মীর সাব্বির, ছবি : সংগৃহীত

বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রচারণায় নেমেছেন জনপ্রিয় অভিনেতা ও নির্মাতা মীর সাব্বির। এতে চটেছেন বিএনপির নেতাকর্মীরা। এক সময় ছাত্রদলের প্রার্থী হয়ে বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদে বিপুল ব্যবধানে ‘নাট্য ও সাংস্কৃতিক সম্পাদক’ পদে নির্বাচিত এই তারকা আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থীর প্রচারণায় নামায় বিএনপির নেতাকর্মীদের অনেকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সাব্বিরের সমালোচনা করে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছেন।  
সোমবার (১৭ জানুয়ারি) জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন হাসান শাহীন তার ফেসবুকে লেখেন, "তুমিও নিজেকে ধরে রাখতে পারলে না সাব্বির? কৈশোর আর যৌবনের শুরুতে তুমি ছিলে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের এক আলোকিত মুখ। আমাদের হাত ধরেই ছাত্র রাজনীতির দুর্গমপথে তোমার অভিযাত্রা ছিল অপ্রতিরোধ্য! ছাত্রদল মনোনীত বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের ‘নাট্য ও সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক’ পদে তুমি নির্বাচিত হয়েছিলে বিপুল ভোটে।”
তিনি আরও লেখেন, "এই তো সেদিনও আমার সঙ্গে তুমি ছিলে মিছিল মিটিংয়ের অগ্রভাগে! শিল্পী হিসেবে জীবন শুরু হওয়ায় রাজনীতি থেকে বিদায় নিলে এবং এটাই স্বাভাবিক ছিল। কারণ একজন শিল্পীর কোনো দল নেই, জাত নেই। আমরা এমন সাব্বিরকেই দেখতে চেয়েছিলাম! কিন্ত দুর্ভাগ্য সেই জায়গা থেকে আমরা তোমায় হারিয়ে ফেললাম আজ! তবুও স্নেহ ভালোবাসা সবসময়।"

কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের সাবেক সদস্য রাজিবুল ইসলাম সোহেল লিখেন, ‘মীর সাব্বির সাবেক ছাত্রদল নেতা। ঐতিহ্যবাহী মীর পরিবারের ৯০ ভাগ লোক জাতীয়তাবাদী আদর্শ ধারণ করে। তিনি যেভাবে গতকাল থেকে বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন ও জনসভা করছেন তাতে শুধু অবাক না বিস্মিত হয়েছি। অভিনেতা সে শুধু অভিনেতাই।’
জেলা যুবদলের দপ্তর সম্পাদক হুমায়ূন কবীর লিখেছেন, ‘আমি হতবাক ও বিস্মিত। একজন মীর সাব্বির। সাবেক ছাত্রদল নেতা। বরগুনা সরকারি কলেজ ছাত্র সংসদ নির্বাচনে ছাত্রদল মনোনীত প্যানেল থেকে ‘নাট্য ও সংস্কৃতি’ বিষয়ক সম্পাদক পদে বিপুল ভোটে নির্বাচিত হয়েছিল। তিনি যেভাবে গতকাল থেকে বরগুনা পৌরসভা নির্বাচনে নৌকার হয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন ও জনসভা করছেন তাতে শুধু অবাক না বিস্মিত হয়েছি। অভিনেতা সে শুধু অভিনেতাই। আজ আবার প্রমাণ করলেন।’

আওয়ামী লীগের প্রচারণায় মীর সাব্বির, ছবি : সংগৃহীত 

এ বিষয়ে বরগুনা জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ূন হাসান শাহীন বলেন, ‘আমাদের হাত ধরেই বিএনপির রাজনীতিতে এসেছিলেন মীর সাব্বির। শিল্পীর কোনো দল-মত থাকতে পারে না। তাই শিল্পী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পর আমরাই তাঁকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দিয়েছিলাম। সেই সাব্বির যখন নিজের আদর্শ আর পারিবারিক ঐতিহ্যকে বিসর্জন দিয়ে নৌকার প্রচারণায় নামে, সেটা দেখা আমাদের জন্য অনেক কষ্টের, অনেক বেদনার।’ 

এ বিষয়ে মীর সাব্বির বলেন, ‘আমি নৌকার পক্ষে কাজ করছি। স্বাধীনতার পক্ষে এবং অসাস্প্রদায়িক রাজনীতির বিরুদ্ধে আমরা সংস্কৃতিকর্মীরা অনেক দিন ধরে কাজ করছি। আমার গ্রামের বাড়ি যেহেতু বরগুনা তাই এখন বরগুনায় কাজ করছি। যারা অপপ্রচার চালাচ্ছে তারা নিজেদের স্বার্থেই চালাচ্ছে। স্বার্থে আঘাত লাগায় তারা এসব করছে।’ 

আপনি এক সময় ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। এই নিয়েও তারা কথা বলছে। এ কথার জবাব মীর সাব্বির দেন এভাবে, ‘কিশোর বয়সে যখন ইন্টারমিডিয়েট ফাস্ট ইয়ারে পড়ি তখন আমার অজান্তে অনুমতি না নিয়ে তারা আমার নামটি দিয়ে দেয়। আমি তখন কলেজে সাংস্কৃতিক চ্যাম্পিয়ন ছিলাম। পরবর্তী সেই নির্বাচনে আমি বিজয়ী হয়েছি, এটা সত্য। তার মানে এই নয় যে আমি সাংঘঠনিক কোনো কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম কিংবা তাদের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে ছিলাম।’ 

মীর সাব্বির আরও বলেন, ‘তারা বলছে আমাদের পরিবারের সবাই লোকজন বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল, এই কথাটাও পুরো সত্য নয়। কারণ আমাদের পরিবার ঐতিহ্যবাহী পরিবার, এই পরিবারের অসংখ্য মানুষ আছেন যারা আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গেও জড়িত। সুতরাং কিশোর বয়সের একজন মানুষের চিন্তাকে এখন নানাভাবে অপপ্রচার করা হচ্ছে। কারণ আমি এখন নৌকার পক্ষে কাজ করছি।’

আরআইজে