ভারতে গত দুই মাস আগে পাস হওয়া তিনটি কৃষি আইন বাতিলের দাবিতে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দ বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন দেশটির প্রধান বিরোধীদল কংগ্রেসের জ্যেষ্ঠ নেতা রাহুল গান্ধী। চলমান কৃষক আন্দোলনের প্রেক্ষিতে রাষ্ট্রপতির কাছে দেয়া এই স্মারকলিপির সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে দুই কোটি স্বাক্ষর।

এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে দেশটির সংসদে বিশেষ অধিবেশনের আহ্বানও জানানো হয়েছে স্বারকলিপিতে। বুধবার ভারতের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ লোকসভায় কংগ্রেসদলীয় এমপি কে সুরেশ বার্তাসংস্থা এএনআইকে বলেন, ‘এর আগেও একবার একই দাবিতে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রপতি বরাবর স্মারকলিপি দেয়া হয়েছিল; তবে তাতে কাজ হয়নি। এ কারণে এবার দাবির পক্ষে দুই কোটি স্বাক্ষরসহ স্মারকলিপি প্রদান করা হবে’।

বৃহস্পতিবার স্থানীয় সময় বেলা পৌনে ১১টার দিকে লোকসভায় কংগ্রেসের একাধিক এমপি এবং দলের কয়েকজন জ্যেষ্ঠ নেতাসহ দিল্লির বিজয় চক থেকে রাষ্ট্রপতি ভবনের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন রাহুল গান্ধী। দুপুর ১২টার দিকে রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে স্মারক ও স্বাক্ষর হস্তান্তর করেন তিনি। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন কংগ্রেস নেতা গোলাম নবী আজাদ এবং অধীর রঞ্জন চৌধুরী।

রাষ্ট্রপতি ভবনে সব ধরনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে রাহুল গান্ধী বলেন, ‘আমি মাননীয় রাষ্ট্রপতিকে বলেছি যে, এই কৃষি আইনগুলো কৃষকবিরোধী। ইতোমধ্যে দেশবাসী দেখেছেন যে, কীভাবে কৃষকরা আইন বাতিলের দাবিতে আন্দোলন করছেন’।

‘আমি প্রধানমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে বলতে চাই- যতদিন পর্যন্ত এই আইনগুলো বাতিল না হচ্ছে; ততদিন কৃষকরা ঘরে ফিরবেন না। সরকারের উচিত হবে কৃষক এবং শ্রমিকের পক্ষে যেসব বিরোধী দল রয়েছে, তাদের আহ্বান করে পার্লামেন্টে একটি যৌথ অধিবেশন ডাকা; যেখানে এই আইনগুলো প্রত্যাহারে করণীয় প্রসঙ্গে সিদ্ধান্ত হবে’। 

‘কিন্তু এই সরকারের অবস্থান এমন যে কৃষক, শ্রমিক কিংবা মোহন ভগবতও তাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেই তাকে সন্ত্রাসী আখ্যা দেয়া হবে’। 

কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী

গত ২৭ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষরের মাধ্যমে পাস হওয়া তিনটি কৃষি আইনের বিষয়ে দেশটির কৃষক সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই তিনটি আইনের একটির অধীনে সরকার ন্যায্যমূল্যে সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে ফসল কেনা বন্ধ করে দিতে পারবে। যার ফলে পাইকারি বাজারে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।

আইন বাতিলের দাবিতে গত নভেম্বর থেকে ভারতের পাঞ্জাব, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, রাজস্থানসহ কয়েকটি প্রদেশের লাখ লাখ কৃষক জড়ো হতে থাকেন দিল্লিতে। রাজধানীর সঙ্গে অন্যান্য প্রদেশ ও প্রাদেশিক শহরগুলোর সংযোগকারী মহাসড়কগুলোতে প্রতিবাদী অবস্থান নেন তারা।

অবশ্য দেশটির ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বিজেপি বলছে, বিদ্যমান আইনগুলোতে যদি কোনও সংস্কার আনতে হয়, সেক্ষেত্রে আন্দোলনরত কৃষকদের সঙ্গে ‘খোলা মনে’ আলোচনায় বসতে প্রস্তুত রয়েছে সরকার। জবাবে দেশটির কৃষক নেতারা বলেছেন, তারাও ‘খোলা মনে’ আলোচনায় বসতে প্রস্তুত আছেন। কিন্তু সবার আগে ওই তিনটি আইন বাতিল করতে হবে।

সূত্র: এনডিটিভি, ইন্ডিয়া টিভি।

এসএমডব্লিউ/এসএস