যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ক্যাপিটল ভবনে হামলা লজ্জা ও অসম্মানের হলেও অনাকাঙ্ক্ষিত নয় বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। স্থানীয় সময় বুধবার (৬ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে এ মন্তব্য করেন তিনি।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের উস্কানি আর প্ররোচণাতেই নজিরবিহীন এই হামলার ঘটনা ঘটেছে উল্লেখ করে ওবামা বলেন, আইনিভাবে সম্পন্ন একটি নির্বাচন নিয়ে ট্রাম্প টানা দুই মাস সমর্থকদের ভিত্তিহীন মিথ্যা বলেই চলেছেন। তার প্ররোচণাতেই ক্যাপিটলে হামলা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক এই প্রেসিডেন্ট আরও বলেন,‘ক্যাপিটলে আজকের সহিংসতার ঘটনা আমাদের জাতির জন্য বড় ধরনের অসম্মান ও লজ্জার মুহূর্ত হিসেবে ইতিহাস ঠিক মনে রাখবে, যা উস্কে দিয়েছেন একজন ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট, যিনি একটি বৈধ নির্বাচনের ফল নিয়ে ভিত্তিহীনভাবে মিথ্যা বলে চলছেন।’

আমরা যদি এই হামলার ঘটনাকে আকস্মিক হিসেবে বিবেচনা করি তবে সেটা নিজেদের সঙ্গেই তামাশা করা হবে

বারাক ওবামা

তিনি আরো বলেন, গত দুই মাস ধরে একটি দল এবং তাদের ছত্রছাঁয়ায় থাকা মিডিয়া সত্য তুলে ধরতে চাচ্ছে না। তাদের ফ্যান্টাসি তাদেরকে বাস্তব থেকে অনেক দূরে সরিয়ে নিয়ে গেছে।

এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবনে (পার্লামেন্ট) বুধবার কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে হামলা করে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা। এসময় সংঘর্ষের ঘটনায় ৪ জন নিহত হয়।

ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে আমেরিকার আইনপ্রণেতারা যখন নভেম্বরের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জো বাইডেনের জয় আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করার জন্য অধিবেশনে বসেছিলেন, ঠিক তখনই ট্রাম্পের শত শত সমর্থক কংগ্রেসের ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ে।

বুধবার দিনের শুরুতে হাজার হাজার ট্রাম্প সমর্থক ‘আমেরিকা বাচাও’ নামক একটি গণজমায়েতে অংশ নিতে ওয়াশিংটনে আসে। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এই জনসভায় ভাষণ দিয়ে জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করার বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখেন।

ওয়াশিংটনে জড়ো হওয়া কয়েক হাজার ট্রাম্প সমর্থকদের মধ্যে উগ্রপন্থী বিভিন্ন গ্রুপের সদস্যরাও ছিল। সেই সমাবেশে দেওয়া বক্তব্যে নভেম্বরের নির্বাচনে পরাজয় মেনে না নেওয়ার ঘোষণা দেন ট্রাম্প।

এরপরই সমাবেশের একটু দূরে কয়েকশ' ট্রাম্প সমর্থক ক্যাপিটল ভবনে নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। একপর্যায়ে কংগ্রেসের অধিবেশন চলার মধ্যেই পুলিশের বাধা ভেঙে ক্যাপিটল ভবনে ঢুকে পড়ে ট্রাম্প সমর্থকরা। এ সময় তাদের অধিকাংশের হাতে ছিল ট্রাম্পের পতাকা। তাদের ছত্রভঙ্গ করতে টিয়ার গ্যাস ও পিপার স্প্রে ব্যবহার করে পুলিশ।

ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ জানিয়েছে, ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতায় অন্তত চারজন মারা গেছে। এর আগে পুলিশের গুলিতে এক নারী নিহত হন, পরে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।

ক্যাপিটল ভবনে প্রবেশ করার পর গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে মারা যাওয়া ওই নারীর নাম অ্যাশলি ব্যাবিট। তিনি দেশটির সাবেক সেনা সদস্য ও স্যান দিয়াগোর বাসিন্দা। ওয়াশিংটন সময় বুধবার দুপুর ৩টার দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার স্থানীয় সময় বুধবার রাতে সংবাদ সম্মেলনে জানান, হাউস রুমে অধিবেশন চলাকালে কয়েকজন জোরপূর্বক প্রবেশ করে। ঐ দলটির সদস্য ছিলেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া নারী। ক্যাপিটল ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করার সময় বিক্ষোভকারীদের বাধা দেন সাদা পোশাকের কয়েকজন কর্মকর্তা। একপর্যায়ে কর্মকর্তাদের একজনের গুলিতে ওই নারী মারা যান।

মেয়র জানান, নিহত হওয়া বাকি তিনজনের একজন নারী ও দুই জন পুরুষ। এছাড়া মেট্রো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অন্তত ১৪ জন সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।

সহিংসতার ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এদের মধ্যে ৪৭ জনকে কারফিউ ভাঙার জন্য গ্রেফতার করা হয়েছে। এসময় বিভিন্ন ধরনের অন্তত ৫টি বন্দুক জব্দ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে ওয়াশিংটন ডিসির মেট্রোপলিটান পুলিশ।

পুলিশ বিভাগের প্রধান জানিয়েছেন, আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

টিএম