যুক্তরাষ্ট্রের কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নন বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি। বিগত ১৩ মাসের মধ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয় দফা অভিশংসিত হওয়ার পর বুধবার (১৩ জানুয়ারি) হাউসে দেওয়া বক্তৃতায় তিনি একথা বলেন বলে জানিয়েছে কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা।

ন্যান্সি পেলোসি বলেন, ‘দ্বি-দলীয় এই হাউসে আজ দেখতে পাচ্ছি, কেউ আইনের ঊর্ধ্বে নয়, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টও না।’

পরে ওই অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিশংসন পত্রে স্বাক্ষর করেন তিনি।

এর আগে বুধবার মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম কোনো প্রেসিডেন্ট হিসেবে দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হলেন তিনি। এর মাধ্যমে লজ্জার বিরল এক ইতিহাস গড়লেন দেশটির বিদায়ী এ প্রেসিডেন্ট।

বুধবারের ভোটাভুটিতে ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে পড়ে ২৩২ ভোট, বিপক্ষে ১৯৭ ভোট। তবে ১০ জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাও এসময় ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দেন। এখন তার ভাগ্য ঝুলছে সিনেটের হাতে।

এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সময় দেশটির পার্লামেন্টের এই নিম্নকক্ষ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করে। কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সংক্রান্ত অভিশংসন থেকে মুক্তি পান ট্রাম্প। 

এবারের অভিশংসনের এই প্রক্রিয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ওয়াশিংটনে একটি প্রজন্মের কাছে গভীর দাগ ফেলে যাচ্ছেন। নীতিভ্রষ্ট আচরণের পরও রিপাবলিকান দলীয় আইনপ্রণেতাদের মধ্যে রহস্যজনকভাবে শক্তিশালী সমর্থন রয়েছে ট্রাম্পের। তবে ১০ রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ট্রাম্পের অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।

গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে সহিংসতায় সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরুর একটি প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে তোলেন ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্যরা। মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার এ প্রস্তাব পাস হয়।

ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন; যারা ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় অংশ নেন। শুধু তাই নয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প।

যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে রিচার্ড নিক্সনের পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্টের নিজ দলের সদস্যরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন। সব মিলিয়ে দলে ও দলের বাইরে ব্যাপক চাপে রয়েছেন বাইডেনের কাছে হেরেও হার স্বীকার না করে সহিংসতা উসকে দেওয়ার অভিযোগে অভিযুক্ত ট্রাম্প।

ট্রাম্পের ভাগ্য এখন ঝুলে আছে কংগ্রেসের উচ্চকক্ষ সিনেটের হাতে। ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে প্রথম দফা অভিশংসনের পর ক্ষমতাচ্যুতির হাত থেকে ট্রাম্পকে বাঁচিয়েছিল সিনেট।

নিয়ম অনুযায়ী, প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসনের ভোটাভুটি সম্পন্ন হওয়ার পর তা চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য সিনেটে পাঠাতে হয়। সিনেটে পৌঁছানোর পরপরই সেখানে সেটা (অভিশংসন প্রক্রিয়া) সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার পায়।

এ ধারা অনুসরণ করে ডেমোক্র্যাট নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদ শিগগিরিই সিনেটে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠাবে। পরে সিনেট অধিবেশন বসলে, ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরানো ইস্যুতে ভোটাভুটি হতে বাধ্য, কোনো বিকল্প নেই।

টিএম