বিষাদের বছর ২০২০। করোনা মহামারি যেমন কেড়ে নিয়েছে অনেক আপনজন। তেমনি জীবন সংগ্রামকে নতুন পথ দেখিয়েছে। তবু চলে যাওয়া মানুষগুলোর বিদায় সবসময় হাহাকার সৃষ্টি করে। শোবিজ অঙ্গনেও গেছে সেই হাহাকার। চলতি বছর অনেক গুণী শিল্পীকে হারিয়েছে দেশ। যেই মানুষগুলো দীর্ঘ সময় তাদের কাজ দিয়ে বিনোদন দিয়েছে মানুষকে। জেনে নেয়া যাক এবছর শোবিজ অঙ্গন কাদের হারালো। 
এন্ড্রু কিশোর

ক্যান্সারের সঙ্গে দীর্ঘদিনের লড়াইয়ে হেরে যান এন্ডু কিশোর
প্ল্যাবেক সম্রাট এন্ড্রু কিশোর। যার দরাজ কণ্ঠের ভক্ত অগনিত মানুষ। শুধুমাত্র তার গান দিয়েই সিনেমা হিট হয়েছে অনেক। ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘কারে দেখাবো দেখাবো মনের দুঃখ গো’, ‘ডাক দিয়াছে দয়াল আমারে’র মত অসংখ্য জনপ্রিয় গান উঠেছে তার কণ্ঠে। ‘শ্রেষ্ঠ পুরুষ কণ্ঠশিল্পী’ বিভাগে ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। গান দিয়ে হাজারো মানুষের হৃদয় করেছেন তিনি। তবে হেরে গেছেন ক্যান্সারের কাছে। ব্লাড ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে দীর্ঘদিন ভুগেছেন তিনি। সিঙ্গাপুরে চিকিৎসা নিয়েছেন বহুদিন। ৬ জুলাই সিঙ্গাপুরের একটি হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেছেন বাংলার এই প্ল্যাবেক সম্রাট। 

আলাউদ্দিন আলী

দৃষ্টির সীমানার বাইরে সুর সম্রাট আলাউদ্দিন আলী
আলাউদ্দিন আলীর সুরে গান মানেই হিট। ‘একবার যদি কেউ ভালোবাসতো’, ‘যে ছিল দৃষ্টির সীমানায়’, ‘প্রথম বাংলাদেশ, আমার শেষ বাংলাদেশ’, ‘ভালোবাসা যতো বড়ো জীবন তত বড় নয়’ গানগুলোর মত প্রায় পাঁচ হাজার গান সৃষ্টি করেছেন তিনি। আলাউদ্দিন আলী দীর্ঘদিন ধরে ফুসফুস এবং রক্তের বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছিলেন। মাঝে অপারেশনের পর অনেকদিন পূর্ণ বিশ্রামে ছিলেন তিনি। আবারো শারীরিক অবস্থা খারাপ হলে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয় তাকে।  চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯ আগস্ট শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন এই সুর সম্রাট। 

সাদেক বাচ্চু

করোনা কেড়ে নেয় সাদেক বাচ্চুকে
বাংলা চলচ্চিত্রে খল নায়কদের নাম নিলে প্রথমদিকে রয়েছেন সাদেক বাচ্চু। অভিনেতা ছাড়াও তিনি একাধারে একজন নাট্যকার, নাট্যনির্দেশক। এছাড়াও তিনি ডাক বিভাগের অবসর কমকর্তা ছিলেন সাদেক বাচ্চু। ‘শ্রেষ্ঠ খলচরিত্রে অভিনেতা’ বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন তিনি। চলচ্চিত্রের প্রিয় এই মানুষটিকে কড়ে নেয় করোনা। ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর একটি হাসপাতালে মারা যান জনপ্রিয় অভিনেতা সাদেক বাচ্চু।

আলী যাকের

 

‘বড় চাচা’ আলী যাকেরের বিদায়
এদেশের নাট্যঙ্গনের কিংবদন্তী অভিনেতা আলী যাকের। টিভিতে তার জনপ্রিয়তা থাকলেও তিনি ছিলেন মঞ্চের মানুষ।  ১৯৭২ সালে আরণ্যক নাট্যদলের হয়ে অভিনয় জীবন শুরু করেন তার। বার্ধক্য, হৃদরোগ সমস্যায় ভুগছিলেন আলী যাকের। মৃত্যুর আগে করোনায় আক্রান্তও হয়েছিলেন তিনি। অবশেষে ৭৬ বছর বয়সে ২৭ নভেম্বর মারা যান এই গুণী অভিনেতা। 

কে এস ফিরোজ

নিউমোনিয়ায় মারা যান কে এস ফিরোজ
নাটক ও সিনেমার জনপ্রিয় মুখ। কে এস ফিরোজ। পাশাপাশি থিয়েটারের সঙ্গে ক্যারিয়ারের শুরু থেকে যুক্ত ছিলেন তিনি। ১৯৭৭ সালে সেনাবাহিনীর মেজর পদে চাকরি থেকে অব্যাহতি নেন তিনি। নাট্যদল ‘থিয়েটার’র সঙ্গে যুক্ত হয়ে অভিনয়ে কে এস ফিরোজের পথচলা শুরু। নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে এবছর হাসপাতালে ভর্তি হোন তিনি। মারা যান ৯ সেপ্টেম্বর। 

সেলিম আশরাফ

সুরস্রষ্টা সেলিম আশরাফ চলে গেছেন
দেশাত্মবোধক গান ‘যে মাটির বুকে ঘুমিয়ে আছে লক্ষ মুক্তি সেনা’। জনপ্রিয় এই গানের সুরকার সেলিম আশরাফ। দীর্ঘদিন শ্বাসকষ্ট, রক্ত ও কিডনি সমস্যায় ভুগছিলেন বহুদিন। সরকার থেকে তাকে চিকিৎসার জন্য সহযোগীতার করা হয়। এছাড়াও সাহায্য করেছেন অনেক সঙ্গীতশিল্পী। শেষ পর্যন্ত চলে যেতে হয় তাকে। ১ মার্চ চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যানা সেলিম আশরাফ।

আব্দুল কাদের

বছর শেষে ‘বদি’ খ্যাত আব্দুল কাদেরে বিদায়
হুমায়ূন আহমেদের রচনায় ‘কোথাও কেউ নেই’ নাটক দিয়ে ‘বদি’ নামে পরিচিত আব্দুল কাদের। বছরের শেষ তারকার বিদায়। প্যানক্রিসের (অগ্ন্যাশয়) ক্যানসার জটিল আকার ধারণ করলে আব্দুল কাদেরকে গত ৮ ডিসেম্বর ভারতের চেন্নাইয়ের ক্রিস্টিয়ান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর গত ২০ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় তাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। সেদিন বিমানবন্দর থেকেই তাকে এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ২৬ ডিসেম্বর মারা যান এই অভিনেতা।

এমআরএম