টাকার অভাবে নতুন ঘর তুলতে পারছেন না জহুরা বেগম। পাননি সরকারি ঘরও

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গীবাড়ী উপজেলার দিঘিরপাড় ইউনিয়নের পদ্মাপারের কান্দারবাড়ি গ্রামের সরকারি জমিতে দীর্ঘদিন ধরে ঘর উঠিয়ে পরিবারসহ বসবাস করে আসছেন জহুরা বেগম (৬০)। কিন্তু ছয় মাস আগে পদ্মার ভাঙনে তার বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। কোথাও যাওয়ার জায়গা না থাকায় নদীর পাশেই সরকারি এক টুকরো জমিতে কোনোভাবে ঠাঁই হয়েছে তার।

জহুরার ঘরটি ভাঙার পর খাম-খুঁটিগুলোও নষ্ট হয়ে যায়। টাকার অভাবে নতুন করে ঘর তুলতে পারছেন না তিনি। যে ভিটাটি ভেঙে গেছে নদীতে, সেখানেই ভাঙা ঘরটি কোনোরকম দাঁড় করিয়ে তারই ভেতর বসবাস করছেন তিনি।

সরেজমিন দেখা যায়, ভেঙে যাওয়া ঘরের দুটি চাল মাটির সঙ্গে খাড়া করে রেখে তার ভেতর জহুরাসহ তার পরিবার বসবাস করলেও চালের দুটি অংশের মধ্যে স্থানে রয়েছে বিশাল ফাঁকা। সেই ফাঁক দিয়ে ঠান্ডা বাতাস আর শিশিরের খেলা চলে রাতভর। তবে সকালে সূর্যের কিরণও প্রবেশ করে খুব তাড়াতাড়ি। নদীর পাশে খোলা আকাশের নিচে এই শীতে তাদের একমাত্র সম্বল মানুষের কাছ থেকে পাওয়া একটু পাতলা কম্বল, যা গায়ে মুড়ি দিলেও শীত নিবারণ করা কষ্টসাধ্য।

এক যুগেরও বেশি সময় ধরে পদ্মারপারের এই স্থানেই বসবাস করে আসছে তার পরিবার। এখানে থেকেই তিন মেয়ে ও দুই ছেলের বিয়ে দিয়েছেন। বড় ছেলেরা এখন আর তার খোঁজখবর নেন না। কয়েক বছর ধরে এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে একটি দোচালা টিনের ঘরে কোনো রকমে দিন পার করছিলেন। ঘরটিই ছিল তার একমাত্র সম্বল। কিন্তু সেটিও পদ্মার শাখা নদীর ভাঙনে বিলীন হয়ে গেছে।

দোচালা খোলামেলা ঘরে এভাবেই বসবাস করেন জহুরা

জহুরা বেগম বলেন, দুই বছর হয় তার স্বামী মারা গেছেন। স্বামীর মৃত্যুর পর ছোট ছেলে জহিরুল ইসলাম (১৫) সংসারের হাল ধরেছেন। দিনমজুরের কাজ করে কোনোমতে সংসার চালাতে পারলেও বসতঘরটি পুনরায় নির্মাণ করার সামর্থ্য নেই তাদের। ফলে বসতঘরটি ভেঙে নদীর পাড়েই রেখে দিয়েছেন। তিনি আরও জানান, সরকার ঘর দিচ্ছে, আমি শুনেছি কিন্তু কোথায় ঘর চাইতে হবে, আমি জানি না। আমার ঘর ভেঙে গেছে, এটা এলাকার ভোলা মেম্বারকে অনেক আগে জানাইছি।

এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট দিঘিরপাড় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আরিফুল ইসলাম হালদার ঢাকা পোস্টকে বলেন, এ ব্যাপারে আমাকে কেউ জানায়নি। আমি খোঁজ নিয়ে বিষয়টি দেখব।

টঙ্গীবাড়ী ভারপ্রাপ্ত প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) জাহাঙ্গীর আলম ঢাকা পোস্টকে বলেন, দ্বিতীয় পর্যায়ে ঘর বিতরণ এক মাসের মধ্যে শুরু হবে। আসা করি যাদের ঘর নাই, ইনশা আল্লাহ সবাই ঘর পাবেন।

ব.ম শামীম/এনএ