করোনার নতুন ধরন নিয়ে বিশ্বজুড়ে সতর্কতা
যুক্তরাজ্যে শনাক্ত নতুন ধরনের করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সতর্ক হয়ে উঠছে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ। জারি করা হচ্ছে ভ্রমণ বিষয়ক নিষেধাজ্ঞা। এ ছাড়া বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাও যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ‘নিবিড় যোগাযোগ’ রাখছে।
ইতোমধ্যে ৪০টির বেশি দেশ যুক্তরাজ্যে ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় সাধারণ একটি নীতি প্রণয়নে সদস্য বিভিন্ন দেশের সঙ্গে আলোচনা করছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
বিজ্ঞাপন
ডেনমার্কে করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হওয়ার পর দেশটির সঙ্গে বিমান যোগাযোগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে প্রতিবেশী সুইডেন। সৌদি আরবও সব ধরনের আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে।
যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের বিষয়ে বিধিনিষেধ আরোপ করা দেশের তালিকা বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধে সতর্কতা অবশ্যই কাম্য, তবে আতঙ্কিত হওয়ার মতো পরিস্থিতি এখনো আসেনি।
বিজ্ঞাপন
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বৈশ্বিক জরুরি পরিস্থিতি বিভাগের প্রধান মাইক রায়ান এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘চলমান মহামারি পরিস্থিতিতে করোনার নতুন এই ধরনটির আগমন— বিজ্ঞানের ভাষায় যাকে অভিযোজন বা মিউটেশন বলা হয়— চলমান মহামারি পরিস্থিতিতে এটা খুব স্বাভাবিক একটা ব্যাপার এবং এই ধরনটি নিয়ন্ত্রণের বাইরে নয়’।
এই মন্তব্যের মাধ্যমে কার্যত ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানককের বিপরীতে অবস্থান স্পষ্ট করলেন বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অন্যতম শীর্ষ এই কর্মকর্তা। রোববার ম্যাট হ্যানকক বলেছিলেন, পরিস্থিতি এখন নিয়ন্ত্রণের বাইরে।
এদিকে দক্ষিণ আফ্রিকাতেও করোনাভাইরাসের নতুন ধরন শনাক্ত হওয়ায় দেশটিতে ভ্রমণ বিষয়ক বিধিনিষেধ আরোপ করেছে কয়েকটি দেশ।
বিবিসির মঙ্গলবারের অনলাইন প্রতিবেদন অনুযায়ী দক্ষিণ আফ্রিকায় মহামারি করোনাভাইরাসের নতুন এই ধরনটি শনাক্ত হওয়ার সঙ্গে যুক্তরাজ্যের কোনো সম্পর্ক নেই। অর্থাৎ যুক্তরাজ্য থেকে এটি সেখানে ছড়ায়নি।
করোনাভাইরাসের প্রচলিত ধরনটির চেয়ে নতুনটি অনেক দ্রুতগতিতে (৭০ শতাংশ বেশি সংক্রামক) ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হলেও এটি যে প্রচলিতটির বেশি মারাত্মক— তার কোনো প্রমাণ এখনো পাওয়া যায়নি।
ইউরোপ মহাদেশের বেশিরভাগ দেশ যুক্তরাজ্যে ভ্রমণের বিষয়ে যে বিধিনিষেধ জারি করছে, নতুন ধরন বা স্ট্রেইনটির ছড়িয়ে পড়া রোধ করার পদক্ষেপ হিসেবেই তা বিবেচনা করা হচ্ছে।
ফ্রান্সের পরিবহনমন্ত্রী ক্লেমেন্থ বিউনে বলেছেন, যুক্তরাজ্যে ফ্রান্সের ভ্রমণকারী ও যানবাহন প্রবেশের ক্ষেত্রে ইতোমধ্যে যে ৪৮ ঘন্টার নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে তার পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে মঙ্গলবার জনানো হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি উত্তরণে ইউরোপীয় ইউনিয়নভূক্ত ২৭টি দেশের মধ্যে পারস্পরিক সহযোগিতার ভিত্তিত কোনো উপায় বের করা যায় কিনা, তা নিয়ে ইইউ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলোচনা করছেন ব্রাসেলসের কর্মকর্তারা।
পরিস্থিতি মোকাবিলায় কী কী পদক্ষেপ নেওয়া হবে তা নির্ধারণে মঙ্গলবার পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি ইইউ নেতৃবৃন্দ। তবে তারা এ বিষয়ে একমত হয়েছেন যে, ইইউভূক্ত বিভিন্ন দেশে যুক্তরাজ্যের যে সব ভ্রমণকারী রয়েছেন, নিজ দেশে ফেরার পূর্বে অবশ্যই তাদের করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট নিতে হবে।
অবশ্য গত কয়েকদিনের মধ্যে কিছু ইতিবাচক ঘটনাও ঘটেছে। ইইউ’র ঔষধ নিয়ন্ত্রক সংস্থা স্থানীয় সময় সোমবার ফাইজার-বায়োএনটেকের টিকার অনুমোদন দিয়েছে। ফলে ইউরোপের দেশগুলোতে বসবাসকারী মানুষদের হাতের নাগালে এই টিকা এসে যাচ্ছে আগামী রোববারের মধ্যে।
এসএমডব্লিউ/এএস