বাইডেনের অভিষেক : যুক্তরাষ্ট্রে নজিরবিহীন নিরাপত্তা
ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিদায়ের ঘণ্টা বাজছে। দরজায় কড়া নাড়ছে বাইডেনের অভিষেক। নতুন করে সহিংসতার শঙ্কায় রাজধানী অঞ্চল ওয়াশিংটন ডিসিসহ যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে নেওয়া হয়েছে কঠোর ও নজিরবিহীন নিরাপত্তা।
মোড়ে মোড়ে তৈরি হয়েছে নিরাপত্তাবেষ্টনী। বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে বিভিন্ন সড়ক ও সাবওয়ে স্টেশন। পুলিশ তো থাকছেই, তারপরও ওয়াশিংটন ডিসিতে হাজার হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
আগামী সপ্তাহে জো বাইডেনের অভিষেক উপলক্ষে গণহারে ওয়াশিংটনে আসছে যুক্তরাষ্ট্রের আধা সামরিক বাহিনী দ্য ন্যাশনাল গার্ড সদস্য। অভিষেকের দিন কিংবা আগে পরে যে কোনো সহিংসতা ঠেকানোই যার লক্ষ্য।
গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের পার্লামেন্ট ভবন ক্যাপিটল হিলে হামলায় সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বুধবার মার্কিন কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে অভিশংসিত হয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্প তার সমর্থকদের সহিংসতা এড়ানোর আহ্বান জানালেও যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী অঞ্চল ওয়াশিংটনে ন্যাশনাল গার্ডের বিশ হাজার সেনা মোতায়েন শুরু হয়েছে। ২০১৬ সালে ট্রাম্পের অভিষেকে সংখ্যাটা ছিল ৮ হাজার।
গত সপ্তাহের ওই সহিংসতার পর ক্যাপিটল হিল ২৪ ঘণ্টা পাহারা দিচ্ছে ন্যাশনাল গার্ড। ক্যাপিটল হিলের মেঝেতে ডজন ডজন ‘অফ-ডিউটি’ গার্ডের ঘুমানো এবং গায়ে গা ঘেষে শুয়ে থাকার ছবি এখন ভাইরাল।
কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের ভেতরে যেমন দাঙ্গা ঠেকানোর বর্ম ও গ্যাস মাস্ক পরে আছেন গার্ডরা, তেমনি ক্যাপিটল হিলের বাইরে চারপাশের এলাকায় বন্দুক কাঁধে পাহারা দিচ্ছেন শত শত ন্যাশনাল গার্ডের সদস্য।
গত শুক্রবার থেকেই কংগ্রেসে সেনারা আছে। আগামী ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত জরুরি অবস্থা জারি হওয়া ওয়াশিংটন ডিসির ভারপ্রাপ্ত পুলিশ প্রধান রবার্ট কন্তে আজ বলেছেন, অভিষেকের আগে আরও সেনা মোতায়েন হবে।
নিরাপত্তা প্রস্তুতির মধ্যেই ট্রাম্প বিবৃতি দিয়ে বলেছেন, ‘আরও বিক্ষোভের খবর শোনা যাচ্ছে। আমি আহ্বান জানাচ্ছি কোনো সহিংসতা, আইনভঙ্গ বা ভাঙচুর করা যাবে না। আমি তো এমন কিছুর পক্ষে অবস্থান নেইনি।’
ক্যাপিটল হিলের চারপাশ ঘিরে নতুন করে নিরাপত্তাবেষ্টনী ও অন্যান্য নিরাপত্তা পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ক্যাপিটালের চারপাশ দিয়ে সাত ফুটের বেঁড়া তৈরি হয়েছে। দেওয়া হয়েছে আরও অন্যান্য ধাতব বেষ্টনীও।
ক্যাপিটল হিলের চারপাশের সড়কগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। ন্যাশনাল পার্ক সার্ভিসও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। পথচারীদের এর আশেপাশে দিয়ে না হাঁটার নির্দেশনা জারি করেছেন মেয়র মুরিয়েল বাউসার।
নিউইয়র্কের ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান হাকিম জেফরিস বলেন, ‘ক্যাপিটলে হামলা একটি হিংসাত্মক বিদ্রোহ ছিল; যাতে রক্ত ঝড়েছে আমেরিকানদের। এই কারণেই নজিরবিহীন নিরাপত্তার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে এবার।’
তিনি বলেন, ‘পুলিশ কর্মকর্তাদের পাশবিকভাবে মারা হয়েছে। হামলাকারীরা স্পিকার, ভাইস প্রেসিডেন্টসহ কংগ্রেস সদস্যদের হত্যা করতে চেয়েছে। এটা বিদ্রোহ। এটা রাষ্ট্রদ্রোহ। এটা অরাজকতা। এটা সন্ত্রাস।’
ওয়াশিংটনের সাবওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, অন্যতম প্রধান ট্রানজিট হাব ইউনিয়ন স্টেশনসহ ১৩টি স্টেশন আগামী শুক্রবার থেকে ২১ জানুয়ারি পর্যন্ত বন্ধ রাখবে তারা। পাতাল রেলের তিন ব্যস্ত স্টেশনও বন্ধ রাখা হবে।
হামলাকারীরা ওইদিন কিছু ফ্লাইট চলাচলে বিঘ্ন ঘটানোয় ত্রিশ মার্চ পর্যন্ত ওয়াশিংটনের আকাশে ন্যুনত কোনো বিশৃঙ্ক্ষলার বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতির ঘোষণা দিয়েছে কেন্দ্রীয় বিমান কর্তৃপক্ষের প্রধান স্টিভ ডিকসন।
বাইডেনের শপথের সময় নিরাপত্তার খাতিরে আবাসন জায়ান্ট এয়ারবিএনবি ও তাদের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি হোটেল টুনাইট আগামী সপ্তাহে গ্রেটার ওয়াশিংটনে তাদের সব রিজার্ভেশন বাতিল করে দিয়েছে।
এক কথা ট্রাম্পের বিদায় ও বাইডেনের অভিষেকের সময় যাতে আর কোনো ধরনের সহিংসতা না হয় এর জন্য নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে পুরো ওয়াশিংটন। এখন দেখার পালা প্রকৃতপক্ষে কী ঘটে সেদিন।
এএস