুন সংকট তৈরি হলো বলে মনে করছেন রোহিঙ্গা নেতারা। 

তারা বলছেন, এই সেনা অভ্যুত্থান প্রত্যাবাসনে নতুন করে প্রভাব ফেলতে পারে। কারণ মিয়ানমার সেনারা বরাবরের মতোই রোহিঙ্গাবিরোধী।

আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস এন্ড হিউম্যান রাইটস’র ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের মুখে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলাম। প্রায় চার বছর শরণার্থী জীবন পার করছি। এরই মধ্যে প্রত্যাবাসনের আলোচনায় বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়েছে। কিন্তু দেশটিতে আবারও গণতান্ত্রিক অবস্থা হারিয়ে গেল। তাই আমরা মনে করি এ অভ্যুত্থান আমাদের মিয়ানমারে ফেরার আশার ওপর সংকট তৈরি করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, সেনা অভ্যুত্থানের পর যাকে ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট করা হয়েছে তিনি বড় রোহিঙ্গাবিরোধী। আমাদের ওপর নির্যাতনের বড় নির্দেশদাতা। তবে আগের সেই অপরাধ ঢাকতে যদি তিনি কিছু করেন, সেদিকে তাকিয়ে আছি।

আরেক রোহিঙ্গা নেতা দিল মোহাম্মদ। যিনি মিয়ানমারের পক্ষে দোভাষী হয়ে বাংলাদেশে আসতেন। তাকেও দেশ ছাড়া করেছিল মিয়ানমার। দিল মোহাম্মদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, সেনা অভ্যুত্থানের খবরে বড়ই চিন্তায় পড়ে গেলাম। আশা ছিল দেশে ফিরতে পারবো, কিন্তু সেই আশা হয়তো ভেঙে পড়ছে। এখন বিশ্ব জানতে পারবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী কতটা অমানবিক। নিন্দা জানানো ছাড়া এ মুহূর্তে কিছু ভাবছি না।

তবে এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি নন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনের কোনো কর্মকর্তা। কমিশনের চেয়ারম্যান শাহ নেওয়াজ হায়াতের মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

২০১৭ সালের ২৪ নভেম্বর দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকার পর রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটি নতুন সমঝোতা স্মারকে একমত হয় বাংলাদেশ ও মিয়ানমার। চুক্তিতে দুই মাসের মাথায় প্রত্যাবাসন শুরু হওয়ার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা রাখাইনে ফেরত যেতে পারেননি। বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের বিষয়ে তিন দফায় কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করে গেছে মিয়ানমার প্রতিনিধি দল। এ সময় রোহিঙ্গাদের সঙ্গে বৈঠকও করেন তারা। কিন্তু মিয়ানমার আগ্রহী না হওয়ায় কয়েক দফা তারিখ দিয়েও এখনও শুরু হয়নি প্রত্যাবাসন। 

সোমবার ভোরে মিয়ানমারের নেত্রী ও স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি এবং তার ক্ষমতাসীন দল ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসির (এনএলডি) কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাকে আকস্মিকভাবে গ্রেপ্তার করে সেনাবাহিনী। এ ঘটনায় দেশে সেনা অভ্যুত্থানের আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে। পরে অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সু চি সরকারকে হটানোর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে সেনাবাহিনী।

মুহিববুল্লাহ মুহিব/আরএআর