উন্নয়নশীল দেশের শুল্ক সুবিধা নিতে শ্রম অধিকার বাস্তবায়ন জরুরি
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ (এলডিসি) থেকে বেরিয়ে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের দ্বারপ্রান্তে। তবে এ উত্তরণ মসৃণ ও ধারাবাহিক রাখতে শ্রম আইন ও অধিকার বিষয়ে অনেকগুলো চ্যালেঞ্জ রয়েছে। বিশেষ করে এলডিসি থেকে উত্তরণের ফলে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশ রপ্তানির ক্ষেত্রে যে অগ্রাধিকার বাজার সুবিধা পায়, তা সংকুচিত হবে। তাই বাড়তি শুল্ক দেয়া থেকে সুরক্ষা পেতে আগামীতে জিএসপি প্লাস সুবিধার জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত হতে হবে।
বুধবার (২০ জানুয়ারি) সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) আয়োজিত “বাংলাদেশের জন্য ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন-এর ইবিএ এবং জিএসপি+-এর সম্ভাবনা: শ্রম আইন ও অধিকার সম্পর্কিত চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা” শীর্ষক ভার্চুয়াল সংলাপে এমন মতামত দেন গবেষক, অর্থনীতিবিদ, বিশ্লেষক ও খাত সংশ্লিষ্টরা।
বিজ্ঞাপন
জিএসপি প্লাস সুবিধার জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তুত হতে হবে- উল্লেখ করে এতে আরও বলা হয়, এজন্য বাংলাদেশকে ২৭টি মানবাধিকার ও শ্রমমান সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক রীতি মানতে হবে। যার মধ্যে ১৫টি আইএলওর শ্রমমানের সাথে সম্পর্কিত। গত আট বছরে শোভন কাজ নিশ্চিতে বাংলাদেশে বিভিন্ন আইন ও বিধিমালা সংশোধন করেছে। এই উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।
সংলাপে কর্মক্ষেত্রে হয়রানি সম্পর্কিত বিষয়গুলোকে আইনি কাঠামোতে অন্তর্ভুক্ত করা, বাধ্যতামূলক শ্রম ইস্যু সঠিকভাবে মোকাবিলা, আইএলও বিশেষজ্ঞ কমিটির উদ্বেগের দিকে দৃষ্টি দেওয়া এবং সার্বিক তদারকি ও বাস্তবায়নের ওপর জোর দেন আলোচকরা।
বিজ্ঞাপন
সংলাপে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন জানান, বাংলাদেশের জিএসপি+ সুবিধা পেতে প্রাসঙ্গিক মানদণ্ডগুলোর পর্যবেক্ষণ ও প্রয়োগের ক্ষেত্রে আইনগত ত্রুটিগুলো পর্যালোচনা এবং শ্রমের মান সম্পর্কিত জিএসপি+ এর সমস্ত প্রয়োজনীয়তা পূরণ বিষয়ে যৌথভাবে সিপিডি ও নেটওয়ার্কস ম্যাটার এই গবেষণা পরিচালনা করেছে।
মূল প্রতিবেদনে সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের জিএসপি সুবিধা একটি বাণিজ্য কাঠামো প্রদান করে, যা পেতে ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান এবং সরকারকে মানবাধিকার ও শ্রম অধিকারের সুরক্ষা এবং প্রচারের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়ন সুনিশ্চিত করতে হয়। এলডিসি থেকে উত্তরণের পর জিএসপি+ সুবিধা পেতে শ্রম আইন নিয়ে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। এক্ষেত্রে শিশু শ্রম, ট্রেড ইউনিয়ন আইন, বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তিসহ শ্রম আইন ও অধিকারের সংস্কারের উন্নতির সুযোগ রয়েছে বলে তিনি মনে করেন।
ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিঙ্ক এবং আইএলও বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুওমো পটিয়াইনন সংলাপে উপস্থিত ছিলেন।
রাষ্ট্রদূত রেন্সজে তেরিঙ্ক বলেন, বাংলাদেশকে শ্রমিকবান্ধব একটি দেশ হিসেবে পরিচিত করার প্রয়োজন রয়েছে, যা শুধু জিএসপি+ সুবিধা পেতে নয় বরং শ্রমিকদের সামগ্রিক উন্নয়নে সাহায্য করবে।
বাংলাদেশ এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের (বিইএফ) প্রেসিডেন্ট কামরান টি রহমান বলেন, দেশে অপ্রতিষ্ঠানিক খাতে শ্রমিক আইন বাস্তবায়ন করা সব চেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
শ্রম অধিদপ্তর, শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের পরিচালক মো. বেল্লাল হোসেন শেখ জানান, শ্রম মন্ত্রণালয় একটি ডাটাবেজ তৈরির কাজ শেষ করেছে। এর মাধ্যমে ট্রেড ইউনিয়ন ও বিরোধ নিষ্পত্তি সম্পর্কিত তথ্য ও উপাত্ত দ্রুত সময়ের মধ্যে পাওয়া সম্ভব হবে।
সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজেকুজ্জামান রতন মনে করেন যে, দেশের উন্নতি ও শ্রমিকের উন্নয়নের স্বার্থে শ্রম আইন প্রয়োগ করা উচিৎ, শুধু বাইরের চাপে নয়। আইন সংস্কার দেশীয় প্রেক্ষাপটের ভিত্তিতে করার পরামর্শ দেন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি আরশাদ জামাল দীপু। তবে ট্রেড ইউনিয়ন সংঘের সাধারণ সম্পাদক চৌধুরী আশিকুল আলম মনে করেন, গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্পে বৈশ্বিক সংযুক্তি থাকায়, আইন দেশীয় ও আন্তর্জাতিক গোষ্ঠীর সাথে মিলেই তৈরি করতে হবে।
ক্রেতাদের আরও দায়িত্ববান ভূমিকা পালন করার পরামর্শ নিয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, বৈশ্বিক পর্যায়ের শ্রমিক আইন মানতে, ক্রেতাদের বৈশ্বিক পর্যায়ের দাম নিশ্চিত করতে হবে, যা বাংলাদেশের শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখবে।
সংলাপটি সঞ্চালনা করেন সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি শ্রমমান পরিস্থিতি সম্পর্কিত বিভিন্ন আইন, কাঠামোগত দূর্বলতা এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জগুলো উত্তোরণে বিশেষ মনোযোগ দেয়া দরকার বলে জানান তিনি।
এসআই/এনএফ