পরীক্ষা-নিরীক্ষার বাইরে অর্থ্যাৎ টিকা অনুমোদনের পর যুক্তরাজ্যে প্রথম ব্যক্তি হিসেবে করোনা টিকা নিয়েছিলেন ৯০ বছর বয়সী মানুষ। কানাডায় করোনা টিকা নেওয়া প্রথম ব্যক্তি ৮৯ বছর বয়সী। আর জার্মানিতে সর্বপ্রথম এই টিকা নিয়েছিলেন ১০১ বছর বয়সী ব্যক্তি।

কিন্তু টিকাদান কর্মসূচিতে ঠিক এর উল্টো অর্থ্যাৎ অপ্রচলিত কৌশল বেছে নিয়েছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনা মহামারিতে সবচেয়ে বিপর্যস্ত দেশ ইন্দোনেশিয়া। সেখানে করোনা টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বয়স্ক ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে বয়সে অপেক্ষাকৃত তরুণদের অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। 

দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় আট লাখ ৩৭ হাজার মানুষ। মারা গেছেন ২৪ হাজার ৩৪৩ জন।

চীনা প্রতিষ্ঠান সিনোভ্যাক বায়োটেকের তৈরি কোভিড-১৯ টিকা ‘করোনাভ্যাক’ হাতে পেয়েছে ইন্দোনেশিয়া। দেশটিতে বুধবার (১৩ জানুয়ারি) থেকে প্রথম ধাপের করোনা টিকা প্রদান শুরু হচ্ছে। চলবে আগামী মার্চের শেষ পর্যন্ত।

প্রথম পর্যায়ে করোনার বিরুদ্ধে সম্মুখযোদ্ধা হিসেবে কাজ করা ১৩ লাখ স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেবে দেশটি। এরপর পাবে পুলিশ, সেনাবাহিনীর সদস্য, শিক্ষক, আমলাসহ সরকারি চাকরিতে থাকা আরও এক কোটি ৭০ লাখ ৪০ হাজার মানুষ। তাদের সবাইকে চীনের ‘করোনাভ্যাক’ টিকা দেওয়া হবে বিনামূল্যে।

এরপর বয়স্ক নাগরিকদের দিকে নজর দেবে দেশটির সরকার।

ইন্দোনেশিয়ার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ড. নাদিয়া উইকেকো সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে বলেন,‘টিকা প্রদানের ক্ষেত্রে বয়স্ক নাগরিকদের তুলনায় আমরা ১৮ থেকে ৫৯ বছর বয়সীদের অগ্রাধিকার দিচ্ছি। কারণ চীনের টিকার তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল এখনও সম্পন্ন হয়নি। ট্রায়াল শেষ হলে এই টিকা বয়স্কদের জন্য নিরাপদ কিনা আমরা সেটা বুঝতে পারবো।’

তিনি আরও বলেন,‘চীনা টিকা ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের জন্য ব্যবহার উপযোগী কিনা, সেটা জানতে আমরা বিপিওএম’র (ইন্দোনেশিয়ার ওষুধ ও খাদ্য নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা) সিদ্ধান্তের জন্য অপেক্ষা করছি।’

অবশ্য ইন্দোনেশিয়ার অনেক নাগরিক দেশটির সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সমর্থন করছেন।

দেশটির বালির ৫৬ বছর বয়সী পুটু নামে এক নারী বলেন,‘ইন্দোনেশিয়ার বয়স্ক ব্যক্তিরা বেশিরভাগ সময় বাড়ির ভেতরেই থাকেন। তাই বাইরে কাজ করতে সক্ষম মানুষের তুলনায় বয়স্কদের ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা কম।’

তিনি আরও বলেন,‘তাই, বয়সে অপেক্ষাকৃত ছোটরা করোনার টিকা আগে নিতে পারলে তারা নিরাপদেই বয়স্কদের কাছে যেতে পারবেন।’

কিন্তু বিশেষজ্ঞরা সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছেন।

লন্ডন স্কুল অব হাইজাইন এন্ড ট্রপিক্যাল মেডিসিনের ভ্যাকসিনোজি বিষয়ের অধ্যাপক কিম মুলহোল্যান্ড বলেন,‘চীন ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে বয়স্ক মানুষদের করোনার টিকা কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। সেখানে কম বয়সীদের মতো বয়স্করাও টিকা নিয়ে বেশ ভলোভাবেই সাড়া দিচ্ছেন। তাই বয়স্ক মানুষদের টিকা না দেওয়ার বিষয়ে ইন্দোনেশিয়া যে যুক্তি সামনে আনছে, সেটার আসলে কোনো ভিত্তি নেই।’

সূত্র: আলজাজিরা

টিএম