‘কোনো কোনো দিন শুধু একটা কেক খাইয়া দিন পার করি।’ এমনটাই বলছিলেন সত্তর বছর বয়সী এক নারী। শেরপুর জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের ভেতরে ঢাকা পোস্টের কথা হয় আছিয়া নামের এই অসহায় বৃদ্ধার সঙ্গে।

একসময় তার সব ছিল। সুখের সংসার ছিল। স্বামী ছিলেন, সন্তান ছিলেন। কিন্তু সেই সুখ বেশি দিন টেকেনি। এখন তার কেউ নেই। স্বামী মুনছর মারা গেছেন অনেক দিন হলো। আছিয়া বলেন, বড় ছেলেটা হঠাৎ এক রাতে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা গেল। ছোট ছেলেটা নিরুদ্দেশ। বাইচ্চা আছে না মইরা গেছে, জানি না।

আছিয়া আরও বলেন, গতরে মেলা স্বাস্থ্য ছিল আমার। না খাইতে খাইতে মেলা হুগাই গেছি। এমনও দিন যায় সারাদিনে একটা কেক খাইয়া থাহি। মাঝেমইধ্যে ডিসি অফিসে আইসা পাতা হুরি। যদি কেউ টেহাপয়সা দেয়, তহন সেই টেহা দিয়া চাইল কিন্না আন্দাবাড়ি (রান্নাবাড়ি) করি। বাবা, এই বুড়া বয়সে আর কষ্ট করবার পাই না কান্নাজড়িত কণ্ঠে এমনটাই বলছিলেন আছিয়া।

সরেজমিন আছিয়ার (৭০) বাড়ি গিয়ে দেখা যায়, তিনি থাকেন শেরপুর পৌর শহরের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কলকল বাজারে। ঘর বলতে রয়েছে তার ছোট্ট একটি ঝুপড়ি। পাতা আর পলিথিনে মোড়ানো চাল।

আছিয়া বলেন, বর্ষায় তার কষ্টের শেষ থাকে না। ঘড়ের চালায় অনেক ফুটো, যা দিয়ে পানি পড়ে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে ভিজে রাত কাটে তার। সামনে বর্ষা আসছে, তাই এটা নিয়ে চিন্তার শেষ নেই আছিয়ার।

এই ঝুপড়িতেই দিন কাটে অসহায় আছিয়ার

আছিয়ার সঙ্গে কথা হয় প্রতিবেশী রহিম মিয়ার (৪৫) সঙ্গে। তিনি বলেন, ভাই দুঃখের কতা কী কমু। এই বেডিটার মেলা কষ্টে দিন যাইতাছে। কোন কোন দিন সারা দিন উপাস পারে। কোন কোন দিনে একবার খায়।

আছিয়ার আরেক প্রতিবেশী খোদেজা বেগম জানান, সমাজে কত বড়লোক আছে। কিন্তু আছিয়ার খবর কেউ নেয় না। যদি সরকারের পক্ষ থেকে কেউ সহযোগিতা করত, তাইলে অনেক উপকার অইত। তিনি আরও বলেন, এই ওয়ার্ডের মেম্বার আছিয়ার খোঁজও নেয় না। তার কাছে অনেকবার গেছি বয়স্ক ভাতা ও বিধবা ভাতা কার্ডের জন্য কিন্তু মেম্বার বাদশা করে দেয় নাই।

এ বিষয়ে ৯ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আমিনুল ইসলাম বাদশা ঢাকা পোস্টকে বলেন, আছিয়া তার এক আত্মীয়ের মাধ্যমে বয়স্ক ভাতা কার্ড করিয়ে নিয়েছে। সরকারিভাবে বয়স্ক ও বিধবা ভাতার মধ্যে যেকোনো একটি ব্যবহারের নিয়ম রয়েছে।

আছিয়ার বিষয়ে বিশিষ্ট সমাজসেবী রাজিয়া সামাদ ডালিয়া বলেন, আমরা আছিয়ার বিষয়ে ইতিমধ্যে অবগত হয়েছি। আমরা জানতে পেরেছি তার বয়স্ক ভাতা কার্ডের টাকার অর্ধেকটা আছিয়ার নাতি নেয়। যদি ঘটনা সত্য হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আমরা ব্যবস্থা নিয়ে বিষয়টা দেখব।

জাহিদুল খান সৌরভ/এনএ