অভিশংসনে বিষণ্ন ট্রাম্প ভুগছেন আত্মগ্লানিতে
স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটলে যখন ট্রাম্পের অভিশংসন চলছে, হোয়াইট হাউসে তখন সবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে বিষাদে ডুবে আছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট। তার পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও রয়েছেন থমথমে অবস্থায়।
যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম সিএনএনকে হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা এ বিষয়ে বলেন,‘ তিনি (ট্রাম্প) আত্মগ্লানিতে ভুগছেন। মিত্র ও শুভাকাঙ্ক্ষীরা প্রয়োজনের সময় এগিয়ে আসেনি, উপযুক্ত বুদ্ধি-পরামর্শ দেয়নি- এ চিন্তাই পীড়া দিচ্ছে তাকে।’
বিজ্ঞাপন
অবশ্য ট্রাম্পের ঘনিষ্টজনদের অধিকাংশেরই মত, আজকের এই অবস্থার জন্য ট্রাম্প নিজেই দায়ী। ক্যাপিটল হিলে অধিবেশন পণ্ড করার জন্য নিজের উন্মত্ত সমর্থকদের তিনি প্ররোচিত করেছিলেন- রিপাবলিকান পার্টির অধিকাংশ নেতাকর্মী এই বিশ্বাস পোষণ করায় নিজের দল থেকেও বর্তমানে তেমন কোনো সহানুভূতি পাচ্ছেন না যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট।
গত ৬ জানুয়ারি যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে সহিংসতায় সমর্থকদের উসকানি দেয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের অভিশংসনের প্রক্রিয়া শুরুর একটি প্রস্তাব প্রতিনিধি পরিষদে তোলেন ডেমোক্র্যাট দলীয় সদস্যরা। মার্কিন সংবিধানের ২৫তম সংশোধনী প্রয়োগ করে ট্রাম্পকে অভিশংসিত করার এই প্রস্তাব পাস হয়।
বিজ্ঞাপন
এরপর স্থানীয় সময় বুধবার যুক্তরাষ্ট্র পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসে অভিশংসিত হন ট্রাম্প। তার বিরুদ্ধে আনা অভিশংসনের অভিযোগে বলা হয়, তিনি বারবার নির্বাচনে জয়ের মিথ্যা দাবি করেছেন এবং সমর্থকদের গত ৬ জানুয়ারির সহিংসতায় ইন্ধন দিয়েছেন।
অভিযোগে আরো বলা হয়, নিজেকে বিজয়ী ঘোষণা করতে জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রিপাবলিকান দলীয় প্রতিনিধিকে চাপ প্রয়োগ করেছিলেন ট্রাম্প।
গত কয়েকদিন ধরে পার্লামেন্টে যখন ট্রাম্পকে অভিশংসনের প্রস্তাবের ওপর আলোচনা চলছিল, হোয়াইট হাউসের ভেতরে ও বাইরে ট্রাম্পের পক্ষের লোকজন এবং রিপাবলিকান পার্টির অনেক নেতা প্রকাশ্যে এ প্রস্তাবের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন।
তবে বুধবার হাউস অব রিপ্রেজেন্টেটিভসের দশজন রিপাবলিকান জনপ্রতিনিধি ট্রাম্পকে অভিশংসনের পক্ষে ভোট দিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতির ইতিহাসে রিচার্ড নিক্সনের পর দ্বিতীয়বার প্রেসিডেন্টের নিজ দলের সদস্যরা তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিলেন।
এর আগে ২০১৯ সালের ১৮ ডিসেম্বর কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছিলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেই সময় দেশটির পার্লামেন্টের এই নিম্নকক্ষ প্রেসিডেন্টকে অভিশংসিত করে। কিন্তু উচ্চকক্ষ সিনেটের নিয়ন্ত্রণ রিপাবলিকানদের হাতে থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ সংক্রান্ত সেই অভিশংসন থেকে মুক্তি পেয়েছিলেন তিনি।
ক্যাপিটল হিলে দাঙ্গায় দেশে এবং আন্তর্জাতিক বিশ্বে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট । সামাজিক যোগাযোমাধ্যম টুইটার তার ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে। তার ব্যক্তিগত ইউটিউব চ্যানেলও বন্ধ করে দেয় ইউটিউব কতৃপক্ষ।
হোয়াইট হাউসের ওই কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেন, ‘ট্রাম্প বরাবরই নিজে যা ভালো বোঝেন, তা ই করেন। কারো পরামর্শকে তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন- এমন নজির খুব কম। এখন তো তার টুইটার অ্যাকাউন্টও বন্ধ। তাই বর্তমানে তার মানসিক অবস্থা কেমন- তা একমাত্র ঈশ্বরই সঠিকভাবে বলতে পারবেন।’
এসএমডব্লিউ