যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদনের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে এখন ব্রিটেনের সমুদ্রসীমায় মাছ ধরা নিয়ে দর কষাকষি চলছে বলে জানিয়েছেন আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইমন কোভেনি।

ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং ইইউয়ের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিক বক্তব্য না এলেও বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) আয়ারল্যান্ডের আধা-সরকারি রেডিও স্টেশন আরটিইকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে কোভেনি বলেন, ‘সংলাপ প্রায় শেষ পর্যায়ে। ছোট একটি প্রতিবন্ধকতা এখনও রয়ে গেছে। সেটি হলো মাছ ধরার অধিকার। এ বিষয়টির মীমাংসা হলেই বাণিজ্যচুক্তি সম্পাদনে আর কোনও বাধা থাকবে না’।

প্রত্যেক বছর ব্রিটেনের জলসীমায় ইইউয়ের মাছধরা জলযানগুলো কী পরিমাণ সোল, স্যান্ড ঈল এবং হেরিং জাতীয় মাছ ধরতে পারবে তা নিয়ে এখন দুই পক্ষের মধ্যে দর কষাকষি চলছে।

আয়ারল্যান্ডের পররাষ্ট্র মন্ত্রী সাইমন কোভেনি

’উভয়পক্ষ একটি মীমাংসার জায়গায় পৌঁছালেই আগামী ক্রিসমাসের সন্ধ্যার মধ্যে প্রতীক্ষিত সেই চুক্তি সম্পন্ন হবে এবং আমি আপনাদের বলতে পারি যে, এটা হবে আমাদের জন্য বিশাল ভারমুক্তির ব্যাপার’।

সংলাপের শুরু থেকেই ব্রিটেনের জলসীমায় মাছ ধরার বিষয়ে গুরুত্ব দিয়ে আসছে ইইউ। যুক্তরাজ্যের জলসীমায় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলোর নৌযানের প্রবেশাধিকার না মিললে যুক্তরাজ্যের মৎস্যজীবীরা তাদের পণ্য বিক্রি করতে ইইউয়ের বাজারে প্রবেশের ক্ষেত্রে যে বিশেষ সুবিধা ভোগ করেন; তা বাতিল করা হবে বলে জানিয়ে দিয়েছিল ইইউ।

জবাবে যুক্তরাজ্য বলেছে, জলসীমায় প্রবেশাধিকার বা বাণিজ্যনীতির বিষয়ে যুক্তরাজ্যের যে অবস্থান তা দেশটির সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং সমুন্নত রাখার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চুক্তিতে যদি শুল্ক ও কোটামুক্ত বাণিজ্য গুরুত্ব পায়, সেক্ষেত্রে ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে ব্রিটেনের যে বাৎসরিক ৯০০ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য রয়েছে, তা রক্ষা করা সম্ভব হবে। পাশাপাশি তা সহায়ক হবে যুক্তরাজ্যের অন্তর্ভুক্ত উত্তর আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে ব্রিটেনের শান্তিপ্রক্রিয়াকে এগিয়ে নেওয়ার ক্ষেত্রেও।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী জো বাইডেন ইতোমধ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনকে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, ১৯৯৮ সালে উত্তর আয়ার‌ল্যান্ডের সঙ্গে ব্রিটেনের সম্পাদিত গুড ফ্রাইডে শান্তি চুক্তিকে তিনি গুরুত্ব দেন এবং এর যথাযথ প্রতিফলন দেখতে আগ্রহী।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) নামে যে ঐক্যমঞ্চ স্থাপিত হয়েছিল; ৭০ বছর পর ২০১৬ সালে সেই মঞ্চ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে যাওয়ায় কেঁপে উঠেছিল পুরো ইউরোপ।

তবে ব্রেক্সিট বিচ্ছেদ মেনে নিয়ে সামনে এগিয়ে যেতে ইইউ যে অনেকটাই প্রস্তুত তার আঁচ পাওয়া গেছে ব্রেক্সিট পরবর্তী বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে ইইউর চলমান সংলাপের সর্বশেষ পরিস্থিতিতে।

ইউরোপের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি চুক্তি সম্পাদন হয়, সেক্ষেত্রে পূর্বের তুলনায় ইউরোপের বাজারে ইংল্যান্ডের পণ্য, যানবাহন, জ্বালানির শুল্কমুক্ত প্রবেশাধিকার অনেকটাই কাটছাঁট করবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন। এর পাশাপাশি সঙ্কুচিত হবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন আদালতে ইংল্যান্ডের আইন এবং বিচারবিষয়ক অংশগ্রহণও। 

সূত্র: রয়টার্স।

এসএমডব্লিউ/এসএস