মহাকাশ থেকে লাফিয়ে ভূপৃষ্ঠে অবতরণের ভাইরাল ভিডিওটি কি সত্য?
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি ভিডিও ভাইরাল হয়ে ছড়িয়ে পড়েছে; যেখানে দাবি করা হচ্ছে— অস্ট্রেলিয়ান একজন নভোচারী মহাকাশযান থেকে লাফিয়ে পড়ার মাত্র চার মিনিটের মধ্যে ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করছেন। এই ভিডিওটি ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ব্যবহারকারীরা সত্য ধরে নিয়ে ব্যাপক আলোচনা করছেন। কিন্তু আসলেই কি ভিডিওটিতে যে দাবি করা হয়েছে তা সত্য?
ভিডিওটির ক্যাপশনে বলা হয়েছে, ‘অস্ট্রেলিয়ান এক নভোচারী ১ লাখ ২৮ হাজার ফুটের অবিশ্বাস্য উচ্চতা থেকে লাফ দিয়ে মাত্র ৪ মিনিট ৫ সেকেন্ডে এক হাজার ২৩৬ কিলোমিটার পেরিয়ে ভূপৃষ্ঠে নেমে আসেন। পৃথিবীকে ঘূরন্ত অবস্থায় দেখতে পান তিনি— চমৎকার ভিডিওটি দেখুন। উপভোগ করুন এই অবাধ পতন এবং তার জায়গায় কল্পনা করুন নিজেকে। এটা সুন্দর।’
বিজ্ঞাপন
ভিডিওতে যে দাবি করা হয়েছে অনুসন্ধানে দেখা গেছে তা সঠিক নয়।
ভিডিওতে দেখা যায়, অস্ট্রিয়ার স্কাইডাইভার ফেলিক্স বামগার্টনার স্ট্রাটোস্ফিয়ার থেকে লাফিয়ে পড়ছেন। আর এই লাফিয়ে পড়ার মাধ্যমে স্ট্রাটোস্ফিয়ার থেকে ভূপৃষ্ঠে শব্দের গতির চেয়েও দ্রুতগতিতে নেমে আসার প্রথম রেকর্ড গড়েন তিনি।
বিজ্ঞাপন
ভিডিওটি দেখা যাবে এখানে
ফ্যাক্টচেক
৪ মিনিট ১৬ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটিতে গভীরভাবে নজর রাখলে নিউ মেক্সিকোর রসওয়েলের রেড বুল স্ট্র্যাটোস মিশন কন্ট্রোল রুমকে কয়েকবার দেখা যায়। এতে ওই কন্ট্রোল রুমের সঙ্গে নভোচারী বামগার্টনার যোগাযোগও করছেন।
ভিডিওটির ৩ মিনিট ৩৫ সেকেন্ডে একজনকে বলতে শোনা যায়, ফেলিক্স, সত্যিই আমরা আপনাকে নিয়ে গর্বিত। আপনাকে একেবারে চমৎকার।
ভাইরাল এই ভিডিওতে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির ওয়াটারমার্ক রয়েছে। এই অংশটিকে সূত্র হিসেবে ধরে গুগলে সার্চ করলে দেখা যায়, ২০১২ সালের ১৪ অক্টোবর বিবিসির এক সংবাদ প্রতিবেদনে ওই ভিডিওটি পাওয়া যায়।
বিবিসির প্রতিবেদন বলছে, ১ লাখ ২৮ হাজার ১০০ ফুট ওপর থেকে ভূপৃষ্ঠে লাফিয়ে পড়েছেন অস্ট্রিয়ান নাগরিক ডেয়ারডেভিল ফেলিক্স বামগার্টনার। এর মাধ্যমে প্রথম স্কাইডাইভার হিসেবে তিনি শব্দের চেয়ে দ্রুতগতিতে ভূপৃষ্ঠে অবতরণের রেকর্ড গড়েছেন। ভূপৃষ্ঠে নেমে আসার সময় তার সর্বোচ্চ গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৮৩৩ দশমিক ৯ মাইল। প্রক্রিয়া শুরু থেকে লাফিয়ে ভূপৃষ্ঠে অবতরণ পর্যন্ত তার মোট সময় লেগেছিল ১০ মিনিট।
বামগার্টনারের এই লাফিয়ে পড়ার অভিযানে স্পন্সর করেছিল কোমল পানীয় কোম্পানি রেড বুল। অভিযানের নাম দেয়া হয়েছিল রেড বুল স্ট্র্যাটোস মিশন।
রেড বুলের অফিসিয়াল ইউটিউব চ্যানেলেও বামগার্টনারের লাফিয়ে পড়ার ভিডিও আপলোড করা হয়; যা দেখা যাবে এখানে।
২০১৪ সালের অক্টোবরে দ্য নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গুগলের সাবেক জ্যেষ্ঠ ভাইস-প্রেসিডেন্ট অ্যালান এয়াসট্যাস এক লাখ ৩৫ হাজার ৮৯০ ফুট উচ্চতা থেকে লাফিয়ে ভূপৃষ্ঠে অবতরণে সব মিলিয়ে মোট ১৫ মিনিট সময় নিয়ে বামগার্টনারের রেকর্ড ভেঙেছেন।
আসল ঘটনা কি?
সুতরাং এটি পরিষ্কার যে, ভিডিওতে দেখা যায়- রেড বুল স্ট্র্যাটোসের মিশনের অংশ হিসেবে স্ট্রাটোস্ফিয়ার থেকে একজন স্কাইডাইভার লাফিয়ে রেকর্ড করেছিলেন।
কিন্তু মহাকাশযান থেকে লাফিয়ে একজন নভোচারী ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করেছেন বলে ভিডিওতে যে দাবি করা হয়েছে; তা সত্য নয়।
দাবি
ভিডিওতে দাবি করা হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার একজন নভোচারী ১ লাখ ২৮ হাজার ওপরের মহাকাশযান থেকে লাফিয়ে ভূপৃষ্ঠে অবতরণ করেছেন চার মিনিটে।
সিদ্ধান্ত
আসলে ভিডিওতে যাকে দেখা গেছে তিনি হচ্ছেন অস্ট্রিয়ার স্কাইডাইভার ফেলিক্স বামগার্টনার। স্ট্রাটোস্ফিয়ার থেকে লাফিয়ে ভূপৃষ্ঠ ছুঁয়েছিলেন তিনি। এক লাখ ২৮ হাজার ফুট থেকে লাফিয়ে পড়ার প্রক্রিয় থেকে অবতরণ পর্যন্ত তার সময় লেগেছিল মোট ১০ মিনিট। তিনি মহাকাশের কিনারা থেকে লাফ দেননি।
এসএস