ধর্ষণ এবং নারীদের অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনার প্রতিবাদে কাঠমান্ডুতে বিক্ষোভ

পরিবার এবং স্থানীয় সরকারি কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া নারীদের বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধ করে নেপালে প্রস্তাবিত একটি আইন বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করেছেন দেশটির সাধারণ জনগণ। তারা বিতর্কিত এই আইনকে ‌‘অসাংবিধানিক এবং হাস্যকর’ বলে মন্তব্য করেছেন।

গত সপ্তাহে নেপালের অভিবাসন বিভাগ নারী পাচার ঠেকানোর চেষ্টায় বিতর্কিত এই আইনের প্রস্তাব করে। নতুন এই আইনের ফলে দেশটির ৪০ বছরের নিচের কোনও নারী প্রথমবারের মতো আফ্রিকা অথবা মধ্যপ্রাচ্যে যেতে চাইলে তাকে স্থানীয় সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তার কাছে অনুমতির জন্য আবেদন করতে হবে।

সমালোচনা শুরু হওয়ার পর দেশটির অভিবাসন বিভাগ বলছে, আইনটি শুধুমাত্র ঝুঁকিপূর্ণ নারীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে এবং এটি এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শুক্রবার শত শত নেপালী নারী প্রস্তাবিত এই আইনের বিরোধিতায় রাজধানী কাঠমান্ডুর প্রাণকেন্দ্র মৈতিগর মানডালায় জড়ো হয়ে বিক্ষোভ-সমাবেশ করেন। ধর্ষণ এবং নারীদের অন্যান্য মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা তুলে ধরতে ‘উইমেন মার্চ’র অংশ হিসেবে তারা এই বিক্ষোভ করেন।

দেশটির নারী অধিকারবিষয়ক সংগঠন উইমেন লিড নেপালের নির্বাহী পরিচালক হিমা বিসতা বিক্ষোভকারীদের উদ্দেশে বলেন, এই আইনের প্রক্রিয়ার পেছনের চিন্তা-ভাবনা অত্যন্ত বিপজ্জনক।

তিনি বলেন, মূল বিষয় হচ্ছে— প্রাপ্তবয়স্ক তরুণী এবং নারীদের চলাফেরা সীমিত করতে একজন নীতিনির্ধারক এই আইনের খসড়া করছেন; যা আমাদের সমাজে পুরুষতান্ত্রিক মানসিকতা কতটা গভীরে সেটি বুঝিয়ে দিচ্ছে।

নেপালের হিউম্যান রাইটস কমিশনের পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৮ সালে দেশটির ১৫ হাজার নারী এবং ৫ হাজার তরুণীসহ প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ পাচার হয়েছেন। সামাজিক আন্দোলন কর্মীরা বলেছেন, শুধুমাত্র নারীরাই পাচার হচ্ছেন না। যে কারণে কোনও ধরনের আইনি পরিবর্তন আনার ক্ষেত্রে অভিবাসন কর্মকর্তাদের নারী এবং পুরুষের বিষয়টি বিবেচনা করা উচিত।

গত কয়েক দশকে দেশটিতে নারীদের বিদেশ ভ্রমণ নিষিদ্ধে একাধিক উদ্যোগ নেওয়া হয়। তবে নারীরা এমন প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার হয়েছেন। সর্বশেষ ২০১৭ সালে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে নেপালি নাগরিকদের গৃহকর্মীর কাজ নিষিদ্ধ করে কাঠমান্ডু। যদিও সমালোচকরা বলছেন, এই নিষেধাজ্ঞার লক্ষ্য ছিলেন নারীরা। 

মানবাধিকার কর্মীদের দীর্ঘদিনের অভিযোগ, নারীদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞায় কাজ হয় না। বরং এতে তাদের অধিকারের লঙ্ঘন ঘটে।

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের দক্ষিণ এশিয়া পরিচালক মীনাক্ষী গাঙ্গুলি বলেন, নেপালের সাম্প্রতিক প্রস্তাবিত আইনের মাধ্যমে নারীদের অনিবন্ধিত কর্মসংস্থান, পাচার এবং নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে।

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

এসএস