ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধের সিদ্ধান্ত বিপজ্জনক: টুইটার
বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়াকে ‘সঠিক’ অথচ ‘বিপজ্জনক’ সিদ্ধান্ত বলে উল্লেখ করেছে জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটার।
টানা ১৩টি টুইট বার্তায় সংস্থাটির অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যাক ডোরসি এ মন্তব্য করেছেন বলে জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম সিএনএন।
বিজ্ঞাপন
জ্যাক ডোরসি বলেন, ‘অস্বাভাবিক ও অসহনীয়’ পরিস্থিতির কারণে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করতে বাধ্য হয়েছে টুইটার। তবে এ ধরনের কোনো পরিস্থিতি তৈরি না হলেই ভালো হতো বলেও মন্তব্য করেছেন তিনি।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল ভবন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে হামলা ও সহিংসতায় সমর্থকদের উসকানি দেওয়ার অভিযোগে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট গত ৬ জানুয়ারি ১২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ করে দেয় টুইটার। ১২ ঘণ্টা শেষে ৭ জানুয়ারি অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হলেও একদিন পরই ৮ জানুয়ারি সেটা স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয় সংস্থাটি।
বিজ্ঞাপন
ট্রাম্পের টুইটার অ্যাকাউন্টের ফলোয়ার (অনুসারী) সংখ্যা ছিল আট কোটি ৮০ লাখ।
ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয়াকে টুইটারের জন্য ‘ব্যর্থতা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে ডোরসি বলেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ‘মুক্ত আলোচনা’র পরিবেশ ধরে রাখতে পারেননি তারা (টুইটার)।
জ্যাক ডোরসি আরও বলেন, টুইটারের অভ্যন্তরে ও বাইরে ব্যাপক হুমকি সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ হাতে আসার পর তারা ট্রাম্পের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন।
ট্রাম্পের টুইটার বার্তা পেয়ে গত ৬ জানুয়ারি তার হাজার হাজার সমর্থক যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে কংগ্রেস ভবন ক্যাপিটল হিলের সামনে অবস্থান নেয়।
ওইদিন কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেনের নাম চূড়ান্তভাবে অনুমোদিত হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এ সংক্রান্ত অধিবেশন চলাকালে ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে ঢুকে পড়ে এবং ব্যাপক তাণ্ডব চালায় যার জের ধরে একজন পুলিশ কর্মকর্তাসহ পাঁচজন নিহত হন।
পরবর্তীতে ট্রাম্প আবারও টুইটার বার্তার মাধ্যমে তার সমর্থকদের ধন্যবাদ জানান।
এর আগে অ্যাকাউন্ট বন্ধের বিষয়ে টুইটার জানিয়েছিল, ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট থেকে দেওয়া সাম্প্রতিক পোস্টগুলো গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করার পর অ্যাকাউন্টটি স্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। আবারও দাঙ্গায় উসকানি দেওয়ার আশঙ্কায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয় বলে উল্লেখ করে সংস্থাটি।
গত ৬ জানুয়ারি জো বাইডেনের বিজয় অনুমোদন করতে ওয়াশিংটন ডিসির ক্যাপিটল ভবনে মার্কিন সিনেট ও প্রতিনিধি পরিষদের যৌথ অধিবেশন বসে। সেসময় অধিবেশন বানচাল করতে বিদায়ী প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা কংগ্রেসে হামলা চালায় এবং তাতে ঘটনার দিন অন্তত চারজন নিহত হয়। পরে মারা যান আরও এক পুলিশ কর্মকর্তা।
এছাড়া ট্রাম্প সমর্থকরা ক্যাপিটাল ভবনে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটতরাজ চালায়। এ ঘটনাকে সমর্থন করে ট্রাম্প নিজেই টুইটার ও ফেসবুকে পোস্ট দেন। তিনি হামলাকারীদের ‘দেশপ্রেমিক’ বলে অভিহিত করেন।
এর আগে ক্যাপিটল ভবনে কংগ্রেসের যৌথ অধিবেশনে হামলা চালাতে সমর্থকদের প্ররোচণা দেওয়ার অভিযোগে টুইটারের পাশাপাশি জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক ও ইন্সটাগ্রামেও নিষেধাজ্ঞার কবলে পড়েন ট্রাম্প। ফেসবুক-ইন্সটাগ্রামে তার অ্যাকাউন্টের ওপর অনির্দিষ্টকালের নিষেধাজ্ঞা বজায় রয়েছে।
এছাড়া গত সপ্তাহে ট্রাম্পের ৭০ হাজারের বেশি সমর্থকের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেয় টুইটার কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করে দেওয়া এসব অ্যাকাউন্টের বেশিরভাগই চরমপন্থী গোষ্ঠী কিউঅ্যাননের। এসব অ্যাকাউন্ট থেকে মূলত কিউঅ্যাননের পোস্ট শেয়ার করার কাজ করা হয়ে থাকে।
একসঙ্গে ৭০ হাজারের বেশি অ্যাকাউন্ট বন্ধের বিষয়ে টুইটার কর্তৃপক্ষ এক ব্লগ পোস্টে জানায়, ‘ওয়াশিংটন ডিসির ওই সহিংস হামলার দিন কিউঅ্যাননের পোস্ট শেয়ার করায় নতুন করে যেন আরও কোনো বিপদ না হয় তা বিবেচনায় নিয়েই এমন হাজার হাজার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করা হয়েছে।’
টুইটার ওই ব্লগ পোস্টে লিখেছে, ‘এই অ্যাকাউন্টগুলো ক্ষতিকর কিউঅ্যানন সম্পর্কিত বিষয়বস্তু শেয়ারের সাথে জড়িত ছিল এবং প্রাথমিকভাবে আমাদের প্লাটফর্ম ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র তত্ত্ব প্রচারের কাজটি করেছে।’
এদিকে ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দেওয়ার পর থেকেই টুইটারের নিন্দায় মুখর হয় রিপাবলিকান নেতা-সমর্থকেরা। টুইটারের বিরুদ্ধে বাকস্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া অভিযোগ এনে এমন কোম্পানিগুলো নিয়ন্ত্রণের দাবিও উঠে।
ট্রাম্প ছিলেন টুইটারের অন্যতম জনপ্রিয় ব্যবহারকারী। ক্ষুদে বার্তা দেওয়ার জন্য বিশ্বনেতাদের কাছে জনপ্রিয় টুইটারে ট্রাম্পের অনুসারী ছিল প্রায় নয় কোটি। তার বার্তাগুলো রিটুইট হয়েছে শত শত কোটি বার।
টিএম