রাশিয়ার ‘কুখ্যাত ডাবল এজেন্ট’ জর্জ ব্লেক মারা গেছেন
জর্জ ব্লেক
সাবেক ব্রিটিশ গোয়েন্দা ও রাশিয়ার গুপ্তচর জর্জ ব্লেক ৯৮ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেছেন। স্নায়ুযুদ্ধের সময় তিনি তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের ‘ডাবল এজেন্ট’ হিসেবে কাজ করেছেন।
রাশিয়ান গোয়েন্দা সংস্থা এসভিআর-এর বরাতে বার্তা সংস্থা আরআইএ ব্লেকের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিজ্ঞাপন
জর্জ ব্লেক সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা সংস্থা এমআইসিক্স-এর হয়ে গোপনে ব্রিটিশ গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতেন। ১৯৫০ এর দশকে পূর্ব ইউরোপে কাজ করা শত শত পশ্চিমা গোয়েন্দার নাম প্রকাশ করেছিলেন ব্লেক। স্নায়ুযুদ্ধের সময় তার এসব গোপন কার্যক্রম প্রকাশ হয়ে যায়।
তার বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তাকে শতাব্দীর `কুখ্যাত ডাবল এজেন্ট' হিসেবে গণ্য করা হয়। ১৯৬০ সালে ৪২ বছর বয়সে তিনি লন্ডনে ধরা পড়েন। ১৯৬৬ সালে জেল থেকে কয়েকজন বন্দী ও দু’জন কর্মীর সাহায্যে পালিয়ে যুক্তরাজ্য ত্যাগ করেন।
বিজ্ঞাপন
বিবিসির নিরাপত্তা সংবাদদাতা গর্ডন কোরেরা বলেন, স্নায়ুযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের গোপন কর্মকাণ্ড ও এজেন্টদের সাথে প্রতারণা করে ব্রিটিশ গুপ্তচর সংস্থার কাজের গুরুতর ক্ষতি করেছেন এই জর্জ ব্লেক।
কারণ এতে সবার চোখে এটা স্পষ্ট হয়ে যায় যে ব্রিটিশ রাষ্ট্রের একেবারে কেন্দ্রস্থলে এজেন্ট পরিচালনা করতে পেরেছে কেজিবি। তার জেল থেকে পালিয়ে যাওয়াটাও ব্রিটেনকে লজ্জায় ফেলেছিল।
১৯৯১ সালে মস্কোতে রয়টার্সকে দেয়া সাক্ষাতকারে ব্লেক বলেছিলেন যে তিনি কমিউনিজমে বিশ্বাসী।
ব্লেক কমিউনিজমের অধীনে জীবন কাটাবেন বলেই ঠিক করেছিলেন, কিন্তু তার জীবদ্দশাতেই সেই ব্যবস্থার বিলোপ ঘটে, ভেঙে পড়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন।
জর্জ ব্লেক ১৯২২ সালে নেদারল্যান্ডের রটারডামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা একজন স্প্যানিশ ইহুদি, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশ বাহিনীর হয়ে লড়াই করেছিলেন। তিনি পরে ব্রিটিশন নাগরিকত্ব পান। অন্যদিকে ব্লেক নিজে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কাজ করেন ডাচ প্রতিরোধ আন্দোলনের হয়ে।
১৯৪৩ সালে জানুয়ারিতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নেদারল্যান্ড থেকে ব্রিটেনে চলেন আসেন। ব্রিটিশ নৌ বাহিনীতে যোগদানের পর ১৯৪৪ সালে তিনি ব্রিটিশ গোয়েন্দা সংস্থা এম১৬-এর হয়ে কাজ শুরু করেন।
যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর ১৯৪৮ সালে সিউল যাওয়ার আগে ব্লেক ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে রাশিয়া সম্পর্কে পড়াশুনা করেন। সেখানে তিনি কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া, চীন ও সোভিয়েত ইউনিয়ন সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করেন।
১৯৫০ সালে কোরিয়া যুদ্ধের সময় উত্তর কোরিয়ার সেনারা সিউল দখল করলে তাকে আটক করা হয়। কারাবাসের সময় তিনি কমিউনজমে ঝুঁকে পড়েন।
১৯৫৩ সালে মুক্তি পেয়ে ব্রিটেনে ফিরে আসেন ও এম১৬-এর হয়ে জার্মানির বার্লিনে চলে যান। সেখানে তিনি সোভিয়েত ইউনিয়নের গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহের জন্য গেলেও মস্কোর কাছে তিনি ব্রিটিশ ও আমেরিকার গোয়েন্দা তথ্য পাচার করেন।
১৯৯০ সালে বিবিসিকে এক সাক্ষাৎকার দেন জর্জ ব্লেক। তাতে তিনি স্বীকার করেছিলেন যে শীতল যুদ্ধের সময় তিনি অন্ততঃ ৫০০-রও বেশি পশ্চিমা গুপ্তচরের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেছিলেন।
ব্লেক রাশিয়ায় জর্জ ইভনোভিচ নামে পরিচিত। ২০০৭ সালে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন পদকে ভূষিত করেন এবং গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি থেকে পেনশন প্রদান করা হয়।
২০১২ সালে ৯০তম জন্মদিনে ব্লেক বলেছিলেন, এখনকার জীবন আমার জীবনের সবচেয়ে সুখের ও শান্তিপূর্ণ।
বাকী জীবন তিনি রাশিয়াতে কাটিয়ে দেন। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত তাকে একজন 'হিরো' হিসেবেই দেখেছেন।
অতীত কার্যক্রম নিয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চান না। তিনি বলেন, পেছনে ঘটে যাওয়া সবকিছু যৌক্তিক ও স্বাভাবিক। আমি সৌভাগ্যবান ও সুখী মানুষ।
ওএফ