সাত রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে বার্ড ফ্লু, ভারতজুড়ে সতর্কতা
ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এভিয়েন ফ্লু বা বার্ড ফ্লু দেখা দেয়ায় নড়েচড়ে বসেছে দেশটির কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার। রোগের বিস্তার রোধে কেন্দ্র-রাজ্যের সমন্বয়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ ইতোমধ্যে নেয়া হয়েছে।
দেশটির সাতটি রাজ্য বর্তমানে এভিয়েন ফ্লু বার্ড ফ্লু কবলিত বলে রেকর্ড করা হয়েছে। এগুলো হলো উত্তরপ্রদেশ, কেরালা, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, হিমাচল, হরিয়ানা এবং গুজরাট।
বিজ্ঞাপন
গত ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে কেরালায় প্রথম বার্ডফ্লু সংক্রমণ ধরা পড়ে। এরপর অতি অল্পসময়ের মধ্যে সাতটি রাজ্য সহ একাধিক এলাকায় মৃত হাঁস-মুরগি, কাক ও পরিযায়ী পাখিদের মধ্যে বার্ড ফ্লুর ভাইরাস শনাক্তের প্রেক্ষিতে সচেতন হয়ে ওঠে ভারতের কেন্দ্রীয় এবং রাজ্য সরকার। ভারতের কেন্দ্রীয় পশুপালন বিভাগ ইতোমধ্যে দেশে এই রোগের হটস্পট বা উচ্চ সংক্রমণপূর্ণ এলাকাগুলো নির্দিষ্ট করার কাজ শুরু করেছে।
দিল্লির দক্ষিণের জেলা জাসোলার ডিস্ট্রিক্ট পার্ক এলাকায় গত তিনদিনে ২৪ টি মৃত কাক এবং সঞ্জয় লেকে ১০ টি মৃত হাঁস পাওয়া গেছে। এর প্রেক্ষিতে দিল্লির রাজ্য সরকার রাজধানী নয়া দিল্লির গাজিপুরে শহরের সবচেয়ে বড় পোলট্রি বাজার ১০ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণাসহ দিল্লিতে জীবিত হাঁস-মুরগি পরিবহন ও বিক্রি নিষিদ্ধ করেছে। পাশাপাশি সঞ্জয় লেক এলাকায় পর্যটকদের প্রবেশও নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও দিল্লির বাসিন্দাদের জন্য ২৪ ঘন্টার হেল্পলাইন খোলা এবং র্যাপিড রেসপন্স টিম গঠন করা হয়েছে রাজ্য সরকারের উদ্যোগে। এছাড়া রাজ্য সরকারের নির্দেশে পশুপাখি চিকিৎসা (ভেটেরিনারি) বিভাগের কর্মকর্তারা দিল্লির হাঁস-মুরগির বাজার, বন্যপ্রাণী অভয়াশ্রম এবং পরিযায়ী পাখিদের জলাধারগুলো সার্বক্ষনিক নজরদারি করছেন।
এদিকে আশপাশের রাজ্যগুলোতে বার্ড ফ্লু দেখা দেয়ায় ইতোমধ্যে ভারতের পাঞ্জাবকে ‘নিয়ন্ত্রিত এলাকা’ হিসেবে ঘোষণা করেছে পাঞ্জাব রাজ্য সরকার। আগামী ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত পাঞ্জাবে অন্য প্রদেশ থেকে জীবিত হাঁস-মুরগি এবং প্রক্রিয়াজাত না করা হাঁস-মুরগির মাংসের প্রবেশের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে।
মধ্যপ্রদেশের ১৩ টি রাজ্যে বার্ড ফ্লু সংক্রমণ হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছে সে রাজ্যের সরকার; যদিও রাজ্যের ২৭ টি জেলায় কাক ও অন্যান্য বুনো পাখির মরদেহ পাওয়া গেছে বলে প্রতিবেদনে জানিয়েছে একাধিক স্থানীয় পত্রিকা। বার্ডফ্লু ভাইরাাসের উপস্থিতি শনাক্ত হওয়ার প্রেক্ষিতে মধ্যপ্রদেশের আগর মালওয়া জেলার একটি পোলট্রি বাজার ইতোমধ্যে ৭ দিনের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
ছত্তিশগড় রাজ্যের বালোদ জেলায় ৮ এবং ৯ জানুয়ারি বিপুল সংখ্যক হাঁস-মুরগির রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় সচেতন হয়ে উঠেছে সে রাজ্যের সরকার। এই ঘটনার অনুসন্ধানে একটি দল গঠন করা হয়েছে।
বার্ডফ্লুর লক্ষণ দেখা দেয়ায় মহারাষ্ট্রের পারভানি জেলার একটি পোলট্রি খামারের ৯০০ মুরগি নিধন করা হয়েছে। এছাড়া মহারাষ্ট্রের রাজধানী মুম্বাই, থানে, ধাপোলি এভং বীদ জেলায় গত কয়েকদিনে মারা যাওয়া মৃত কাকের নমুনা পরীক্ষার জ্ন্য পাঠানো হয়েছে ন্যাশনাল ইন্সটিটিউট অব হাই সিকিউরিটি অ্যানিমেল ডিজিজ কার্যালয়ে।
পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ ও রোগের বিস্তার ছড়ানো রোধে স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে ইতোমধ্যে ভারতের সবগুলোর রাজ্যের রাজ্যপাল বা মুখ্যসচিব বরাবর চিঠি দিয়েছে ভারতের কেন্দ্রীয় পশুপালন বিভাগ। চিঠিতে জলাধার, হাঁস-মুরগির বাজার, চিড়িয়াখানা, পোলট্রি খামারগুলো নিবিড় পর্যবেক্ষণের রাখার আহ্বানও জানানো হয়েছে।
বার্ড ফ্লু হলো পাখিদের একধরনের জ্বর৷ এইচ৫এন১ নামের একটি ভাইরাস এই জ্বরের জন্য দায়ী। ভাইরাসে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি থেকে এই ভাইরাসটি মানুষের দেহে প্রবেশ করতে পারে৷
এইচ৫তএন১ এর কয়েকটি ধরন ইতোমধ্যে দেখা গেছে। এগুলো হলো এইচ১এন১, এইচ২এন২, এইচ৩এন২ এবং এইচ৭এন৯। সর্বশেষ ধরনটি ধরা পড়ে ২০১৩ সালের মার্চে, চীনের পূর্ব জিয়াংশি প্রদেশে।
সাধারণত যাঁরা পোল্ট্রি খামারে কাজ করেন অথবা বাজারে হাঁস-মুরগি বিক্রি করেন, তাদের বার্ড ফ্লু-তে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে৷
গতবছর ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে কেরালার দুই জেলায় প্রথম হাঁসের মড়ক দেখা দেয়। সে সময় ৮টি মৃত হাঁসের নমুনা পরীক্ষার জন্য মধ্যপ্রদেশের রাজধানী ভোপালে পাঠানো হয়। পরীক্ষায় ৮টির মধ্যে ৫টিতে বার্ড ফ্লু ধরা পড়ে।
সূত্র: এনডিটিভি
এসএমডব্লিউ