পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান যৌন সহিংসতা এবং ধর্ষণের ঘটনা বৃদ্ধির জন্য অশ্লীলতাকে দায়ী করে গত রোববার বক্তব্য দেওয়ার পর তার একটি পুরোনো ভিডিও ছড়িয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। এতে দেখা যায়, বিকিনি পরা এক বিদেশি তরুণীর সঙ্গে সমুদ্র স্নান সেরে উঠে আসছেন তিনি। এই ভিডিও শেয়ার করে অনেকে লিখেছেন, খান নিজের জীবন উপভোগ করে এসে এখন যৌন-সহিংসতা ঠেকানোর জন্য পর্দাপ্রথার পরামর্শ দিচ্ছেন।

সপ্তাহ শেষে দুই ঘণ্টার জন্য টেলিফোনে দেশের জনগণের নানা ধরনের প্রশ্নের উত্তর দেন পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। গত রোববার দেশটির এক নাগরিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছিলেন, অশ্লীলতার ফসল হলো যৌন সহিংসতা। আর এই অশ্লীলতাকে পশ্চিমা বিশ্ব থেকে আমদানিকৃত এক সংস্কৃতি বলে বর্ণনা করেন তিনি।

পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও নিউজ বলছে, দেশে ক্রমবর্ধমান ধর্ষণ, যৌন সহিংসতা বিশেষ করে শিশুদের বিরুদ্ধে যে ধরনের সহিংসতা বৃদ্ধি পেয়েছে; তা মোকাবিলায় সরকারের পরিকল্পনার ব্যাপারে টেলিফোনে এক ব্যক্তি জানতে চান।

জবাবে ইমরান খান দেশটিতে ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতা বৃদ্ধির জন্য অশ্লীলতাকে দায়ী করেন। একই সঙ্গে এ ধরনের ঘটনা ঠেকাতে ইসলামি পর্দাপ্রথা এবং ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার পরামর্শ দেন তিনি। ইমরান খান বলেন, পর্দাপ্রথা এবং ধর্মীয় অনুশাসন মানুষকে প্রলোভন থেকে দূরে রাখে। আর এটা দমিয়ে রাখার ইচ্ছেশক্তি সবার নেই।

পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী বলেন, তিনি সত্তরের দশকে ক্রিকেট খেলার জন্য যুক্তরাজ্যে গিয়েছিলেন। সেখানে দেখেছেন— যৌনতা, মাদক এবং খোলামেলা সংস্কৃতি পরিবারগুলোর ওপর সরাসরি প্রভাব ফেলছে। তিনি বলেন, এ ধরনের অশ্লীলতার কারণে সেই সমাজে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘটনা বর্তমানে ৭০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।

খান আরও বলেন, ‌‘হলিউডের কাছ থেকে উৎসাহ নিয়ে চলচ্চিত্র শিল্প কাজ শুরু করায় একই ধরনের ঘটনা ঘটছে ভারতেও। দিল্লি এখন ধর্ষণের রাজধানীতে পরিণত হয়েছে।’

ধর্ষণ এবং যৌন সহিংসতা নিয়ে ইমরান খানের এমন মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে দেশটির মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রইটস কমিশন অব পাকিস্তান (এইচআরসিপি)। এক বিবৃতিতে পাক এই মানবাধিকার কমিশন জানায়, একজন রাষ্ট্র নেতার এমন মন্তব্য একেবারে অগ্রহণযোগ্য। 

পাক প্রধানমন্ত্রীর মন্তব্য দেশটির সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহারকারীদেরও উসকে দিয়েছে। অনেকেই ইমরান খানকে খোঁচা মেরে তার লন্ডনের বিলাসী জীবনে নারী সঙ্গীদের নিয়ে কাটানো নানা মুহূর্তের ছবি ও ভিডিও ফেসবুক, টুইটারে শেয়ার করছেন।

ফাহাদ দেশমুখ নামের একজন টুইটারে একটি ভিডিও টুইট করে ক্যাপশনে লিখেছেন, এই মানুষটি এখন পর্দাপ্রথার বক্তৃতা করছেন।

পাকিস্তানের তারকা ক্রিকেটার থেকে রাজনীতির ময়দানে আলোড়ন তুলে ২০১৮ সালে দেশটির প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হন এক সময়ের প্লেবয় খ্যাত ইমরান খান। পশ্চিমা বিশ্বের সাংবাদিক-বিশ্লেষকরা অক্সফোর্ডপড়ুয়া ইমরান খানকে একজন রমণীমোহন প্লেবয় হিসেবে দেখতেন— যিনি ক্রিকেট খেলার পাশাপাশি লন্ডনে নাইট ক্লাব কিংবা পানশালায় নিয়মিত বিচরণ করতেন।

ব্যক্তিগত জীবনেও নানা সময়ে বিভিন্ন ধরনের নারী কেলেঙ্কারিতে জড়িয়েছিলেন পাকিস্তানের এই প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের সাবেক ক্রিকেট তারকা ইমরান খান বিয়েও করেছেন একাধিক।

এরমধ্যে বিচ্ছেদ ঘটেছে দু’টি। সর্বশেষ তৃতীয় বিয়ে করেছিলেন ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারিতে দেশটির পাকপাত্তান এলাকার পীর পরিবারের বুশরা মানেকা নামের চল্লিশোর্ধ্ব এক নারীকে।

ক্রিকেটার থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া ইমরান ব্রিটিশ ধনকুবের পরিবারের মেয়ে জেমাইমা গোল্ডস্মিথকে প্রথম বিয়ে করেন ১৯৯৫ সালে। তবে সেই সংসার খুব বেশি দিন টেকেনি। ২০০৪ সালে বিচ্ছেদ হলে দেশ-বিদেশের গণমাধ্যমে বেরিয়ে আসে পাক প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জেমাইমার সাংসারিক জীবনের নানা টানা-পোড়েনের গল্প। পরে ২০১৪ সালে পাকিস্তানি সাংবাদিক রেহাম খানকে বিয়ে করেন ইমরান খান। এই সংসারও ভেঙে যায় মাত্র এক বছরের মধ্যে।

এসএস