গণতন্ত্রের এই লাঞ্ছনা নজিরবিহীন : বাইডেন
যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস(পার্লামেন্ট) ভবন ক্যাপিটলে অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলা এবং এতে এক নারীসহ ৪ জন নিহতের ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।
স্থানীয় সময় বুধবারের এই ঘটনাকে ‘গণতন্ত্রের নজিরবিহীন লাঞ্ছনা’ বলে উল্লেখ করে এক ভিডিওবার্তায় তিনি বলেন,‘ ক্যাপিটলে ঢুকে হইচই করা, দরজা-জানালা আসবাবপত্র ভাঙচুর, যুক্তরাষ্ট্রের সিনেট ভবনের অফিস দখল, আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নিরাপত্তা হুমকির মুখে ফেলা – এসব কোনো প্রতিবাদী কর্মকাণ্ড নয় বরং রাষ্ট্রদ্রোহ।’
বিজ্ঞাপন
‘গণতন্ত্রের এই লাঞ্ছনা নজিরবিহীন।’
যুক্তরাষ্ট্রের ডেলাওয়্যার রাজ্যের উইলমিংটন শহর থেকে দেয়া ওই ভিডিবার্তায় ডোনাল্ড ট্রাম্পের উদ্দেশ্যে বাইডেন বলেন, ‘আমি প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে তার শপথ স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলতে চাই, অন্তত দেশের সংবিধান রক্ষার স্বার্থে জাতীয় টেলিভিশন পর্দায় যান, ভাষন দিন এবং আপনার সমর্থকদের থামান।’
বিজ্ঞাপন
নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জয়কে প্রত্যয়ন করতে বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটলে হাউস অব রিপ্রেজেনটেটিভস এবং সিনেটের যৌথ অধিবেশন বসেছিল।
অধিবেশনে ইলেকটোরাল কলেজের দেওয়া ভোটগুলো গণনা এবং তা চূড়ান্তভাবে প্রত্যয়ন করার সময় ট্রাম্প সমর্থকরা নিরাপত্তা ব্যারিকেড ভেঙে ক্যাপিটলের ভেতরে প্রবেশ করে।
ওয়াশিংটন ডিসির পুলিশ জানিয়েছে, ক্যাপিটল ভবনে সহিংসতায় অন্তত চারজন মারা গেছে। এর আগে পুলিশের গুলিতে এক নারী নিহত হন, পরে আরও তিনজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
বিবিসি বলছে, ক্যাপিটল ভবনে প্রবেশ করার পর গুলিবিদ্ধ হয়ে প্রথমে মারা যাওয়া ওই নারীর নাম অ্যাশলি ব্যাবিট। তিনি দেশটির সাবেক সেনা সদস্য ও স্যান দিয়াগোর বাসিন্দা। ওয়াশিংটন সময় বুধবার দুপুর ৩টার দিকে তিনি গুলিবিদ্ধ হন এবং পরবর্তীতে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওয়াশিংটন ডিসির মেয়র মুরিয়েল বাউজার স্থানীয় সময় বুধবার রাতে ক্যপিটল হিলের বিক্ষোভ, সংঘর্ষ ও হতাহত সম্পর্কে একটি সংবাদ সম্মেলন করেন।সেখানে তিনি জানান, হাউস রুমে অধিবেশন চলাকালে কয়েকজন জোরপূর্বক প্রবেশ করে। ঐ দলটির সদস্য ছিলেন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া নারী। ক্যাপিটল ভবনে জোরপূর্বক প্রবেশ করার সময় বিক্ষোভকারীদের বাধা দেন সাদা পোশাকের কয়েকজন কর্মকর্তা। একপর্যায়ে কর্মকর্তাদের একজনের গুলিতে ওই নারী মারা যান।
মেয়র জানান, নিহত হওয়া বাকি তিনজনের একজন নারী ও দুই জন পুরুষ। এছাড়া মেট্রো পুলিশ ডিপার্টমেন্টের অন্তত ১৪ জন সদস্য আহত হয়েছেন বলেও জানান তিনি।
হামলার ঘটনায় তাৎক্ষনিকভাবে মুলতবি করা অধিবেশন পরবর্তিতে শুরু হয় বুধবার সন্ধ্যার পর। যুক্তরাষ্ট্রের ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স অধিবেশনের প্রারম্ভে বলেন,‘ আজকের দিনটি যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রের ইতিহাসে একটি অন্ধকার দিন।’
এদিকে হামলার একদিন আগে স্থানীয় সময় মঙ্গলবার নিজের সমর্থকদের ক্যাপিটল অভিমুখে মিছিল নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানানো ডোনাল্ড ট্রাম্পও তাদের ‘ঘরে ফিরে’ যেতে বলেছেন।
মঙ্গলবার মিছিলের ডাক দিয়ে হোয়াইট হাউস থেকে নিজের সমর্থকদের তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের দেশ অনেক সহ্য করেছে এবং আমরা আর নিতে পারছি না।’
কিন্তু বুধবার ক্যাপিটল ভবনে হামলা এবং বাইডেনের এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে প্রকাশিত হওয়ার পর এক টুইট বার্তায় ট্রাম্প বলেন,‘ক্যাপিটলে আমার যেসব সমর্থকরা রয়েছেন, তাদের সবাইকে আমি শান্ত থাকার আহ্বান জানাচ্ছি। কোনো সংঘর্ষ নয়! মনে রাখবেন, আমরা এমন একটি রাজনৈতিক দল যারা আইনের শাসনের প্রতি পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রাখুন।’
এর আগে সম্পর্কিত এক ভিডিও বার্তায় তাকে বলতে দেখা যায়,‘ আমি আপনাদের যন্ত্রণা বুঝতে পারি। আমি জানি আপনারা আঘাত পেয়েছেন।’
‘আমরা এমন একটি নির্বাচন করেছি, যার ফলাফল আমাদের হাত থেকে ছিনতাই হয়ে গেছে। এটা যে একটি কারচুপির নির্বাচন ছিল তা সবাই জানে, বিশেষ করে বিরোধীপক্ষরা।’
‘কিন্তু আপনাদের এখন শান্ত থাকতে হবে, ঘরে ফিরে যেতে হবে।’
এদিকে ক্যাপিটলে ট্রাম্প সমর্থকদের হামলার তীব্র সমালোচনা করেছেন ট্রাম্পের পূর্বসূরী রিপাবলিকান প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ।
এত বার্তায় তিনি বলেন,‘টেলিভিশনে হামলার যে চিত্র দেখানো হচ্ছে, তা আমাদের মন ভেঙ্গে গেছে, আমরা অসুস্থ বোধ করছি।’
নিজের দল রিপাবলিকান পার্টির সমালোচনা করে তিনি বলেন,‘ আমাদের দল রিপাবলিকান পার্টি ডেমোক্রেটিক রিপাবিলিক থেকে বানানা(কলা) রিপাবলিকে পরিণত হচ্ছে।’
এসএমডব্লিউ