পরমাণু স্থাপনায় পরিদর্শনের সুযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করল ইরান
সম্পূরক প্রোটোকলের আওতায় আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) পরিদর্শক দলের জন্য পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দিয়েছে ইরান। নিষেধাজ্ঞা উঠিয়ে নিতে ইউরোপীয় বিভিন্ন দেশ এবং বাইডেন প্রশাসনের ওপর চাপ সৃষ্টি করতেই মঙ্গলবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে এই সুযোগ বন্ধ করে দেশটি।
এর আগে সম্পূরক প্রোটোকলের আওতায় আইএইএ’র পরিদর্শকরা যেকোনো মুহূর্তে ইরানের পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শন করতে পারতেন। তবে ইরানের এই সিদ্ধান্তকে ‘বিপজ্জনক পদক্ষেপ’ বলে অভিহিত করেছে পরাশক্তি দেশগুলো। অবশ্য এটি আকস্মিক কোনো সিদ্ধান্ত নয়; কারণ ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনবিষয়ক সম্পূরক প্রোটোকল স্থগিত করা হবে বলে আগেই ঘোষণা দিয়েছিল দেশটি।
বিজ্ঞাপন
বার্তাসংস্থা এপি জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি ১৬ তারিখ পর্যন্ত ইরান ২০ শতাংশ হারে ১৭ দশমিক ৬ কিলোগ্রাম (৩৮ দশমিক ৮ পাউন্ড) ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করেছে বলে আইএইএ তার সদস্য দেশগুলোকে একটি গোপন রিপোর্টে জানানোর পরই পরমাণু স্থপনায় সংস্থাটির বিশেষজ্ঞদের পরিদর্শন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেয় তেহরান।
তবে ইরানের দাবি, গত ডিসেম্বর মাসে ইরানের জাতীয় সংসদ একটি বিল পাস করে; যেখানে ২১ ফেব্রুয়ারির মধ্যে ইরানের ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা না হলে ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের ক্ষেত্রে সম্পূরক প্রোটোকল বাস্তবায়ন বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। আর এ কারণে ইরানের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার না হওয়ায় দেশটির পার্লামেন্টে পাস হওয়া আইনটি কার্যকর করেছে তারা।
বিজ্ঞাপন
এদিকে আইএইএ পরিদর্শক দলের জন্য পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ। সাংবাদিকদের তিনি বলেন, মঙ্গলবার থেকে সম্পূরক প্রোটোকল বাস্তবায়ন বন্ধ করেছে তেহরান। তবে পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ বা এনপিটির সুরক্ষার ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে তার দেশ।
২০১৫ সালে ইরানের সঙ্গে পাঁচ বিশ্ব পরাশক্তির মধ্যে পরমাণু চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ‘ত্রুটিপূর্ণ’, ‘একপেশে’, ‘এর কোনো ভবিষ্যৎ নেই’ অভিযোগ তুলে চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে বের করে নিয়ে যান। যুক্তরাষ্ট্রের বেরিয়ে যাওয়ার পর চুক্তির শর্তগুলো মেনে চলার ব্যাপারে ইরানও উদাসীন হয়ে পড়ে।
এরপর তেহরানের ওপর আবারও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। তবে চীন, রাশিয়া, ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানি সমঝোতায় টিকে থাকলেও চুক্তি মেনে চলার ক্ষেত্রে এসব দেশের ঢিলেঢালা মনোভাব ছিল লক্ষ্য করার মতো।
তবে ট্রাম্প প্রশাসনের বিদায় এবং প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের দায়িত্ব নেওয়ার পর পরমাণু চুক্তিতে আবারও ফেরার ব্যাপারে আগ্রহী হয় ওয়াশিংটন ও তেহরান। তবে চুক্তিতে কে আগে ফিরবে, তা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক মতবিরোধ চলছে।
তেহরান বলছে, ইরান পরমাণু চুক্তিতে ফিরতে চাই; তবে এর আগে দেশটির ওপর থেকে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের আরোপিত সকল নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে। অন্যদিকে, ওয়াশিংটনের দাবি, ইরানকেই এই চুক্তিতে ফেরার বিষয়ে আগে ঘোষণা দিতে হবে।
আর এই কূটনৈতিক অচলাবস্থার মধ্যেই এবার আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থার পরিদর্শক দলের জন্য পরমাণু স্থাপনা পরিদর্শনের সুযোগ আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ করে দিলো ইরান। তবে এর কারণে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের পরাশক্তি দেশগুলো কতোটা চাপে পড়বে বা আদেও চাপ অনুভব করবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে।
সূত্র: এপি
টিএম