পোড়া ঘরের পাশে বসে কাঁদছেন আছিয়া বেগম

আগুনে পুড়ে ঘরের শেষ চিহ্নটুকুও আর নেই। যেখানটায় ঘর ছিল তার এক কোণে পড়ে আছে আধা পোড়া চাল। পাশেই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে একশ ও পাঁচশ টাকার বেশ কয়েকটি পোড়া নোট। পোড়া ঘরের মধ্যে নির্বাক বসে আছেন যশোর কারাগারের অবসরপ্রাপ্ত নারী কারারক্ষী আছিয়া বেগম (৫৫)।

বৃহস্পতিবার (০৪ ফেব্রুয়ারি) রাতে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষীদের কোয়ার্টারে আগুন লেগে পুড়ে গেছে আছিয়াসহ ছয় কারারক্ষী পরিবারের জিনিসপত্র।

এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে কোয়ার্টারে থাকতেন আছিয়া বেগম। এখন কোথায় যাবেন দিশা খুঁজে পাচ্ছেন না তিনি। পোড়া ঘরের পাশে বসে কাঁদছেন আছিয়া বেগম।

শুক্রবার (০৫ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে যশোর কারাগারের কোয়ার্টার এলাকায় গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষীদের কোয়ার্টারে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। কাঁচা, আধা পাকা মিলিয়ে এখানে অর্ধশতাধিক ঘর ছিল। এর মধ্যে কারারক্ষীদের ছয় পরিবার ছিল। অন্যদের মতো তাদের জিনিসপত্রও পুড়ে যায়।

আমার স্বামী আমিনুর রহমান প্রধান কারারক্ষী ছিলেন। তিনি অবসরে গেছেন দেড় বছর আগে। কারাগারের পাশেই শেখহাটি বাবলাতলা এলাকায় বাড়ি করছি আমরা। বাড়ির জন্য আমিনুর রহমানের পেনশনের আট লাখ টাকা ঘরে রাখা ছিল। টাকা রাখার জন্য ছোট কাপড়ের বালিশ তৈরি করেছিলাম। আগুনে পুড়ে শেষ হয়ে গেল বালিশে রাখা আট লাখ টাকা।

আছিয়া বেগম, অবসরপ্রাপ্ত কারারক্ষী

বৃহস্পতিবার রাতে এশার নামাজ পড়ে ঘরে আগুন দেখে ছুটে বাইরে আসেন আছিয়া। পানি দেওয়ার জন্য সবাইকে ডেকেছেন, ছোটাছুটি করেছেন। পরে ঘরে উঁকি দিয়ে দেখেন দাউ দাউ করে সব জ্বলছে। টাকার বালিশসহ সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে তার।

কোয়ার্টারের ছয় কারারক্ষী পরিবারের সব কিছুই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে

সপ্তাহ খানেক পরই কারাগারের কোয়ার্টার থেকে তাদের চলে যাওয়ার কথা ছিল। দু’এক মাসের মধ্যেই তারা বাড়িতে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। বাড়ির জন্য ঘরের বালিশে আট লাখ টাকা রাখা ছিল আছিয়ার।

শুধু আছিয়া বেগমের নয়, কোয়ার্টারের আরও পাঁচ কারারক্ষী পরিবারের সব কিছুই আগুনে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে সব হারিয়ে এখন নিঃস্ব এসব পরিবারের সদস্যরা।

যশোর কারাগারের সুবেদার ইউসুফ বলেন, তিলে তিলে জমানো সব সঞ্চয় আর গৃহস্থালি পণ্য এক রাতের আগুনে পুড়ে গেছে। ঘর থেকে কিছুই বের করতে পারিনি। স্বর্ণালঙ্কার, আসবাবপত্র সব পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আধা ঘণ্টার মধ্যে সব পুড়ে গেছে। সবমিলিয়ে সবার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৮০ লাখ থেকে কোটি টাকার মতো।

শুক্রবার বিকেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সান্ত্বনা দিতে আসেন সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নুর জাহান ইসলাম নীরা। তিনি ঢাকা পোস্টকে বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসন ও আমার পক্ষ থেকে সহায়তা দেওয়া হবে।

পুড়ে যাওয়া ঘরের ভেতর জিনিসপত্র খুঁজছেন যশোর কারাগারের সুবেদার ইউসুফের স্ত্রী সামিয়া ইসলাম/ছবি: ঢাকা পোস্ট

যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার তুহিন কান্তি খান বলেন, যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের প্রধান ফটক পেরিয়ে বাঁ পাশে অবস্থিত কারারক্ষীদের স্টাফ কোয়ার্টার। বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে যশোর কেন্দ্রীয় কারাগারের কারারক্ষীদের কোয়ার্টারে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা প্রায় দেড় ঘণ্টা চেষ্টা চালানোর পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

তিনি বলেন, কারারক্ষী কোয়ার্টারে আগুন লেগে ছয় পরিবারের সবকিছু পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। তাদের তাৎক্ষণিক কিছু সহযোগিতা করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি পরিমাণ ও বিষয়টি তদন্তে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

যশোর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সহকারী পরিচালক আনোয়ারুল হক বলেন, আগুন লাগার খবরে ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের চারটি গাড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায়। দেড় ঘণ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। রাত ১১টার দিকে আমাদের কার্যক্রম শেষ হয়। আগুন লাগা সবগুলো বাড়ি আধা পাকা ও টিনের হওয়ায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে হিমশিম খেতে হয়েছে। অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত বলা যাচ্ছে না। দু’একদিনের মধ্যেই জানানো হবে।

যশোরের জেলা প্রশাসক (ডিসি) মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনো উদঘাটন হয়নি। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুণ নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে বৈদ্যুতিক শটসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ব্যারাকের ছয় টিনের ঘরের মালামাল পুড়ে গেছে। তবে মানুষের কোনো ক্ষতি হয়নি। আগুন লাগার খবরে কারাগারের বন্দিদের মধ্যে আতঙ্ক দেখা দিলেও ঘটনার সময়ে নিরাপদে ছিলেন তারা।

জাহিদ হাসান/এএম