গাড়ির সব কাগজ ঠিক থাকার পরও পুলিশের চাঁদা দাবি, মহাসড়ক অবরোধ
রংপুর নগরের পশ্চিম বাবুখাঁ ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন আরকে রোড মহাসড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা
রংপুরে সড়ক-মহাসড়কে পুলিশি হয়রানি, চাঁদাবাজি ও ভয়ভীতি দেখানোর প্রতিবাদে মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন ট্রাক-ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যানের শ্রমিকেরা। সড়কে পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ না হলে বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন শ্রমিক সংগঠনের নেতারা।
সোমবার (০১ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টার দিকে রংপুর নগরের পশ্চিম বাবুখাঁ ট্রাক টার্মিনাল সংলগ্ন আরকে রোড মহাসড়কে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করেন। এতে সড়কের দুই পাশে প্রায় পাঁচ কিলোমিটারে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
বিজ্ঞাপন
বিক্ষুব্ধ শ্রমিকেরা জানান, ট্রাকের সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও সোমবার সকালে নগরীর দর্শনা এলাকায় তাজহাট থানার এক পুলিশ কর্মকর্তা ট্রাক আটক করে চাঁদা দাবি করেন। ট্রাকের চালক চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ ও ভয়ভীতি দেখিয়ে তার গাড়ির নামে মামলা দেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা।
শুধু তাই নয়, মেট্রোপলিটন পুলিশের ছয় থানা এলাকায় চলাচলকারী ট্রাক, ট্যাংকলরি ও কাভার্ডভ্যানের সব কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও মামলা খেতে হয় চালকদের। তবে পুলিশ কর্মকর্তাদের চাঁদা দিলে সব ঠিক। সড়কে চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত এসব পুলিশ সদস্যের কঠোর বিচার চান শ্রমিকেরা।
বিজ্ঞাপন
ট্রাকচালকেরা জানান, রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে তারাগঞ্জ পর্যন্ত রংপুর জেলা ও মেট্রোপলিটন পুলিশকে চাঁদা দিতে হয়। এই পর্যন্ত পথ পাড়ি দিতে প্রত্যেক ট্রাকচালককে এক হাজার টাকার মতো দিতে হয়। এর অবসান চান তারা। গাড়ির কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও রাস্তায় কাগজপত্র দেখার নামে তাদের কাছ থেকে চাঁদা নেয় পুলিশ। প্রতিনিয়ত পুলিশি হয়রানির শিকার হতে হয় তাদের। পুলিশের এসব কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে হবে। চাঁদাবাজি থেকে মুক্তি চান তারা।
সড়ক অবরোধের খবর পেয়ে রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-উত্তর জোন) ফরহাদ ইমরুল কায়েস, ট্রাফিক ইনচার্জ (টিআই-প্রশাসন) দেলোয়ার হোসেন, কোতোয়ালি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদ দ্রুত সময়ের মধ্যে ট্রাকশ্রমিকদের সঙ্গে আলোচনায় বসেন। আলোচনার পর অবরোধ প্রত্যাহার করে নেন শ্রমিকেরা। তিন ঘণ্টা পর দুপুর ২টার দিকে ওই সড়কে যান চলাচল শুরু হয়।
এ বিষয়ে রংপুর জেলা ট্রাক-ট্যাংকলরি-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মানিক বলেন, সোমবার সকালে নগরীর দর্শনা এলাকায় মেট্রোপলিটন তাজহাট থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আশরাফ আলী রংপুর-ড ১১-০-১৪২ নম্বরের একটি ট্রাক আটক করে কাগজপত্র দেখতে চান। কাগজপত্র ঠিক থাকার পরও চাঁদা দাবি করেন ওই পুলিশ কর্মকর্তা। এ নিয়ে ট্রাকচালক সজিবুর রহমান সজীবের সঙ্গে পুলিশ কর্মকর্তার কথা কাটাকাটি হয়। ট্রাকচালক চাঁদা দিতে অপারগতা জানালে অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করে তাকে ৫০০ টাকা জরিমানা করে মামলা দেন। এরই প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা।
জেলার বিভিন্ন থানার পুলিশ কর্মকর্তারা দীর্ঘদিন ধরে সড়কে চাঁদাবাজি করে আসছেন। বিভিন্ন সময়ে শ্রমিকদের মামলার ভয় দেখিয়ে চাঁদা নেন। এসব বিষয় পুলিশ কমিশনারকে লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। এরপরও পুলিশের অনেক কর্মকর্তা চালকদের কাছ থেকে মাসোয়ারা, চাঁদা নেওয়াসহ হয়রানি করে আসছেন। পুলিশের এসব কর্মকাণ্ডে আমরা অতিষ্ঠ। আজ বাধ্য হয়ে শ্রমিকেরা সড়ক অবরোধ করেছেন। এরপরও যদি এসব বন্ধ না হয়, আগামীতে বৃহত্তর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে।
শহিদুল ইসলাম মানিক, সাধারণ সম্পাদক, রংপুর জেলা ট্রাক-ট্যাংকলরি-কাভার্ডভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন
রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের সহকারী পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক-দক্ষিণ) ফরহাদ ইমরুল কায়েস বলেন, ট্রাক, ট্যাংলরি, কাভার্ডভ্যান ও ট্রাক্টর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইসলাম মানিকসহ ইউনিয়নের নেতাদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। ঘটনার তদন্ত করে দোষী পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছি তাদের। যাতে চালকেরা হয়রানির শিকার না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখার জন্য পুলিশ সদস্যদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
ফরহাদুজ্জামান ফারুক/এএম