মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা শিবরাজ সিং চৌহান

বিয়ের নামে কাউকে ধর্মান্তকরণ করা হলে ১০ বছরের কারাদণ্ডের বিধান রেখে সম্প্রতি একটি বিল পাস হয়েছে কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন বিজেপি শাসিত ভারতের মধ্যপ্রদেশের বিধানসভায়।

মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহানের নেতৃত্বে শনিবার রাজ্য মন্ত্রিসভার বৈঠকে ‘ধর্ম স্বতন্ত্র (রিলিজিয়াস ফ্রিডম) বিল’ ২০২০ নামের বিলটি উত্থাপন করা হলে কণ্ঠভোটে সেটি পাস হয়।

মধ্যপ্রদেশ রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, চলতি মাসের শেষেই রাজ্য বিধানসভায় বিলটি তোলা হবে। 

ধর্মান্তকরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের ২ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে; জরিমানা হতে পারে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। 

বিধানসভায় বিলটি পাস হলে মধ্যপ্রদেশের রাজ্যপাল আনন্দীবেন প্যাটেলের কার্যালয়ে বিলটি পাঠানো হবে স্বাক্ষরের জন্য। তিনি স্বাক্ষর করার পরই সেটি আইনে পরিণত হবে। 

প্রসঙ্গত, মধ্যপ্রদেশ বিধানসভায় মোট ২৩০ আসনের ১৩০টিই বিজেপি-র দখলে।

বিল পাস হওয়ার পর শিবরাজ সিং চৌহান সাংবাদিকদের বলেন, ‘সম্প্রতি ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে নাবালিকা এবং তফসিলী সম্প্রদায়ের নারীদের বিয়ের পর তাদের ধর্মান্তকরণে বাধ্য করা হয়েছে— এমন বেশ কিছু ঘটনা সম্প্রতি আমাদের গোচরে এসেছে। মধ্যপ্রদেশে আমরা এ ধরনের ঘটনা ঘটতে দেব না’।

যে নারী ধর্মান্তরিত হবেন, যাদের সঙ্গে তার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তারা তো বটেই, অন্যান্য আত্মীয়রাও এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন প্রশাসনের কাছে।

বিলটি আইনে পরিণত হলে, নাবালিকা অথবা নিম্নবর্গের নারীদের জোর করে ধর্মান্তরণের অভিযোগ প্রমাণিত হলে দোষীদের ২ থেকে ১০ বছর পর্যন্ত সাজা হতে পারে; জরিমানা হতে পারে ১ লাখ টাকা পর্যন্ত। 

বিলটি পাস হয়ে যাওয়ার পর রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নরোত্তম মিশ্র সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বলেন, ‘নতুন ধর্ম স্বতন্ত্র বিল-২০২০-র আওতায় নাবালিকা, কোনও নারী অথবা তফসিলী জাতি ও উপজাতির কাউকে জোর করে ধর্মান্তরণে বাধ্য করা হলে ২-১০ বছর সাজা হবে। জরিমানা দিতে হবে সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকা’।

নারী ছাড়া অন্য যে কাউকে জোর করে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১ থেকে ৫ বছরের সাজা এবং কমপক্ষে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা দিতে হবে বলেও জানান নরোত্তম। 

এর আগে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি দলীয় যোগী আদিত্যনাথের সরকার ধর্মান্তকরণ প্রতিরোধী আইন পাস করে।

বিয়ের পর স্বেচ্ছায় যদি কেউ ধর্মান্তরিত হতে আগ্রহী হন, সে ক্ষেত্রে দুমাস আগে নোটিশ দেওয়া বাধ্যতামূলক। অন্যথায় নতুন এই আইনের আওতায় ওই বিয়ে বাতিল এবং অকার্যকর বলে ধরা হবে।

এ ছাড়া যে নারী ধর্মান্তরিত হবেন, যাদের সঙ্গে তার রক্তের সম্পর্ক রয়েছে তারা তো বটেই, অন্যান্য আত্মীয়রাও এ নিয়ে অভিযোগ জানাতে পারবেন প্রশাসনের কাছে।

এর আগে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপি দলীয় যোগী আদিত্যনাথের সরকার ধর্মান্তকরণ প্রতিরোধী আইন পাস করে, ভারতে চলতি ভাষায় যা ‘লাভ জিহাদ’ আইন নামে পরিচিতি পেয়েছে। 

ভিনধর্মে বিয়ের ক্ষেত্রে গোটা দেশে এই আইন কার্যকর করার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে ভারতের দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো।

ভিনধর্মে বিয়ের ক্ষেত্রে গোটা দেশে এই আইন কার্যকর করার পক্ষে দীর্ঘদিন ধরেই আন্দোলন করে আসছে ভারতের দক্ষিণপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো। যোগী আদিত্যনাথ নিজেও সরব ছিলেন এ প্রসঙ্গে।

এদিকে উত্তরপ্রদেশ ও মধ্যপ্রদেশের পথ ধরে হরিয়ানার মনোহরলাল খাট্টার নেতৃত্বাধীন সরকারও কথিত ‘লাভ জিহাদ’ আইন কার্যকর করতে তৎপর হয়ে উঠছে। 

এ সংক্রান্ত নিয়ম নির্ধারণে বিশেষ কমিটিও ইতোমধ্যেই গঠন করেছে হরিয়ানা রাজ্য সরকার।

ভারতের ২৮টি রাজ্য এবং ৮টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে বর্তমানে ১৭টি রাজ্যে এককভাবে এবং জোট সরকারের অংশ হিসেবে ক্ষমতায় রয়েছে বিজেপি।

সূত্র: এনডিটিভি, আনন্দবাজার

এসএমডব্লিউ/এএস